প্রাণীদের ফেসবুক

মানব সমাজে যেমন ফেসবুকের মতো সামাজিক নেটওয়ার্ক আছে। তেমনি প্রাণী জগতেও সামাজিক নেটওয়ার্ক চালু আছে। একটা ফেসবুক এ্যাকাউন্টের মধ্য দিয়ে যেমন একজন মানুষ সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যায় তেমনি প্রাণীদের বিশেষ করে পাখিদের সামাজিক নেটওয়ার্কের মধ্য দিয়ে তাদের জীবন সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে


পারে। এ থেকে বিজ্ঞানীরা গভীরভাবে জানতে পারেন কিভাবে তারা সঙ্গী বা সঙ্গিনীকে খুঁজে নেয়, কিভাবে খাদ্যের সন্ধান বের করে, কিভাবে তাদের মধ্যে রোগব্যাধির বিস্তার ঘটে এবং কিভাবেই বা তাদের মধ্যে তথ্য বা খবরাখবর ছড়িয়ে পড়ে। তবে বন্যপ্রাণীদের সামাজিক চক্র সহজে ভেঙ্গে যায় না।
সম্প্রতি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল গবেষক বুনো গ্রেটটিট পাখির ওপর সামাজিক নেটওয়ার্ক বিশ্লেষণের একটি নতুন উপায় পরীক্ষা করে দেখেছেন। প্রাণীরা কিভাবে গ্রুপে একত্রিত হয় সেটা সেই প্রাণীর স্বাস্থ্যের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখতে পারে। শুধু তাই নয়, নানাভাবেই তা ব্যষ্টি ও সমষ্টি হিসাবে সেই প্রাণীর গোটা গোষ্ঠীর অস্তিত্বের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।
কিন্তু প্রাণী সমাজের এই নেটওয়ার্ক প্রকাশ করতে যাওয়া এক মস্ত চ্যালেঞ্জ যখন বিপুল পরিমাণ ফিল্ডওয়ার্ক তথ্যের মধ্যে রয়েছে ব্যষ্টি হিসাবে প্রাণীগুলোর সময় ও অবস্থানের স্বয়ংক্রিয় পর্যবেক্ষণের এক দীর্ঘ প্রবাহ যার ভিত্তিতে বিজ্ঞানীরা প্রতিটি প্রাণী কিভাবে সম্পর্কযুক্ত তার এক বৃহৎ চিত্র পুনর্নির্মাণের চেষ্টা করেন।
নতুন কৌশলের সাহায্যে বিপুলসংখ্যক পর্যবেক্ষণের মধ্যে নিবিড় সামাজিক ক্রিয়াকলাপের অধ্যায়গুলো আপনা থেকে চিহ্নিত করা যেতে পারে। চলতি দৃষ্টান্তের ক্ষেত্রে ওয়াইল্ড গ্রেটটিট পাখির প্রায় ১০ লাখ পর্যবেক্ষণ রেকর্ড করা হয়। তার ফলে এই অধ্যায়গুলো আরও বিস্তারিতভাবে পরীক্ষা করে দেখা এবং তার ভিত্তিতে কোন কোন পাখি প্রকৃত বন্ধু এমনকি কোনগুলো জোড়া বাধার ও মিলিত হবার চেষ্টা করছে সেগুলো নির্ণয় করা সম্ভব।
এই গবেষণার ওপর একটি রিপোর্ট সম্প্রতি জার্নাল অব দি রয়াল সোসাইটি ইন্টারফেসে প্রকাশিত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে যে, ফেসবুকে নিজের সম্পর্কে কোন তথ্যের কথা মনে হলে ওতে কারা আপনার বন্ধু, আপনি কোথায় ছিলেন, অন্যদের সঙ্গে আপনি কি শেয়ার করেন ফেসবুকে তার রেকর্ড থাকে। তেমনিভাবে ব্যক্তিগতভাবে একেকটি প্রাণী সম্পর্কে তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রাণীদের একটা ফেসবুক গড়ে তুলতে পারি এবং তাতে কার সঙ্গে কার কি সম্পর্ক আছে, কারা কারা একই গ্রুপের সদস্য এবং কারা একই সমাবেশে বা ঘটনায় নিয়মিত উপস্থিত হয় সেই তথ্যগুলোর একটা ফেসবুক গড়ে তোলা যায়। আলোচ্য ক্ষেত্রে সেই প্রাণীটি হলো বুনো গ্রেটটিট পাখি।
গবেষক দলটি বুনো গ্রেটটিটের দুটি প্রজনন মৌসুমের (আগস্ট ২০০৭ থেকে মার্চ ২০০৮ এবং আগস্ট ২০০৮ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত) উপাত্তের ভিত্তিতে নতুন কৌশলটি পরীক্ষা করে দেখেন। এসব উপাত্ত অক্সফোর্ডের ওয়াইলাম অরণ্যের গোটা তল্লাটে ছড়িয়ে থাকা ৬৭টি বার্ড ফিডারের যে কোন একটিতে কোন পাখি এলে সেটা রেকর্ড করে রাখা হাজার হাজার পাখির সঙ্গে যুক্ত ট্রান্সপন্ডার ও সেন্সর থেকে এই উপাত্তগুলো পাওয়া যায়। এভাবেই প্রাণীদের ফেসবুক ধরনের সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংকে কাজে লাগানো যায়।
প্রকৃতি ও বিজ্ঞান ডেস্ক

No comments

Powered by Blogger.