গাছ চুরি-অপরাধীদের কঠোর শাস্তি কাম্য

জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বনায়ন বা বৃক্ষ রক্ষা এখন একটি মানবিক দায়িত্ব হিসেবে গণ্য। তাই যে কেউ যেকোনো জায়গার গাছ ঢালাওভাবে কেটে ফেললে তা অপরাধ হিসেবেই দেখা হয়। গাছ চুরি কিংবা শত্রুতাবশত বাগান ধ্বংস করার মতো অপরাধের তো তুলনাই হয় না।


এখন গাছ শুধু ফল ও কাঠের জন্য নয়; গাছ লাগানো, যত্ন ও পৃথিবীকে সবুজ করে তোলার অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য পৃথিবীকে রক্ষা করা। পৃথিবীর যত্ন না নিতে পাারলে মানুষ বাঁচবে না। তাই দুনিয়াজুড়ে বনসম্পদ রক্ষা ও বনাঞ্চলের পরিমাণ বৃদ্ধি করা মানুষের নৈতিক দায়িত্ব। আর জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এযাবৎ সৃষ্ট সমস্যা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ বাংলাদেশ। এই আত্মোপলব্ধি থেকে সরকারি ও বেসরকারিভাবে নানা রকম প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে বনায়ন বা বনাঞ্চল বৃদ্ধি ও গাছ লাগানো কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। তাই কেউ বা কোনো মহল যদি এর বিরুদ্ধে দাঁড়ায়, অনাবশ্যক গাছগাছালি কাটে ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়- এমন কাজ করে; তবে তা প্রতিরোধ করতে হবে স্থানীয়ভাবে, সামাজিক শক্তিতে ও প্রয়োজনে আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে। সম্প্রতি বগুড়ার ধুনটের বাটিকাবাড়ি গ্রামে দুর্বৃত্তরা ৬৩টি গাছ কেটে নিয়ে গেছে। বন বিভাগের সহায়তায় ওই গ্রামের কিছু গরিব কৃষক পরিবার তাঁদের জমির পাশের রাস্তায় গাছ লাগায়। ২০০৩ সালের নভেম্বরে তারা প্রায় এক হাজার গাছ লাগায়।
চুক্তিপত্রের শর্ত মোতাবেক গাছ কাটার পর বন বিভাগ ১০ শতাংশ, রাস্তার দুই পাশের ভূমি মালিক ২০ শতাংশ, উপকারভোগী সংস্থা ৫৫ শতাংশ, ট্রি ফার্মিং ফান্ড ১০ শতাংশ এবং ইউনিয়ন পরিষদ গাছের লভ্যাংশের ৫ শতাংশ পাবে। কিন্তু গাছগুলো কাটার সময় হওয়ার আগেই কাউকে কিছু না জানিয়ে এক প্রভাবশালী ইউপি সদস্যের সহায়তায় স্থানীয় যুব উন্নয়ন সমবায় সমিতির সদস্যরা সেগুলো কেটে নিয়ে গেছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। একটি চুক্তিপত্র মোতাবেক সরকারি প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় সবার সম্মিলিত অংশীদারিত্বে গাছ লাগানো হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে পেশিশক্তির জোরে চুক্তি ভঙ্গ করে কাউকে কিছু না জানিয়ে গাছ কেটে নেওয়া অবশ্যই অপরাধ। প্রথমত, কাটার সময় হওয়ার আগে কেটে ফেলা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, এর অন্য মালিকদের বঞ্চিত করা হয়েছে। তাঁদের সম্পদ জোর করে নেওয়া ডাকাতির পর্যায়ে পড়ে। স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে বন বিভাগ এ অন্যায়ের জোর প্রতিবাদ করবে, তা আমরা চাই। কারণ এসব অপকর্মের প্রতিবাদ ও দোষীদের শাস্তি না হলে এ-জাতীয় অপরাধ ও পেশিশক্তির দৌরাত্ম্য বেড়েই চলবে। সামাজিক উদ্যোগে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিও বাধাগ্রস্ত হবে।
এ ছাড়া বিভিন্ন সময় পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে আমরা দেখতে পাই, শত্রুতাবশত দুষ্কৃতকারীরা শত শত বা হাজার হাজার চারা গাছ কেটে ফেলে বা নষ্ট করে দেয়। এর চেয়ে জঘন্যতম অপরাধ আর হতে পারে না। কিন্তু আজ পর্যন্ত এসব অপরাধে কোনো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের ঘটনা ঘটেছে বলে আমাদের জানা নেই। আমাদের মনে রাখতে হবে, গাছের মূল্য কেবল তার বিক্রয়মূল্যে সীমিত নয়। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায়, মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীর জীবন ধারণেও গাছের অবদান অপরিসীম। তাই গাছচোর, দুষ্কৃতকারীদের কঠোর এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

No comments

Powered by Blogger.