রমজানে পণ্যমূল্য-সহনীয় রাখতে সদিচ্ছাই যথেষ্ট

ফি-বছর বাজারের যে চিত্রটি ফিরে ফিরে আসে, তা হচ্ছে, বিশেষ বিশেষ সময়ে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি। এই বিশেষ সময়ের একটি হচ্ছে রমজান মাস। রোজা সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানো হয়নি এমন কোনো বছর পাওয়া যাবে না।


রোজা সামনে রেখে এবং রোজার মাস উপলক্ষ করে দাম বাড়ানোর যত রকম কারসাজি আছে, তা করা হয়। রোজার মাস এলেই সাধারণ মানুষের পাশাপাশি ক্রেতা-অধিকার বিষয়ে কাজ করে এমন সংগঠন বাজার নিয়ন্ত্রণের আবেদন-নিবেদন করলেও নিত্যপণ্যের বাজার সাধারণের আয়ত্তের বাইরেই থেকে যায়।
এবারও রোজা আসার আগে থেকে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির পাঁয়তারা চলছে- এমন খবর সংবাদমাধ্যমে এসেছে। রমজানে পণ্যমূল্য যাতে সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে এবং বাজারে কোনো কৃত্রিম সংকট কেউ সৃষ্টি করতে না পারে, সে জন্য সরকারের পক্ষ থেকে আগাম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রমজান মাস উপলক্ষে খুচরা বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা করা যাবে বলে সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বলা হয়েছে, আমদানিকারকরা নিজেদের খরচের বাইরে শতকরা এক টাকার বেশি মুনাফা করতে পারবেন না। পাইকারি ব্যবসায়ীরাও মুনাফা করতে পারবেন সর্বোচ্চ ১ শতাংশ। ডাল, ছোলা, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, শুকনো মরিচ, হলুদ, মসলা, খেজুর ইত্যাদি পণ্যের ক্ষেত্রে এ নিয়ম প্রযোজ্য হবে। বুধবার থেকেই সরকারের এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করার কথা। এ ব্যবস্থার পাশাপাশি পুরো রমজান মাসে ঢাকার বাজারদর স্থিতিশীল রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ১৪টি নজরদারি টিম মাঠে থাকবে। সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে নজরদারি চালাবে মন্ত্রণালয়। কোনো ব্যবসায়ী যাতে মজুদদারি করে পণ্যের দাম না বাড়াতে পারেন, সে জন্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও সতর্ক দৃষ্টি রাখবে। রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এবং স্বাভাবিক সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটি কর্মপরিকল্পনাও চূড়ান্ত করেছে। কর্মপরিকল্পনায় বলা হয়েছে, রমজানে টিসিবি ৫৫ হাজার ৭৮৮ টন চিনি, ১৬ হাজার ২১৯ টন ভোজ্য তেল, ১৯ হাজার ৩১৯ টন মসুর ডাল, পাঁচ হাজার টন ছোলা ও এক হাজার টন খেজুর নিয়ে মাঠে থাকবে।
বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকা দরকার। শুধু রমজান মাস নয়, সারা বছরই বাজার নিয়ন্ত্রণে ও ক্রেতাসাধারণের জন্য সহনীয় রাখতে সরকারকে বিকল্প একটি বাজারব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। সরকারের হাতে সে সুযোগও আছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সরকার একটি বিকল্প বাজারব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারলে অধিক মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হতো। তাদের সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানোর চেষ্টা ব্যর্থ করে দেওয়া যেত। এ জন্য প্রয়োজন সরকারের সদিচ্ছা। একই কথা ব্যবসায়ীদের জন্যও প্রযোজ্য। ব্যবসায়ীদের সদিচ্ছাও বাজার সাধারণের আয়ত্তে রাখতে পারে। শুধু রমজানে নয়, সারা বছরই বাজারে সরকার ও ব্যবসায়ীদের সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটবে বলে আমরা আশা করি।

No comments

Powered by Blogger.