কক্সবাজার ট্র্যাজেডি-ভেসে গেছে ঘরবাড়ি by রফিকুল ইসলাম ও ছোটন কান্তি নাথ

একদিকে মৃত্যুর শোক; অন্যদিকে প্রবল পানির তোড়ে ঘরবাড়ি ভেসে গিয়ে চরম দুর্দশায় পড়েছে কক্সবাজার জেলার চকরিয়া, উখিয়া ও পেকুয়া উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ। সব হারিয়ে তারা এখন নিঃস্বপ্রায়। শুধু এই তিন উপজেলাতেই গত দুই দিনে পাহাড়ধস ও দেয়ালচাপায় প্রাণ গেছে ২৩ জনের। নিখোঁজ রয়েছে অনেকে।


পানিবন্দি হয়ে মানবেতর অবস্থায় রয়েছে বহু মানুষ। উখিয়ায় গতকাল বুধবার সকালে নিহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারের মাতম এলাকায় হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা করে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পানির তোড়ে শতাধিক বসতবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। এসব এলাকার ক্ষেতখামার, আমন বীজতলা, পানের বরজ, গ্রামীণ কাঁচা-পাকা রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বহু মানুষ এখন খোলা আকাশের নিচে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। এ পর্যন্ত সরকারি বা বেসরকারি কোনো পক্ষ থেকে কোনো ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা করা হয়নি বলে ক্ষতিগ্রস্তরা জানিয়েছে। এদিকে কক্সবাজার বন বিভাগের নির্দেশে উখিয়া বন রেঞ্জ কর্মকর্তা উপজেলার সর্বত্র পাহাড়ি এলাকায় বসবাসকারী লোকজনকে নিরাপদে সরে আসার জন্য মাইকিং করেছেন।
চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি মারাত্মক রূপ নিয়েছে। পাহাড়ি ঢলের পানিতে ভাসছে দুই উপজেলার পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ। গত দুই দিনে এসব মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় অনাহার-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার তিন শতাধিক চিংড়ি ঘেরের বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় এবং প্রায় পাঁচ হাজার পুকুরের মাছ ভেসে যাওয়ায় শুধু মৎস্য খাতে ক্ষতির পরিমাণ ১০০ কোটি টাকা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় লক্ষাধিক পরিবারের বাড়িঘরে বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় অনাহার-অর্ধাহারে থাকতে হচ্ছে এসব মানুষকে। দুর্গত এলাকায় প্রকট আকার ধারণ করেছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। অনেক এলাকায় নৌকার অভাবে যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। চকরিয়া পৌরসভার মেয়র নুরুল ইসলাম হায়দার জানান, পৌর কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় বুধবার পাঁচটি লঙ্গরখানা খোলা হয়েছে। এসব লঙ্গরখানায় ১০ সহস্রাধিক বন্যার্ত মানুষকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম কালের কণ্ঠকে জানান, এবারের বন্যা বিগত কয়েকটি ভয়াবহ বন্যাকেও হার মানিয়েছে। উপজেলা প্রশাসন চকরিয়াকে বন্যাদুর্গত এলাকা ঘোষণা করে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.