বাংলাদেশের পুলিশ দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত!- এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনের বিবৃতি

বাংলাদেশের জনগণ সরকারের চেয়ে পুলিশকেই বেশি অর্থ দেয়। নিত্যদিন নানাভাবে পুলিশকে তাদের অর্থ দিতে হয়। রাজনৈতিকভাবে সুরক্ষিত বাংলাদেশের এই পুলিশ সাধারণ জনগণ ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্যাতনের একটি হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।


হংকংভিত্তিক বেসরকারী সংগঠন দ্য এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন বৃহস্পতিবার তাদের অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের পুলিশের কর্মকান্ডের এভাবেই তীব্র সমালোচনা করেছে।
১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত সংগঠনটির বৃহস্পতিবারের অনলাইন পোর্টালের তথ্য যাচাই করে দেখা যায়, সেখানে বাংলাদেশের পুলিশ নিয়ে একটি প্রধান বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়া রয়েছে ভারতের অসমের জাতিগত সহিংসতা ও শ্রীলঙ্কার এক পৌর কাউন্সিলর হত্যার ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য। ‘বাংলাদেশ : সরকারের চেয়ে পুলিশকেই বেশি অর্থ দেয় জনগণ’ শীর্ষক ওই অনলাইন বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জনগণকে নিষ্পেষণের ‘বদনাম’ রয়েছে। দেশটির পুলিশী ব্যবস্থা এখন সাধারণ নাগরিক ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নিপীড়নের কারখানা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রত্যেক সরকারের সময় তারা ভাড়াটে সন্ত্রাসীর মতো কাজ করে। পুলিশ দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে। অপরাধমূলক ঘটনা তদন্তে একের পর এক ব্যর্থতা দেশটিতে ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, পুলিশের বেতন কাঠামো অত্যন্ত কম হওয়ায় তা পুলিশের ঘুষ চাওয়ার রাস্তা আরও খুলে দিয়েছে। রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে তারা সুরক্ষিতও থাকে। কিছু পুলিশ কর্মকর্তার সম্পদের পরিমাণের সঙ্গে বেতনের অসামঞ্জস্যতা প্রমাণ দেয় তারা অবৈধ উপার্জনের সঙ্গে জড়িত এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিদের কারণেই তারা সুরক্ষিত থাকে।
রাষ্ট্রের গ্রাম ও শহরের কাঠামোয় পুলিশের এমন শক্তিশালী উপস্থিতির কারণে সাধারণ লোকজনকে নিত্যদিনই ঘুষ দিতে হয়। নানা কারণেই তাদের ঘুষ দিতে হয় পুলিশকে। কখনও সাধারণ ডায়েরি করতে গিয়ে, কখনও অভিযোগ দায়ের করতে গিয়ে, পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্যাতন আর দুর্ব্যবহার থেকে বাঁচতে, মামলা থেকে নাম প্রত্যাহার করতে বা প্রতিপক্ষের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে, ইচ্ছামতো সাক্ষী হাজির করতেও পুলিশকে ঘুষ দেয় লোকজন। সন্দেহভাজন বা অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে লোকজন পুলিশকে ঘুষ দেয়। আবার অভিযুক্তরা মুক্তি পেতেও পুলিশকে ঘুষ দেয়। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনে তদন্ত করতে পুলিশ ঘুষ নেয়। আবার তদন্ত প্রতিবেদন থেকে নাম বাদ দেয়ার জন্য অভিযুক্তদের কাছ থেকেও পুলিশ ঘুষ নেয়। আদালতে তোলার আগে আলামত সংরক্ষণের জন্যও লোকজন পুলিশকে ঘুষ দেয়। অস্বাভাবিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ হাসপাতালে পাঠানো বাবদও ঘুষ নেয় পুলিশ। ঘুষ ছাড়া কোন কাজ হওয়ার কথা কেউ চিন্তাই করতে পারে না।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, রাস্তায় বাদাম বা চকোলেট বিক্রি করে এমন হকারদের কাছ থেকেও পুলিশ নিয়মিতভাবে উৎকোচ নেয়। ড্রাগ ও অস্ত্র ব্যবসায়ীরা একইভাবে তাদের ব্যবসা রমরমা রাখতে পুলিশকে নিয়মিত ঘুষ দেয়। রাস্তায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে দায়িত্ব পালন করে যে সেই ট্রাফিক পুলিশও ড্রাইভার ও গাড়ির মালিকদের কাছ থেকে ঘুষ নেয়। এভাবেই পুলিশের বেশিরভাগ কর্মকর্তাই বৈধ আয়ের বাইরে সম্পদ অর্জন করে চলেছেন। অনেক কর্মকর্তা ঝামেলা এড়াতে পরিবার-পরিজন বা আত্মীয়-স্বজনের নামে সম্পদ গড়ে তোলেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, দুর্ভাগ্যক্রমে সরকার জনগণের এ দুর্ভোগের দিকে কমই নজর দেয়। এমনকি পুলিশ কর্মকর্তাদের পরিবারও গা করে না যে, তাদের জীবনের আরাম-বিলাসের পেছনে অন্য একজন সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্টের গল্প জড়িয়ে রয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের পুলিশী কাঠামোতে সংস্কার না আনা হলে দেশটিতে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।

No comments

Powered by Blogger.