জনজীবনে অশান্তি, প্রশাসন নির্বিকার

ডাকাতি-ছিনতাই, খুন, চাঁদাবাজি, অপহরণসহ নানা রকম অপরাধ এত বেশি বেড়ে গেছে যে দেশব্যাপী জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। অথচ অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, সরকার, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং বিভাগগুলোর কর্ণধাররা দিব্যি নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছেন।


কখনো কখনো হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে 'বাকবাকুম' সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার কারণে জনগণের বিরক্তির উদ্রেক করছেন। শুধু গত রবিবারের পত্রিকাগুলোর ওপরও যদি তাঁরা একটু চোখ বোলাতেন, তবে হয়তো তাঁরা দায়িত্বজ্ঞানহীন উক্তি করে জনগণের বিরাগভাজন হওয়া থেকে বিরত থাকতেন।
কালের কণ্ঠসহ রবিবার প্রকাশিত বিভিন্ন পত্রিকার শিরোনাম থেকে কয়েকটি খবর তুলে ধরছি। কালের কণ্ঠের প্রধান শিরোনাম হচ্ছে : 'লাগামছাড়া অপরাধ গাছাড়া প্রশাসন', অন্যান্য খবরের মধ্যে আছে : 'চট্টগ্রামে শেভরন ডায়াগনস্টিকে ডাকাতি : চিকিৎসকদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সাড়ে ১০ লাখ টাকা লুট', 'ঝালকাঠিতে গ্রাম পুলিশের পা কেটে নিল দুর্বৃত্তরা', 'সিলেটে চাচাতো ভাইয়ের হাতে ব্যবসায়ী খুন', 'নরসিংদী-টঙ্গী সড়ক উন্নয়নকাজে চাঁদা দাবি : যুবলীগের নেতা-কর্মীদের হামলায় ঠিকাদার ও পুলিশ আহত', 'ডাকাতের হাতে নিঃস্ব মানুষ, নির্বিকার প্রশাসন : আতঙ্কে ঘুম নেই কাপাসিয়াবাসীর', 'রাঙ্গুনিয়ায় র‌্যাব, পাংশায় পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি; শ্রীমঙ্গল, সাভার ও ফরিদপুরে লুট', 'বাউফলে অন্তঃসত্ত্বা প্রেমিকাকে হত্যা' ইত্যাদি।
এই চিত্র কি আমাদের সরকারপ্রধানসহ অন্যদের চোখে পড়ে না? আবার তদন্ত রিপোর্ট দুর্বল হওয়ায় কিংবা সাক্ষ্য-প্রমাণের অভাবেও মামলা টিকছে না। ২০১০ সালে মাত্র ২৪ শতাংশ অপরাধী সাজা পেয়েছে। ৭৬ শতাংশই বেকসুর খালাস পেয়ে আবার অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তদুপরি আছে 'রাজনৈতিক হয়রানিমূলক' মামলার অজুহাতে হত্যা মামলার আসামিদের ছেড়ে দেওয়ার সংস্কৃতি। ক্ষেত্রবিশেষে আর্থিক লেনদেনও এ ক্ষেত্রে একটি নিয়ামক ভূমিকা পালন করে থাকে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
স্পষ্টত, দেশে আইনের শাসন ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা যাতে প্রতিষ্ঠিত হয়, সে লক্ষ্যে কাজ খুব কমই হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে তার উল্টোটাই ঘটছে। এটিই দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রধান কারণ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। সমস্যার মূলে যাওয়া হচ্ছে না কোথাও। গতানুগতিকভাবে অপরাধ দমনের চেষ্টা করে কোনোকালেই অপরাধের মূলোৎপাটন করা যাবে না। জনমনে অতীতের মতো নানা প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে এবং ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হচ্ছে_সরকার সম্ভবত তা উপলব্ধি করছে না। প্রায় কোনো ক্ষেত্রেই জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না। পুলিশের মধ্যকার দুর্নীতির অবসান ঘটানো খুবই জরুরি। এ লক্ষ্যে 'পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন' (পিবিআই) নামে একটি পৃথক তদন্ত সংস্থার যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তা দ্রুত কার্যকর করা প্রয়োজন।

No comments

Powered by Blogger.