গবেষণা জরিপে তথ্য- ৭০ শতাংশ তরুণ পর পর একই দলকে ভোট দেন না

দেশের ৭০ শতাংশ তরুণ ভোটার একবার যে দলকে ভোট দেন, পরের বার সে দলকে ভোট দেন না। বাকি ৩০ শতাংশ তরুণ পর পর দুবার একই দলকে ভোট দেন। ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে তরুণ ভোটারদের বেশির ভাগই পরিবারের সদস্যদের মতামত গ্রহণ করেন না।


ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিউট অব গভর্নেন্স স্টাডিজের (আইজিএস) এক গবেষণাজরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা গেছে, তরুণেরা নিজস্ব চিন্তাভাবনা থেকেই পছন্দের রাজনৈতিক দলকে বেছে নেন। বেশির ভাগ তরুণ গণতন্ত্র বলতে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন বোঝেন। আর তাঁদের মধ্যে ৯৭ শতাংশ তরুণ মনে করেন শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন ছাড়া ওই নির্বাচন সম্ভব নয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত কর্মশালায় জরিপের ফলাফল তুলে ধরা হয়। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) ও সুইস ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনের সহায়তায় ‘তরুণদের কথা—বাংলাদেশ যুব জরিপ ২০১১’ শীর্ষক জরিপটি পরিচালনা করে আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা এসি নিয়েলসন, বাংলাদেশ। ১৫ থেকে ৩০ বছর বয়সী ছয় হাজার ৫৭৫ তরুণের ওপর রাজনৈতিক চিন্তা, লিঙ্গবৈষম্য, পেশা ও প্রযুক্তির বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়।
জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ২ শতাংশ তরুণ রাজনৈতিক দলের সদস্য। বেশির ভাগ তরুণ মনে করেন, দেশের রাজনৈতিক সংকটের একটি বড় দিক হচ্ছে প্রধান দুই দলের একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা না থাকা। ৮০ শতাংশ উত্তরদাতা পুলিশের চেয়ে র‌্যাবকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আস্থায় নিয়েছেন। সাধারণ আদালতের চেয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতকে তাঁরা বেশি কার্যকর মনে করেন।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বিষয়ে জরিপে তরুণদের কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিল। দেখা গেছে, দেশের ৮৫ শতাংশ তরুণ বলেছেন, তাঁদের কাছে মুঠোফোন রয়েছে। কিন্তু টাকার অঙ্কে তাঁদের কাছে মুঠোফোনের ব্যবহার খুবই কম। মাসে ১০০ থেকে ১৫০ টাকার বেশি রিচার্জ করেন না তাঁরা। মূলত একে অপরকে ‘মিসড কল’ দেওয়ার কাজে এই ফোন ব্যবহূত হয়। ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রধান উপাদান তথ্যপ্রযুক্তি। কিন্তু জরিপে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট ব্যবহারে হতাশাজনক চিত্র পাওয়া যায়। মাত্র ১০ শতাংশ তরুণ-তরুণী ইন্টারনেট-সুবিধা ব্যবহার করেন। জরিপের মত হচ্ছে, এ ক্ষেত্রে তরুণ প্রজন্মকে প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে যুক্ত নয় বলে বিচ্ছিন্ন বলা যায়।
জরিপে আরও দেখা গেছে, তরুণ-তরুণীদের শ্রমবাজারে অংশগ্রহণের হার খুবই কম এবং লিঙ্গবৈষম্য খুবই বেশি। এঁদের ২৭.৬ শতাংশ তরুণ চাকরি করেন। ৫৭ শতাংশ নারী নিজেদের গৃহিণী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। তরুণদের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে উন্মুক্ত প্রশ্নের জবাবে তাঁরা বলেছেন: বেকারত্ব, নিরক্ষরতা, অর্থকষ্ট ও দারিদ্র্য। কিন্তু সমস্যা তুলে ধরে ক্রমান্বয়ে সাজালে তাঁরা সুস্বাস্থ্য এবং গুণগত শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েছেন। রাষ্ট্র এ ক্ষেত্রে কী করতে পারে, এই প্রশ্নের জবাবে বেশির ভাগ তরুণ বলেছেন, ‘শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি।’
আইজিএসের পক্ষে অলিভিরা গ্রেনার গবেষণার প্রাথমিক ফলাফল তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, তরুণেরা একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলকে পর পর দুবার যে ভোট দিতে চাচ্ছেন না; এটা প্রমাণ করে রাজনৈতিক দলগুলো তরুণদের আস্থা অর্জন করতে পারছে না। এই আস্থা তাদের অর্জন করতে হবে। তিনি বলেন, নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে তরুণেরা আদর্শ মনে করলেও রাজনৈতিক দলগুলো তাঁকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে।
ইউএনডিপি বাংলাদেশের দেশীয় পরিচালক স্টিফেন ফ্রেইজনার বলেন, যেকোনো দেশের ক্ষেত্রে তরুণেরা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারেন।
কর্মশালায় বক্তব্য দেন সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত উরস হেরেন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ইশফাক ইলাহি চৌধুরী, আইজিএসের নির্বাহী পরিচালক রিজওয়ান খায়ের এবং উপদেষ্টা মনজুর হাসান।

No comments

Powered by Blogger.