সামাজিক যোগাযোগ হোক ইতিবাচক by ইমদাদ হক

অচেনা কোনো মুখ চমকে দিয়ে বলে_ বন্ধু কী খবর বলো! কতদিন তোর দেখা নেই! একবিংশ শতকের এক দশকে দাঁড়িয়ে এ কথাগুলো বলা সম্ভব সামাজিক যে কোনো যোগাযোগ মাধ্যমে। এ ছাড়া পুরনো কোনো বন্ধুকে নতুন করে পাওয়া, নতুন বন্ধু খুঁজে বের করা, সুখ-দুঃখ ও আনন্দ-বেদনার মুহূর্তগুলো অন্যের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেওয়ার পথ করে দেয় ফেসবুক, টুইটার, ইয়াহু ম্যাসেনজারের মতো যোগাযোগ মাধ্যমগুলো।


এসব সেবার ফলে এই ওয়েবসাইটগুলো তুমুল জনপ্রিয়তা কুড়িয়ে নিয়েছে বিশ্বব্যাপী। আমাদের দেশে এখন ২১ লাখের ওপর ফেসবুক ব্যবহারকারী রয়েছে, যা শুধু ব্যক্তিগত গণ্ডিতেই আবদ্ধ নেই; বরং সামাজিক, রাজনৈতিক আন্দোলন কিংবা জনমত গড়তে কার্যকর ভূমিকা পালন করছে। আমাদের সবার কাছে ফেসবুকের এমন ব্যবহারই কাম্য। আবার যেসব কথা খোলা মাঠে বলা অসম্ভব, তা চাইলেই স্বাধীনভাবে অনলাইনে প্রকাশ করা যায়। তবে ভার্চুয়াল জগতের বিষয়গুলো আমাদের দেশে নতুন হলেও এসবের অপব্যবহার ইদানীং বেশ লক্ষণীয়। সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে, মেয়েদের পারিবারিক অ্যালবাম থেকে ছবি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করা হচ্ছে। এ ছাড়া আপত্তিকর ছবি, ভিডিও শেয়ার করা হয় অন্যের ওয়ালে। এসব বিষয়ে আমজনতার আকর্ষণ একটু বেশি। নারী সংক্রান্ত হলে তো কথাই নেই। এসব অপকর্মে একদিকে যেমন ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ হচ্ছে, অন্যদিকে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।
শুধু ভার্চুয়াল জগতে নয়, বাস্তব জীবনেও এসব পুরুষের বিকৃত মানসিকতার শিকার হন নারীরা। নারীর প্রতি পুরুষের আকর্ষণ থাকবে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু সীমা ছাড়িয়ে গেলে তা নারীর জন্য লাঞ্ছনার। নারীকে অপদস্থ করে যারা আনন্দ পায় তারা আসলে নৈতিক অবক্ষয়গ্রস্ত। মনে রাখতে হবে, এর মাধ্যমে কোনো কিছু অর্জন করা যায় না। তবে আইনের সঠিক ব্যবহার হলে শাস্তির ভয় থাকে বিধায় এ ধরনের প্রবণতা হ্রাস পায়। অন্যকে হেয় করবে, এমন কোনো লেখা প্রকাশ করা উচিত নয়। কর্তৃপক্ষের উচিত হবে সঞ্চালক বা মডারেটরের মাধ্যমে এসব নিয়ন্ত্রণ করা। এ ছাড়া ফেসবুকে নিজের মডারেটর নিজেকেই হতে হবে, যাতে ওয়ালে কোনো আজেবাজে লেখা না থাকে, অন্যরা দেখতে না পায়। কারও এ ধরনের প্রবণতা থাকলে শুরুতে সতর্ক করে দিতে হবে। তাতে কাজ না হলে বন্ধুর তালিকা থেকে বাতিল করে দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
সমাজের অনেক মেয়েই প্রতিনিয়ত এ ধরনের হয়রানি শিকার হচ্ছে। বাদ পড়ছে না তারকা খ্যাতিসম্পন্ন মেয়েরাও। শুধু ফেসবুকে নয়, মুঠোফোন, কম্পিউটার কিংবা ইন্টারনেটের নানা ধরনের অপব্যবহারের শিকার হচ্ছে। এসব অপরাধের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হোক প্রতিবাদ-প্রতিরোধ ও মুক্তমনের বিচরণভূমি। এটাই কাম্য।

সইমদাদ হক : শিক্ষার্থী, লোক প্রশাসন বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
shuvro.ju@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.