বাকলিয়ায় পানিবন্দী জীবন-‘পানি উঠলে চুলা জ্বলে না’

‘পানি উঠেছে কোমরসমান। এলাকার সব ভবনের নিচতলা ও দোকানে সকালে পানি ঢুকে গেছে। পানিবন্দী হয়ে পড়ায় এখানকার বেশির ভাগ বাসায় চুলা পর্যন্ত জ্বলছে না। শুকনো খাবারও নেই। কারণ, দোকানপাটও পানিতে ডুবে আছে। বাকলিয়ায় আগেও পানি উঠত। তবে এতটা না। এবারের পানি ভয়াবহ।’


গত মঙ্গলবার দুপুরে নগরের দেওয়ানবাজার এলাকার বাসিন্দা এ এফ ইরফান হোসেন এভাবেই ভোগান্তির কথা জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পশ্চিম বাকলিয়ার দেওয়ানবাজার, বৌবাজার, শান্তিনগর, ধুনির পোল, মৌসুমী আবাসিক এলাকা, মাস্টার পোল, ডিসি সড়কের একাংশ ও পূর্ব বাকলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় গত মঙ্গলবার সকালে ছিল হাঁটু থেকে কোমরপানি। জলাবদ্ধতার কারণে এসব এলাকার অধিবাসীদের স্বাভাবিক জীবন যাপন ব্যাহত হয়ে পড়ে।
শান্তিনগর এলাকার মুদির দোকানি বেলাল হোসেন বলেন, ‘দোকানের ভেতর কোমরসমান পানি। তাই বেচাবিক্রি বন্ধ করে দিয়েছি। দোকানের নিচে যেসব মালপত্র ছিল, সব নষ্ট হয়ে গেছে।’
এলাকাবাসী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, বাকলিয়া এলাকায় জলাবদ্ধতার মূল কারণ নির্মাণাধীন তিন সেতু। এগুলো হলো: চাক্তাই খালের ওপর মিয়াখান নগর সেতু ও ইসহাকের সেতু, বিরজা খালের ওপর তুলাতলী সেতু। এ তিনটি সেতুর কার্যাদেশ আছে ৩০ জুন পর্যন্ত। কিন্তু বর্ষা মৌসুম শুরু হয়ে যাওয়ায় নির্মাণকাজ কবে শেষ হবে তাও বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এই তিনটি সেতুর অসমাপ্ত অবকাঠামোর কারণে পানিপ্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। পাশাপাশি পশ্চিম বাকলিয়ার আমান আলী সড়কের মুখে হিজড়া খালের মুখে আবর্জনা জমে আছে। রসুলবাগ ও সৈয়দ শাহ সড়কসংলগ্ন খালের অংশেও আবর্জনা জমে আছে। অন্যদিকে ধুনির পুল দুই পাশের সড়কের তুলনায় উঁচু। এতে সংলগ্ন এলাকার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
স্থানীয় লোকজন জানান, নগরের চাক্তাই খালের বেশির ভাগ বাকলিয়া এলাকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। পাশাপাশি রহমতগঞ্জ ও বহদ্দারহাট এলাকার পানি বিভিন্ন খাল হয়ে বাকলিয়ার মধ্য দিয়ে চাক্তাই খালে গিয়ে পড়ে। এলাকার অন্য খালগুলো এ মৌসুমে যথাযথভাবে পরিষ্কার না করায় জলাবদ্ধতার পরিমাণ ও স্থায়িত্ব বাড়ছে।
বাকলিয়ার আফগান মসজিদ এলাকার বাসিন্দা তৌহিদুল আলম বলেন, ‘কিছু দিন আগে সিটি করপোরেশনের লোকজন খালের মাটি কাটতে দেখেছি; কিন্তু এবার পানি আরও বেড়ে গেছে। রাস্তা থেকে বাসাবাড়ি নিচু হওয়ায় আর খালগুলোর সংযোগস্থলে আবর্জনা জমে থাকায় পানি উঠছে।’
এ প্রসঙ্গে নগরের বক্সিরহাট ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জামাল হোসেন বলেন, ‘বাকলিয়া ও সংলগ্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার জন্য সিটি করপোরেশনের অনভিজ্ঞতা, অদক্ষতা ও ব্যর্থতাই দায়ী। দেড় বছর ধরে বাকলিয়ার তিনটি সেতুর নির্মাণকাজ চলছে। এখনো শেষ হয়নি।’

No comments

Powered by Blogger.