পাঠক প্রিয় এক গাল্পিকের নাম মঈনুদ্দিন কাজল

মঈনুদ্দিন কাজল বাঙালীর রুচি ও মেজাজ জানা এক কথাশিল্পীর নাম। সবশ্রেণী ও মেধার কাছেই তিনি সমান প্রিয়। সব বয়সের পাঠকের জন্যেই তিনি লেখেন, ভাবেন। কি ছোটদের উপযোগী শিশু-কিশোর মনস্তত্ত্বের লেখা গল্প উপন্যাস-ছড়া-কবিতা-নাটক, কি বড়দের বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ স্বাধীনতা মুুক্তিযুদ্ধের


পরিণতি, প্রাপ্তি কিংবা স্বাধীনতাবিরোধী-রাজাকার-আলবদর ধর্মান্ধ-যুদ্ধাপরাধীÑ তাদের আস্ফালন-হুঙ্কার মুক্তিযোদ্ধাদের ক্রোধ-অঙ্গীকার-দেশপ্রেম, এবং মানব প্রেমের নানা বৈচিত্র্য আনন্দ-বিরহ, বৈরিতা তাকে সহজেই স্পর্শ করে তার চেতনায় দৃপ্ত হয়Ñ মানুষের চাওয়া-পাওয়া, সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, বৈষম্য তিনি এসব চরিত্রকে ফুটিয়ে তোলেন তার সবল কলমের আঁচড়ে, সার্থক সফল সব চিত্রকলা নির্মিত হয় অতি সহজেই যা মানুষের জীবনের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যায় পাঠক তার নাটকীয় চরিত্র সংলাপে নিজের কথা পরিচিত মুখগুলো দেখতে পান বা চিরচেনা কণ্ঠগুলো শোনেন। স্বতঃস্ফূর্ত এসব লেখা বাংলা সাহিত্য অমরতা পথ খোঁজে আধুনিক কথা শিল্পের ইঙ্গিত বহন করে।
মঈনুদ্দিন কাজল প্রকৃতির রূপ-বর্ণ-বৈচিত্র্য তুলে আনেন গল্পে। তার কালেরকথা মাটি ও মানুষের স্বভাব সৌন্দর্য মূর্ত হয় কথার বুননে। পরিবেশ-প্রতিবেশ হুবহু সাবলীল। তার প্রায় লেখাই দেশপ্রেমে ঋদ্ধ। ‘রূপবতী’ ‘চন্দ্রালোকিত রাত’, ‘চারিদিকে রাজাকার’, ‘আগামী যুগের মেয়েরা’, ‘ঘরের ভেতর সাপ’, ‘বুকের মধ্য খানে’, ‘কৈরবী’, ‘আব্দুল হালিমের সৌদিযাত্রা’ ‘মেধাবী মেয়ে,’ ‘তোমার মাঝে আলো দেখেছি’, ‘ইয়াবা সুন্দরী’, ‘মুক্তিযুদ্ধের গল্প’, ‘চন্দ্রিকা’ ‘বৈশাখী মেয়ে’, ‘মুক্তিযুদ্ধে জুঁই পলাশ,’ ইত্যাদি গল্প ও উপন্যাস ইতোমধ্যে পাঠক প্রিয়তা পেয়েছে। সমাদৃত হয়েছে সুধী সমাজে স্বীকৃতি হিসেবে তিনি পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার পদক ও সম্মাননা।
মুক্তিযুদ্ধের বর্ণনায় স্পষ্টভাবেই পাঠক তার উপস্থিতি পান সহজেই। অন্তর্দৃষ্টি দিয়েই লেখক দেখেন, অনুভব করেন এই ঐতিহাসিক অমর কালকে। সেসব কালজয়ী হৃদয় স্পর্শ ‘নির্বাচিত ছোট গল্পে’র সমগ্র এই গ্রন্থে আমরা পাই তার সেসব গল্প ‘ঐ শোন বিজয়ের গান’ যে গল্পে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত গানের সঙ্গে নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলী ও ইতিহাসের ভেতর সহজেই অনুপ্রবেশ ঘটবে। ‘চারিদিকে রাজাকার’ গল্পের নামে সহজেই পাঠক বুঝতে পারেন এর কাহিনী বুনট। ‘রক্তাক্ত হৃৎপি-’ ‘মিছিলের মুখ’ বধ্যভূমি আমাদের এই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের শোক আর হাহাকারের এক স্মরণযোগ্য বাস্তব কাহিনী। ‘এখনও যুদ্ধ’ অন্তরে-বাহিরে, ভাঙ্গা-গড়া; উত্থান-পতনের রূঢ়শব্দ ঝংকার ফুটে ওঠে যে গল্পে। ‘বন্দুক গ্রেনেড ও ভালোবাসা’ বাঙালীর হাজার বছরের জীবন যুদ্ধ ও প্রেমের এক নিরন্তন বহমান ছবি। ‘সাপ ও মানুষের গল্প’ শুভ আর অশুভের দ্বন্দ্ব চিত্র। ‘রূপবর্তী চারজন’ ‘ছেঁড়া শাড়ি ও নারীদেহ’ ‘নেই’ ‘কবর থেকে ফেরা’, ‘চন্দ্রলোকিত রাত’ ‘বন্যার জলে’ ‘ভয়’ ‘লকেট’ ‘চাষ’, ‘চারদিকে জল’ ‘বৈরী সময়’ হৃদয়ের সুর’, ‘আগামী যুগের মেয়েরা’ ‘তিন মফিজের মৃত্যু’ ‘নষ্ট নারী’ ‘আব্দুল হালিমের সৌদি যাত্রা’ ‘মাতৃত্ব’ ‘ফসলের মাঠ’, ‘অবিশ্বাস’, দাম্পত্য’Ñ প্রায় আটাশটি ছোট গল্প যেখানে বাংলাদেশের শহর-নগর-বন্দর, গ্রামের জীবন্ত ছবি বা স্যালুলয়েডের ফিতের মতো পড়তে পড়তে পাঠক আপ্লুত হবেন উদ্দীপ্ত উচ্চকিত হবেন নির্দ্বিধায়।
কথাশিল্পী মঈনুদ্দিন কাজল বাংলা সাহিত্যে এই শতকের বাঙালী জাতির গৌরবময় অধ্যায় বায়ান্ন-একাত্তর-মুক্তিযুদ্ধ-স্বাধীনতা-গণযুদ্ধের স্বপ্ন-সম্ভাবনা আর ঐতিহ্যের কথামালা গল্পে কি উপন্যাসে তুলে আনেন যা আগামী পৃথিবীর পাঠক মানসে উদিত হয়, মানুষ দেশপ্রেম মানবতাবোধে শুদ্ধ হয় প্রকৃত বাঙালী জীবনান্বেষণে শেকড়ের সন্ধান পান। লোক জীবনের এই স্বপ্নচারী লেখক আমাদের জীবনের নানা দ্বন্দ্ব-সংঘাতের অবসান ও সুপথ চিহ্নিত করেন তার অমর রচনাবলীতে, আমরা পাঠক সমাজ তাঁকে অভিনন্দন জানাই সাধুবাদ জানাই নিবেদিত এই উপন্যাসিক এগিয়ে যান বাংলা সাহিত্য ভা-ারকে তার কালোত্তীর্ণ লেখায় গল্পে উপন্যাসে কবিতায় পূর্ণ পরিপূর্ণ করুন। পাঠক তার লেখায় সংবেদশীল হোক আলোচিত আলোরিত হোক উদ্দীপনা পাক জীবনযাপন-সত্য-সুন্দর-সাহসী-মাটি-মানুষ-প্রকৃতিপ্রেমী হোক-শিক্ষায়-দীক্ষায় সমৃদ্ধ হোক। তার লেখা আমাদের নিত্য পাঠনীয় হোক, জয় হোক নন্দিত লেখক কবি-কথাশিল্পী মঈনুদ্দিন কাজলের।

আসলাম সানী

No comments

Powered by Blogger.