ঘুরে আসুন নীলগিরি by তারিকুল ইসলাম চয়ন

কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। মনে বিষণœতার সৃষ্টি হয়েছে পারিপার্শ্বিক নানা কারণে। দূরে কোথাও থেকে ঘুরে আসুন, যেখানে আপনি মিশে যেতে পারবেন প্রকৃতির মাঝে। প্রকৃতির কাছে বলতে পারবেন আপনার হৃদয়ের কথা।


অথবা নতুন বিয়ে করেছেন, মধুচন্দ্রিমা করতে চান প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এমন কোন জায়গায় যেখানে আপনারা নিজেদের নিয়ে যেতে পারবেন আরও কাছাকাছি। তাহলে চলে যান নীলগিরি পাহাড়ে। বাংলাদেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে বান্দরবানে অবস্থিত নীলগিরি অন্যতম। এই যেন এক স্বপ্নরাজ্য। সমুদ্র সমতল হতে বাইশ শ’ ফুট উপরে আকাশের কোল ঘেঁষে নীলগিরি যেন প্রাকৃতিক সৌর্ন্দযের স্বপ্নরাজ্য। এখানে আকাশ পাহাড়ের সাথে মিতালী করে। মেঘবালিকা চুমু দিয়ে যায় পাহাড়ের চূড়ায়। হাত বাড়ালেই ছোয়া যায় মেঘের পালক। মেঘের দল এখানে খেলা করে আপন মনে। সে এক রোমাঞ্চকর অনুভূতি। মনে হবে আপনি উড়ে বেড়াচ্ছেন আকাশের বুকে মেঘের সাথে। আকাশ বাতাস সবুজ আর মেঘের দল লুটোপুটি খায় পদতলে। বান্দরবন হতে মাত্র ৫২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই স্বর্গদ্যান। পাহাড়ের গা বেয়ে উপরে ওঠা যেমন রোমাঞ্চকর, পাহাড়ে চূড়া যেন আরও বেশি। এখানে যাবার জন্য একমাত্র বাহন হলো চান্দেরগাড়ী। ভাড়া ২০০০-২৫০০ টাকা। কিন্তু অদ্ভুত সে যাত্রা। আলীকদম হতে থানচীগামী রাস্তা ধরে আপনি পৌঁছে যেতে পারেন নীলগিরি। বান্দরবনকে বলা হয় প্রকৃতির কন্যা। এখানে এলে সত্যিই এর মর্মার্থ অনুধাবন করা যায়। পাহাড়ের চূড়ায় উঠলেই দেখবেন একটি চমৎকার সাজানো গোছানো রিসোর্ট অপেক্ষা করছে আপনার জন্য। নীলগিরি হিল রিসোর্ট। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত এই রিসোর্টটি আপনাকে মুগ্ধ করবেই। এটি এতই অপূর্ব যে নীলগিরির সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ।
নীলগিরি যেতে চাইলে প্রথমে আপনাকে বান্দরবন যেতে হবে। ঢাকা এবং চট্টগ্রাম হতে সরাসরি সাধারণ মানের ও বিলাসবহুল বাস পাওয়া যায়। ঢাকা থেকে আট থেকে নয় ঘণ্টার যাত্রা। আর একটি উপায় আছে। বিমান পথ। আপনি চাইলে বিমানে করে ঢাকা হতে চট্টগ্রাম পৌঁছতে পারেন। সেখান হতে বাসে বান্দরবান। অথবা ট্রেনে করেও আপনি ঢাকা হতে চট্টগ্রাম যেতে পারেন। বেশ কয়েকটি ট্রেন ঢাকা হতে চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। নীলগিরি যাবার জন্য বান্দরবান হতে আপনাকে একটি বিশেষ বাহন ভাড়া করতে হবে। সেটি হলো চান্দের গাড়ি। এটি স্থানীয় নাম। আসলে এটি এক ধরনের ফোর হুইলার গাড়ি। তবে ল্যান্ড রোভার অথবা প্রাইভেক গাড়ি অত্যধিক নিরাপদ। কিন্তু একটা কথা সত্য যে প্রকৃত এডভেঞ্চারের জন্য চান্দের গাড়ির কোনো বিকল্প নেই। এই গাড়িগুলো পাহাড়ে চূড়ার জন্য বিশেষ উপযোগী এবং এর চালকগণও পাহাড়ি আঁকাবাঁকা ও ঢালু পথে চলার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। এই গাড়িগুলো ২০০০-২৫০০ টাকা ভাড়া নিবে এবং আলীকদম-থানচী রাস্তা ধরে আপনাকে পৌঁছে দেবে পাহাড়ের চূড়ায় নীলগিরির পাদদেশে যেখানে মেঘ আর পাহাড় খেলা করে প্রকৃতির আপন খেয়ালে।
নীলগিরি পর্বতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত একটি রিসোর্ট রয়েছে। নীলগিরি হিল রিসোর্ট। চমৎকার, ছিমছাম, গোছানো এক কথায় দৃষ্টিনন্দন। আপনি চাইলে এখানে থাকতে পারেন। তবে তার আগে এখানে যাবার পূর্বে সেনাবাহিনীর কাছ থেকে থাকার অনুমতি পত্র সংগ্রহ করতে হবে। নীলগিরি রিসোর্টে থাকতে না চাইলে আপনি বান্দরবনের যে কোন হোটেলে থাকতে পারেন। বান্দরবনে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন এর মোটেল রয়েছে ছাড়াও রয়েছে বেসরকারী আরো অনেক হোটেল ও মোটেল। এখানে থেকেও আপনি ঘুরে আসতে পারেন নীলগিরি।

No comments

Powered by Blogger.