সিলেট শহরে ঢুকে পড়েছে পানি

দেশের বিভিন্ন স্থানে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। একই সঙ্গে শুরু হয়েছে তীব্র নদীভাঙন। সিলেট শহরে ঢুকে পড়েছে বন্যার পানি। সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় জেলা শহর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলা।


সুনামগঞ্জ জেলা সদর প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি ছাতক উপজেলা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। পাহাড়ি ঢলে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে চট্টগ্রামের বাঁশখালীর ১১৩টি গ্রাম। কুড়িগ্রামে শতাধিক গ্রাম ও দ্বীপচর প্লাবিত হয়ে পড়েছে।
আমাদের সিলেট অফিস জানায়, পাহাড়ি ঢল আর অবিরাম বর্ষণ এবং নদীগুলোতে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। তিনটি উপজেলার সঙ্গে সিলেটের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। গতকাল পর্যন্ত বন্যার পানিতে ডুবে দুজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। গতকাল সকালে গোয়াইনঘাটের জাফলং চা বাগানে পানিতে ডুবে শ্রীদিবস (১৬) নামের এক চা শ্রমিক মারা গেছেন।
সিলেট নগরের উপশহর, মণিপুরী রাজবাড়ী, তেররতন, মেন্দিবাগ, ছড়ারপাড়, মাছিমপুর, সোবহানীঘাট, উদ্দীপন নয়াপাড়া, কলাপাড়া, ঘাসিটুলা, ভার্থখলা, ঝালোপাড়া, টেকনিক্যাল রোডের বাসাবাড়িতে এবং নগরের বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে পরিচিত কাজীরবাজার, কালীঘাট এলাকার দোকানপাটে প্রবেশ করছে বানের পানি। ছড়ারপাড়ে মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের বাসায় পানি প্রবেশ করেছে। বন্যাদুর্গতদের জন্য সিটি করপোরেশনে সাতটি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান গতকাল নগরের বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। সিটি করপোরেশনে বন্যানিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।
সিলেট-গোয়াইনঘাট, সিলেট-কানাইঘাট ও সিলেট-বিয়ানীবাজার সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় এই তিনটি উপজেলার সঙ্গে জেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। বন্যার্তরা উঁচু সড়কগুলোতে আশ্রয় নিচ্ছে। সিলেট-তামাবিল সড়কে বন্যার্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। কোম্পানীগঞ্জ বাজারের বিভিন্ন সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। বালাগঞ্জ উপজেলায়ও বন্যা দেখা দিয়েছে। কুশিয়ারার তীরবর্তী এলাকায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। জকিগঞ্জে অর্ধ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সুরমা ও কুশিয়ারা নদী বিপৎসীমার ছয় ফুট ওপর দিয়ে বইছে।
সুনামগঞ্জ জেলা সদরে পানি : সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, ছাতকের সঙ্গে সারা দেশের সড়ক ও রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। সুনামগঞ্জ শহরের তেঘরিয়া, নবীনগর, ষোলঘর ও পাশের জগন্নাথপুর, মঈনপুর, ইব্রাহিমপুর এলাকার লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে।
বৃহত্তর চট্টগ্রামে বন্যার অবনতি : চট্টগ্রাম অফিস জানায়, চট্টগ্রামে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। এর মধ্যে সাতকানিয়া, চন্দনাইশ ও বাঁশখালীর পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। শঙ্খ নদে পানি বৃদ্ধির কারণে সাতকানিয়া, বাঁশখালী ও চন্দনাইশের শতাধিক গ্রাম তলিয়ে গেছে। সাতকানিয়ার কেঁওচিয়া, ঢেমশা, আমিলাইষ, চরতি, চন্দনাইশের হাশিমপুর, দোহাজারী, চাগাচর, বাঁশখালী উপজেলার সাধনপুর ও বানীগ্রাম এখন পানির নিচে।
বাঁশখালীর ১১৩ গ্রাম লণ্ডভণ্ড : বাঁশখালী পৌর সদরসহ কালীপুর, সাধনপুর, বৈলছড়ি, পুঁইছড়ি, চাম্বল ও শেখেরখীল ইউনিয়নের ৪২টি গ্রামে যেন 'গজব' নেমে এসেছে। উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলের আরো ৭১টি গ্রামে বন্যা আঘাত হানে। এতে উপজেলার মোট ১১৩টি গ্রাম লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে।
কুড়িগ্রামে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত : কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে কুড়িগ্রামে ধরলা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্রসহ সব নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কুড়িগ্রাম সদর, চিলমারী, ফুলবাড়ী, নাগেশ্বরী, রৌমারী, রাজীবপুর, রাজারহাট ও উলিপুর উপজেলার শতাধিক চর, দ্বীপচর ও নদীসংলগ্ন গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ। রাজীবপুর উপজেলার তিন ইউনিয়নের ২০ গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে।
পদ্মায় ব্যাপক ভাঙন : মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, উজানে পানি বৃদ্ধির প্রভাবে ভয়াল রূপ নিয়েছে পদ্মা। দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। বিশেষ করে কামারগাঁও এলাকায় ভাঙন পরিস্থিতি ভয়াবহ।

No comments

Powered by Blogger.