এই খাতের বিকাশে এখন প্রয়োজন সরকারের সমর্থন-জার্মানিতে বাংলাদেশের জাহাজ

দেশে তৈরি জাহাজ বিদেশে রপ্তানির বিষয়টি একেবারে নতুন নয়। এর পরও বাংলাদেশের তৈরি দুটি জাহাজ জার্মানির কাছে হস্তান্তরের বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গেই দেখতে হচ্ছে। এ ঘটনা জাহাজ নির্মাণশিল্পে বাংলাদেশের অবস্থানকে এক নতুন জায়গায় নিয়ে গেছে, এই শিল্পে আমাদের সম্ভাবনার জানান দিচ্ছে।


চট্টগ্রামের ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডে যে দুটি জাহাজ নির্মিত হয়েছে, তা অত্যাধুনিক ও বড় আকারের। বিদেশি বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধান ছিল বটে, তবে জাহাজ দুটি নির্মাণ করেছেন দেশীয় প্রকৌশলীরাই। নির্মিত জাহাজ দুটি হস্তান্তরের আগে সমুদ্র মহড়া হয়েছে। সেখানে জাহাজ দুটির যথাযথ মানের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এটা সত্যিই এক বড় ঘটনা এবং এটা আমাদের দেশীয় প্রকৌশলীদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। একসময় হয়তো বিদেশিদের তত্ত্বাবধান ছাড়াই এ ধরনের জাহাজ নির্মাণ সম্ভব হবে।
জাহাজ নির্মাণ একটি উচ্চপ্রযুক্তির শিল্প। জার্মানির মতো দেশে যখন বাংলাদেশের তৈরি অত্যাধুনিক এবং হিমশীতল ও প্রতিকূল পরিবেশে চলার উপযোগী দুটি জাহাজ রপ্তানি করা সম্ভব হয়েছে, তখন আন্তর্জাতিক বাজারে সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশি জাহাজের চাহিদা যে বাড়বে, তাতে সন্দেহ নেই। জাহাজ হস্তান্তর অনুষ্ঠানে উপস্থিত জার্মান পররাষ্ট্র দপ্তরের সচিব ঘটনাটিকে বাংলাদেশের জন্য এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, এর মধ্য দিয়ে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটবে।
বাংলাদেশের রপ্তানিযোগ্য পণ্যের তালিকা খুবই সীমিত। তৈরি পোশাকশিল্প আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যের সবচেয়ে বড় খাত। দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৭৭ থেকে ৭৮ শতাংশ আসে এই একটি খাত থেকে। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের জন্য একটি রপ্তানি পণ্যের ওপর এত নির্ভরশীলতা যেকোনো অর্থনীতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণের বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরেই আলোচিত হয়ে আসছে। জাহাজশিল্পের যথাযথ বিকাশ ঘটানো গেলে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ক্ষেত্রে এই খাতও বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
যথাযথ মান বজায় রেখে আন্তর্জাতিক বাজারের জন্য জাহাজ তৈরি করে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা তাঁদের সামর্থ্যের প্রমাণ রেখেছেন। এখন প্রয়োজন এই খাতের বিকাশে সরকারের তরফ থেকে প্রয়োজনীয় সাহায্য-সহযোগিতা ও সমর্থন। বাংলাদেশের নতুন রপ্তানিনীতিতে জাহাজ নির্মাণশিল্পকে উৎসাহিত করতে এই খাতটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে নীতিগতভাবে এই খাতকে উৎসাহিত করতে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার হয়েছে। কিন্তু বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যথাযথ উদ্যোগ নিশ্চিত করা না গেলে তা কাজে আসবে না। এই খাত যেহেতু সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে, ফলে এই খাতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানও সামনের দিনগুলোতে বাড়তে থাকবে। এখন সরকারের দায়িত্ব যথাযথ প্রণোদনা দেওয়ার মধ্যমে সম্ভাবনাময় এই খাতের বিকাশে সব ধরনের সুযোগ নিশ্চিত করা।

No comments

Powered by Blogger.