রমজানে ভারতীয় ভিক্ষুকদের দুবাই মিশন!

রমজানে ‘বিশেষ ব্যবসার’ জন্য দুবাই নগরীতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভারতীয় নাগরিকের উপস্থিতির খবর পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য অনুযায়ী ওই ‘বিশেষ ব্যবসা’ হলো ‘ভিক্ষাবৃত্তি’।

রমজান মাসে সাধারণত দুবাইয়ের ধনকুবেররা বিপুল অংকের টাকা জাকাত দেন। আর এ সুযোগ নিতেই তারা উড়োজাহাজে চড়ে দুবাই গেছেন সেই জাকাতের টাকা ভিক্ষা করতে। তবে এদের মধ্যে কপাল পুড়েছে অনেকেরই। পুলিশের কাছে ধরা খেয়ে তার‍া এখন চৌদ্দ শিকে বন্দি। কারণ দুবাইয়ে ভিক্ষাবৃত্তি একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। 
খোদ ভারতীয় সংবাদমাধ্যমেই সম্প্রতি এই আন্তর্জাতিক ভিক্ষুকদের কার্যক্রমের ওপর একটি চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, দুবাইয়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িত থাকার অভিযোগে সম্প্রতি ১৩১ ভারতীয় নাগরিককে আটক করেছে সেখানকার পুলিশ। এদের মধ্যে ১৬ জন তামিলনাডু রাজ্যের বাসিন্দা বলে জানিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।

এই মৌসুমী ভিক্ষুকদের অনেকেই বোরখা পরে মসজিদ ও মার্কেটের বাইরে দাঁড়িয়ে ভিক্ষা করেন বলে জানা গেছে।

পবিত্র রমজান মাসে আরব দেশগুলোর ধনী ব্যক্তিরা সাধারণত জাকাত দানে উৎসাহী হন। কিন্তু তেল সম্পদের প্রাচুর্যে ধনী উপসাগরীয় দেশগুলোর স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে জাকাত নেওয়ার মতো কেউ নেই। তাই ধনকুবেরদের কাছে হাত পেতে জাকাত গ্রহণের সুযোগটি নেন ভারতসহ অন্যান্য কয়েকটি এশীয় দেশের এক শ্রেণির মানুষ। রমজানে তারাই উড়ে যান দুবাইসহ উপসাগরীয় দেশগুলোতে।

দুবাইয়ের মতো জৌলুসময় নগরীগুলোতে এ মাসে কোনো কাজ না করে শুধু হাত পাতলেই পাওয়া যায় কাঁড়ি কাঁড়ি দিরহাম। ধনকুবেররা ভিক্ষাবৃত্তির আইন জানলেও জাকাত গ্রহণের লোক পেয়ে অনেকটা স্বস্তির হাসি দিয়ে মুক্ত হস্তে দান করেন।

কুটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, রমজান উপলক্ষে প্রতিবছরই বহু এশীয় দুবাইসহ আরব দেশগুলোতে জাকাতের টাকা নিতে উপস্থিত হন। সম্প্রতি এক অভিযানে ১৮ হাজার দিরহাম বা ভারতীয় টাকায় ২ লাখ ৪৫ হাজার রুপিসহ দুবাই পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন এমনই এক পাকিস্তানি ভিক্ষুক।

দুবাই পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, রমজানকে সামনে রেখে ভিক্ষাবৃত্তি আসলে একটি সংঘবদ্ধ অপারেশন। এতে জড়িত কয়েকটি চক্র ব্যবসার প্রয়োজনীয় দিকগুলো দেখভাল করে বলে তথ্য আছে দুবাই পুলিশের কাছে।

সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, নিজের দেশে উপযুক্ত রোজগারের ব্যবস্থা থাকলেও অনেকেই রমজান মাসে দুবাই যান ভিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে জাকাত সংগ্রহ করতে। ভিক্ষার টাকা থেকে দুবাইয়ে থাকা খাওয়া ও বিমান ভাড়া বাদ দিয়েও একটি ভালো অংকের অর্থ নিজের দেশে নিয়ে যেতে পারেন তারা।

দুবাইয়ের একটি মিডিয়া সংস্থায় কর্মরত এক তরুণ চাকরিজীবী স্বীকার জানান, কয়েকদিন আগেই রাস্তায় মাত্র দশ মিনিট হাত পেতে কোনো ঝঞ্ঝাট ছাড়াই ১২শ দিরহাম বা ভারতীয় টাকায় ১৬ হাজার ২শ’ রুপি উপার্জনে সক্ষম হন তিনি।

টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, ভিক্ষাবৃত্তির অভিযোগে গ্রেফতার হওয়াদের সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য নেই তাদের কাছে। তবে এদের বেশিরভাগেরই কাছেই পাওয়া গেছে ভারতীয় পাসপোর্ট। এদের সবাই ৪৫ দিনের ভ্রমণ ভিসায় ঢুকে পড়ে দুবাইয়ে।

কূটনৈতিক সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে পত্রিকাটি জানিয়েছে, আটক ভারতীয়দের বেশিরভাগই তামিল নাডু, বিহার, উত্তর প্রদেশ এবং আসামের। তামিলনাডুর বাসিন্দাদের মধ্যে আবার বেশিরভাগই ভেলোর, র‍ামানাথাপুরাম এবং তিরুনেলভেলি জেলার বলে জানা গেছে।

ভিক্ষাবৃত্তির অভিযোগে গ্রেফতার হওয়াদের সর্বোচ্চ তিন মাসের কারাদণ্ডের বিধান আছে দুবাইয়ে। তবে এ ব্যাপারে উপসাগরীয় এলাকায় কর্মরত এক ভারতীয় কূটনৈতিক বলেন, ধরা পড়ার ঝুঁকি সম্পর্কে জেনে শুনেই এ সব লোক দুবাইয়ে আসে ভিক্ষা করতে। রমজান মাসে ভিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে অল্প সময়েই বেশি উপার্জনের সুযোগ থাকায় এ ঝুঁকিকে থোরাই কেয়ার করেন তারা।

এদিকে চলতি রমজান মাসেও ভিক্ষাবৃত্তি প্রতিরোধে দুবাইয়ের গুরুত্বপূর্ণ মসজিদ ও বিপনীবিতানগুলোর আশপাশে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে পুলিশ। 

ভারতের এ সব আন্তর্জাতিক ভিক্ষুক সাধারণত সংঘবদ্ধ চক্রের যে কোনো দালালের থেকে ৭৫ হাজার ভারতীয় রুপির বিনিময়ে দুবাইয়ের ভিসা সংগ্রহ করে থাকেন।

তবে ভিক্ষাবৃত্তিতে প্রাপ্ত অর্থ ভারতে বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠানো সম্ভব হয় না। সাধারণত ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে কার্যক্রম চালানো ‘হাওয়ালা’ এজেন্টরা দিন রাত ২৪ ঘণ্টার যে কোনো সময়ে এসব অর্থ দুবাই থেকে ভারতে পাঠাতে প্রস্তুত থাকে।

উপসাগরীয় দেশগুলোতে কর্মরত অবৈধ ভারতীয় শ্রমিকরা এ পদ্ধতিতেই দেশে তাদের পরিবারের কাছে টাকা পাঠিয়ে থাকে। বৈধ কাগজ না থাকার কারণে এ শ্রমিকরা দুবাইয়ে কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন না।

রমজান মাসে দুবাইয়ের পাশাপাশি বাহরাইন, ওমান ও কাতারও ভারতীয় আন্তর্জাতিক ভিক্ষুকদের অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য বলে জানা গেছে।

No comments

Powered by Blogger.