অলিম্পিক খেলার গল্প by নাদিরা মজুমদার

২০১২ সাল অলিম্পিক খেলার বছর। ইতিহাসের হিসাব মতে, যিশুখ্রিস্টের জন্মের অনেক অনেক শতাব্দীকাল আগে থেকেই খেলাটি চলে আসছিল। পৃথিবীর মানুষের সভ্যতার সঙ্গে এই খেলার ইতিহাসও ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে। প্রাচীন গ্রীসের অলিম্পিয়া নামক শহরে দেবরাজ জিয়ুসের নামে একটি উপাসনালয় ছিল; বলা চলে যে জিয়ুসের প্রধান


আস্তানাই ছিল অলিম্পিয়াতে। গ্রীক সভ্যতার তখন ক্ল্যাসিক্যাল যুগ চলছে। দেবরাজ জিয়ুসের প্রতি সম্ভ্রম ও সম্মান প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে অলিম্পিয়াতে অলিম্পিক খেলার আয়োজন করা হয়। পৃথিবীর প্রথম এই খেলা অনুষ্ঠিত হয় খ্রিস্টপূর্ব ৭৭৬ অব্দে। এর পর প্রতি চার বছর অন্তর, ৩৯৪ সাল পর্যন্ত অলিম্পিক খেলাটি অনুষ্ঠিতও হতে থাকে। যিশুখ্রিস্ট হয়ত স্বচক্ষে অলিম্পিয়ার খেলাটি দেখেননি, তবে তাঁর জন্ম ও ৩৩ বছর বয়সে ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার পরবর্তী বেশ কিছুকাল, প্রায় ৩৬১ বছর পর্যন্ত খেলাটি তার ঐতিহ্য বজায় রাখতে সক্ষম হয়। ইত্যবসরে গ্রীসও আর আগের সেই গ্রীস নেই; হোলি রোমক সাম্রাজ্যের অধীনে চলেছে সে। মৃত্যুর বছরখানেক আগে, ৩৯৪ সালে, রোমক সম্রাট থিয়োডোসিয়ুস দি গ্রেট অলিম্পিক খেলাকে পৌত্তলিক ধর্মাচরণের স্মৃতিবাহী ও ইঙ্গিতবহ বলে ঘোষণা করেন এবং নিষিদ্ধ করে দেন।
এই নিষিদ্ধটি অতঃপর কয়েক শ’ বছর ধরে বহালও থাকে। অবশেষে ১৮৯৪ সালে ফরাসী ব্যারন পিয়েরে ডি কুবার্তে প্রাচীন অলিম্পিক খেলার নৈতিক আত্মাকে প্রাণ দেন, শুরু“ হয় আধুনিক অলিম্পিক খেলার নতুন এক যুগের। অলিম্পিক খেলাকে গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীনÑদুই দলে ভাগ করা হয়; ১৯৯২ সাল পর্যন্ত গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন খেলা একই বছরে হতো। পরবর্তীকালে, গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক হয়ে যাওয়ার দুই বছর বাদে শীতকালীন অলিম্পিক অনুষ্ঠানের বিধি চালু হয়। ফলে, দুই বছর অন্তর অন্তর অলিম্পিক খেলা জমকালো, সাড়ম্বরপূর্র্ণ মেজাজে পৃথিবীকে মাতিয়ে তোলে। সম্প্রতি লন্ডন অলিম্পিক খেলার উদ্বোধন উৎসবে আমরা তা দেখেছি। এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে, এমনকি হার মেজেস্টি ও তাঁর অতি নির্ভরশীল গোপন এজেন্ট জিরো জিরো সেভেন ওরফে জেমস বন্ড যেমন বাদ যায়নি, চিরায়ত ইংলিশ হাস্যরসের প্রতীক মিস্টার বীনও উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধনের পর মিডিয়া সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছে যে, জাঁকজমকের পাল্লা বেজিং অলিম্পিকের সমানে সমানেই ছিল; সমাপ্তি অনুষ্ঠানও তাই হবে, বলা চলে। কারণ, উদ্বোধনী ও সমাপ্তি অনুষ্ঠান অলিম্পিকের অপরিহার্য আচারানুষ্ঠানের মধ্যে পড়ে।
প্রথম আধুনিক গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক খেলাটি ঐতিহাসিক কারণেই অনুষ্ঠিত হয় ১৮৯৮ সালে, গ্রীসের রাজধানী এথেন্সে। যদি ২০০০ সালকে বিগত শতাব্দীর সর্বশেষ বছর ধরা হয়, তবে বলা যায় যে, একইভাবে এই নতুন মিলেনিয়ামের প্রথম খেলাটিও হয় গ্রীসের এথেন্সে। কারণ, নতুন মিলেনিয়ামের শুরু ২০০০ সাল থেকে নাকি ২০০১ সাল থেকে, তার তার্কিক সমাধান কোনদিন হবে বলে মনে হয় না। তবে বলা যায় যে, এই মিলেনিয়ামের এথেন্স অলিম্পিক, গ্রীসের আর্থিক বিপর্যয় ও মন্দায় নাস্তানাবুদ হওয়ার পথকে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করে। বিশ্ব অলিম্পিকের বা অলিমপিজমের মূলমন্ত্রে বলা হচ্ছে: খেলাধুলার মাধ্যমে বৈরিতামুক্ত মানুষে উপনীত হওয়া; প্রধান লক্ষ্য হলো শান্তিপূর্ণ সহবাসের উপযোগী সমাজ গড়ে তোলা ও মানুষের আত্মমর্যাদাবোধকে সংরক্ষণ করা। এই প্রসঙ্গে ফিরে আসছি পরে।
২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিকের মাধ্যমে যুক্তরাজ্য তৃতীয় দফায় অলিম্পিকের আতিথ্যকর্তার ভূমিকায় অবতীর্র্ণ হয়। এক শ’ চার বছর আগে, ১৯০৮ সালে লন্ডন অনেকটা বাধ্য হয়ে আতিথ্যকর্তা হয়। আদতে ১৯০৮ সালের অলিম্পিক খেলা হওয়ার কথা ছিল ইতালির মিলানো নামক শহরে। কিন্তু ১৯০৬ সালে আগ্নেয়গিরি ভিসুভিয়াস মহাগর্জনে জেগে ওঠে আবার; যেনবা রাগে ফেটে পড়ে আর আগ্নেয় গ্যাস, ছাই ও আগ্নেয়শিলাসমৃদ্ধ পাইরোক্ল্যাস্টিক প্রবাহে ন্যাপলস শহরটিকে ধ্বংস করে দেয়। ধ্বংসযজ্ঞে অবশ্য ভিসুভিয়াসের সুনাম অনেক পুরনো; ৭৯ সালে ভিসুভিয়াসের উদগীরিত ছাই ও শিলার তলায় পম্পেই ও হারকুলেনিয়ুম নামে দুটো শহর আঠারো শ’ শতাব্দী পর্যন্ত চাপা পড়েছিল। অলিম্পিক বাবদ ইতালির যে ফান্ড ছিল, ভিসুভিয়াসের ধ্বংসযজ্ঞের ফলে, ন্যাপলসের পুনর্নির্মাণে সেটি খরচা করা হয়, এবং যুক্তরাজ্যকে ১৯০৮ সালের অলিম্পিকটি ‘ম্যানেজ’ করে নেয়ার জন্য বিশেষ অনুরোধ করে। ফলে, অতি অল্প সময়ের মধ্যে লন্ডনে হোয়াইট সিটি স্টেডিয়াম তৈরি হয়ে যায়; সময়মতো খেলা অনুষ্ঠিত হয়; এবং অলিম্পিক ঐতিহ্যের অবিচ্ছিন্নতা অব্যাহত থাকে। ১৯০৮ সালের অলিম্পিক, এক অর্থে একটি ব্যতিক্রমের সংযোজন ঘটায়। অবশ্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছিল কারণ। তবে আধুনিক অলিম্পিকের ইতিহাস ঘাঁটলে আমরা অনেক ধরনের ব্যতিক্রম, বিতর্ক, গুজব, অপবাদ, রাজনীতি ইত্যাদির ছড়াছড়ি দেখব।
প্রথম লন্ডন অলিম্পিকের দুই-একটি মজাদার কাহিনী বলা যাক। আমাদের মনে রাখতে হবে যে সময়টি ১৯০৮ সাল, ব্রিটিশরাজের সূর্যা¯ত হয় না তখন। ব্রিটিশ রাজ্যাধিকার সপ্তম এডোয়ার্ড উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্টেডিয়ামের রয়েল বক্সে বসে আছেন তিনি; অংশগ্রহণকারীদেশগুলোর জাতীয় পতাকাধারীরা মহারাজার সামনে আসামাত্রই স্যালুটের বিকল্প হিসেবে জাতীয় পতাকা নামিয়ে দিয়ে চলে যাচ্ছে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের পতাকাধারী রালফ রোজ বেঁকে বসেন। কোন জাগতিক মহাধিরাজের সামনে পতাকা নোয়াতে অস্বীকার করেন তিনি। পরে অবশ্য রাজকীয় পরিবারের সম্মিলিত শুভেচ্ছা বিনিময় পর্বে রালফ রোজ নিজের জাতীয় পতাকা নোয়াতে বাধ্য হন। হবেনই। মানমর্যাদা ও ক্ষমতায় ব্রিটিশরাজের অবস্থান তখন অন্যরকম। তবে এই অলিম্পিকেই যখন ম্যারাথন দৌড়ের মোট দূরত্ব নির্ধারণ করা হয়, তাতে এই পতাকা উপাখ্যান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ম্যারাথনের আদি দূরত্ব ছিল ২৫ মাইল, ঠিক হয় যে পরিমাণটি বাড়িয়ে ২৬ মাইল করা হবে। দৌড়ের শেষবিন্দু যদি ঠিক ঠিক রাজার সামনে হতে হয়, এবং রাজা ও রাজতন্ত্রের গুরুত্ব পুনরুদ্ধার করতে তা হতেই হবে, তবে ২৬ মাইলের হিসেব রাখতে হলে ম্যারাথনের শুরু হবে উইন্ডসর ক্যাসলে, শেষ হবে ঠিক রাজার সামনে এসে। কিন্তু ইত্যবসরে রানী মেরি আব্দার করলেন যে, রয়েল নার্সারির জানালার নিচ থেকে শুরু“ হোক ম্যারাথন। রানীর আব্দার তো অগ্রাহ্য করা যায় না। ম্যারাথনের শুরু হয় জানালার নিচ থেকে, শেষ হয় রাজার ঠিক সামনে এসে। তাতে রাজা, রানী, রাজতন্ত্র সবই সংরক্ষিত হয়, দূরত্বটি ছাড়াÑবেড়ে হয় ২৬ মাইল ৩৮৫ গজ বা ৪২.১৯৫ কিলোমিটার। সেই থেকে ম্যারাথনের রানাররা ৩৮৫ গজ বেশি দৌড়ুচ্ছেন; এবং অবশেষে ১৯২৪ সালের প্যারিস অলিম্পিকে সরকারীভাবে স্ট্যান্ডার্ড দৈর্ঘ্য বলে ঘোষণা দেয়া হয়।
দ্বিতীয় লন্ডন অলিম্পিকটি অনুষ্ঠিত হয় ১৯৪৮ সালে। ১৯৩৬ সালের বার্লিন অলিম্পিকের পরে, দীর্ঘ বারো বছর বাদে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধোত্তরকালীন প্রথম অলিম্পিক ছিল। ১৯৪৮ সালের লন্ডন অলিম্পিকের সূচনা করেন ব্রিটিশরাজ সম্রাট ষষ্ঠ জর্জ; তাঁর সঙ্গে ছিলেন রানী এলিজাবেথ, বর্তমান রানীর মা, এবং সম্রাট পঞ্চম জর্জের স্ত্রী রানী মেরি ও রাজকীয় পরিবারের অন্যান্য সদস্য। এই কিস্তিতে সম্রাটের সম্মানে জাতীয় পতাকা নোয়ানোর কোন কাহিনী শোনা যায়নি। সব অলিম্পিকেই বিভিন্ন ইভেন্টকে কেন্দ্র করে চমকপ্রদ রেকর্ড স্থাপন কি ভাঙ্গা ইত্যাদি ঘটনা ঘটে থাকে। ১৯৪৮ সালও তার ব্যতিক্রম হয় না। যেমন, দুই সন্তানের জননী ডাচ ¯িপ্রন্টার ফেনি ব্ল্যাঙ্কারসÑকোন ত্রিশ বছর বয়সে এ্যাথলেটিকসে চার-চারটি স্বর্ণ মেডাল পেয়ে প্রথম অলিম্পিক রেকর্ড স্থাপন করেন; পরিচিত হন ‘ফ্লাইং হাউজওয়াইফ’ নামে। এই অলৌকিক প্রতিভাধর মহিলা, ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপেও, ক্যারিয়ারের শুরুতে পান দুটো ব্রোঞ্জ ও একটি রূপা; এরপর ১৯৫০ সাল পর্যন্ত, বাকি সব ক’টিতে স্বর্র্ণপদক ছাড়া অন্য ধাতুু নেননি; সর্বসাকল্যে পাঁচ-পাঁচটি। আবার মাত্র সতেরো বছর বয়সে বব ম্যাথিয়াস ডিক্যাথলনে স্বর্ণপদক পেয়ে নতুন অলিম্পিক রেকর্ড স্থাপন করেছিলেন।
ইতোপূর্বে, ১৯০০ সালে ও ১৯২৪ সালে অলিম্পিকের আয়োজন করে প্যারিস প্রথম শহরে পরিণত হয়েছিল, এবারে লন্ডনও এই তালিকার অংশীদার হয়। ২০১২ সালে, সংখ্যার দিক দিয়ে লন্ডন প্যারিসকে ফেলে প্রথম সারিতে চলে এসেছে। তাই পরবর্তী নিকটতম অলিম্পিক আয়োজক হতে প্যারিস যদি আদাজল খেয়ে নেমে পড়ে তো অবাক হওয়ার কিছু নেই।
অলিম্পিকের ইতিবাচক ব্যাপ্তি, প্রসার, প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অনিবার্যভাবেই রকমারি চ্যালেঞ্জেরও, যেমন: বয়কট, ডোপিং, ঘুষের লেনদেন, সন্ত্রাস, বিতর্ক ইত্যাদিরও সৃষ্টি করেছে। অলিমপিজমের মূলমন্ত্র অক্ষরে অক্ষরে পালন করা কি সম্ভব? যেমন, ২০০৮ সালের বেজিং অলিম্পিক খেলা প্রসঙ্গে মানবাধিকারের প্রশ্ন তুলে এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ২০০৬ সালে বেশ সোরগোল তুলেছিল। এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের অবান্ধবরা তখন খোদ এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতি দুটো বাণ ছুড়ে দিয়েছিল: এক, যে মানবাধিকারের কথা বলা হচ্ছে, সেই প্রেক্ষিতে পৃথিবীর কোন দেশেই অলিম্পিক খেলা হতে পারে না; দুই, কারোই মানবাধিকারের হোলসেল অথরিটি নেই। যাহোক, বেজিং অলিম্পিক থেকে সবাই খুশিমনেই যার যার দেশে ফিরে আসে।
যদিও প্রথম অলিম্পিক খেলা ছিল শতকরা এক শ’ ভাগই পুরুষদের, কিন্তু ১৯০০ সালের প্যারিস অলিম্পিকে নারীর অংশগ্রহণকে স্বীকৃতি দেয়া হয়। যেমন, যুক্তরাজ্যের ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় শার্লট কুপার ১৯০০ সালে প্রথম মহিলা অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন হন। তবু, আপাতদৃষ্টে অলিম্পিকে নারীবৈষম্যকে অস্বীকার করা হলেও, ১১২ বছরের ইতিহাসে কিন্তু পৃথিবীর সব দেশই মহিলা ক্রীড়ক ও ক্রীড়াবিদ পাঠায় না। এমনকি ১৯৯২ সাল পর্যন্ত কম করে ৩৫টি দেশ অলিম্পিকে কেবলমাত্র পুরুষ দল পাঠিয়েছে। বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলো মহিলাদের প্রশ্নে কঠোর নীতির জড়তায় জর্জরিত। তবে অলিম্পিক কমিটিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার চাপের মুখে অবস্থার অবশ্য পরিবর্তন ঘটছে; বিভিন্ন দেশ ধীরে ধীরে মহিলা অংশগ্রহণকারীও পাঠাচ্ছে। যেমন, ১৯৯৬ সালে, আটলান্টা অলিম্পিকে প্রথম ইরানী লিটা ফেয়ারিম্যান ‘শূটিং’য়ে অংশ নেন। ২০০০ সালের সিডনি অলিম্পিকে বাহরাইন প্রথমবারের মতো দুই মহিলা প্রতিযোগীকে পাঠায়; ২০০৪ সালে, প্রথমবারের মতো আফগানিস্তানও দুই মহিলাকে এথেন্স অলিম্পিকে অংশগ্রহণের জন্য পাঠায়। সংযুক্ত আরব আমিরাত পাঠায় ২০০৮ সালে বেজিং অলিম্পিকে; এবারেও সংখ্যা দুই-ই Ñমায়তা আল মাকতুমকে পাঠানো হয় টেকউন্ডোতে অংশ নিতে, দ্বিতীয়জন লতিফা আল মাকতুম যান অশ্বারোহণ বা ইকোয়েস্ট্রিয়ানে প্রতিযোগিতা করতে। এই দুই মহিলা আবার দুবাইয়ের শাসক পরিবারের সদস্যও বটে। এভাবে মুসলিম দেশগুলো মহিলাকেন্দ্রিক প্রশ্নে ক্রমশ তাদের জড়তার খোলস থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা অব্যাহত রাখে। ফলস্বরূপ, ২০১০ সালে এসে দেখা গেল যে কেবল ব্রুনেই, সৌদি আরব ও কাতারই ইতস্ততামুক্ত হতে পারছে না। তবে শেষ মুহূর্তে, ২০১২ সালের জুলাই মাসে, অলিম্পিক খেলা শুরুর মাত্র দিন কয়েক আগে তিনটি দেশই ঘোষণা দেয় যে তারা সরকারীভাবে, যথাক্রমে একজন, দুইজন ও একজন করে মহিলা পাঠাচ্ছে। তবে তারা আদৌ সশরীরে লন্ডনে গেছেন কিনা বা গিয়ে থাকলেও কোন্ ইভেন্টে বাস্তবিকই অংশ নিচ্ছেন কিনা, সেই তথ্য জানতে পারিনি। অলিম্পিকের খেলায় একমাত্র ইকোয়েস্ট্রিয়ান ডিসিপ্লিনেই নারী ও পুরুষ একসঙ্গে প্রতিযোগিতা করে থাকে। এই ডিসিপ্লিনে অংশগ্রহণে আপত্তি থাকলেও থাকতে পারে হয়ত। কারণ যা-ই হোক, তবে সরকারী ঘোষণারও ইতিবাচক গুরুত্ব রয়েছে, এবং জড়তামুক্তির জন্য ধন্যবাদার্হও বটে।
অলিম্পিক খেলা মানেই এলাহি সব কর্মকা-। একে ঘিরে বিতর্কও সৃষ্টি হতে বাধ্য। সব অলিম্পিকেই হয়ে আসছে। যেমন, ২০১২ সালে আসল খেলা শুরুর আগেই টুইটারে মত প্রকাশ করে গ্রীসের ট্রিপল জাম্পার পারাসকেভি পাপাখ্রিস্টোউ কেমন ফেঁসে যান! সাম্প্রদায়িক ভেদনীতির বা রেসিস্ট অপবাদের গুরুভার পান তিনি। ক্ষমাটমা অনুতাপ প্রকাশ হয়তবা পাপস্খলনে সাহায্য করে, তবে অংশগ্রহণের অধিকার দেয় না। ফলে, ‘পত্রপাঠ’ মাত্রই তাঁকে দেশে ফিরে যেতে হয়। আবার আলবেনিয়ার ওয়েটলিফটার হিসেন পুলাকু ডোপিংয়ের ঝামেলায় ধরা পড়েছেন, এবং অন্য দুই জিমন্যাস্টের ভবিষ্যত একই পাপে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। খেলা শেষ হতে না হতে, এবং এমনকি পরেও এই জাতীয় অনেক কাহিনী শোনা যাবে। তবে জী শো-ওয়েন নামে চীনের ষোলো বছরের বাচ্চা মেয়েটি সাঁতারে এমন তাক লাগিয়ে দেয় যে পশ্চিমের মিডিয়া ‘জেনেটিক ডোপিংয়ের’ কথা বলতে শুরু করেছে। শো-ওয়েন নতুন বিশ্বরেকর্ড যেমন স্থাপন করেছে তেমনি সাঁতারের শেষ অংশে যে গতিতে সে সাঁতরেছে ফেনোমেনাল সাঁতার; মাইকেল ফেলপসও এমন গতিতে শেষ করতে পারে না। জেনেটিক ডোপিং বলতে বলা হচ্ছে যে ট্রাডিশনাল ডোপিংয়ের বদলে জেনেটিক্যাল অভিযোজনের প্রয়োগ করা। এমনকি এমনও বলা হচ্ছে যে ২০০৫ সালে রোনাল্ড ইভান্স নামক কোন এক বিশেষজ্ঞ নাকি ইঁদুরের ওপর জেনেটিক সংশোধন প্রক্রিয়া ব্যবহার করে ইতিবাচক ফল পেয়েছেন। (চলবে)

nadirahmajumdar@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.