প্রতিবাদের নামে ভাঙচুর ও বিশৃঙ্খলা কাম্য নয়-ক্যাম্পাসে গাড়ি দুর্ঘটনা

গত বৃহস্পতিবার গাড়ি দুর্ঘটনায় এক ছাত্রের আহত হওয়াকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পাইকারি গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের যে ঘটনা ঘটেছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাধন কুমার ঘোষ নামের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হলে ফেরার পথে জগন্নাথ হলের কাছে গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হন।


গাড়িতে সিটি কলেজের এক ছাত্রী চালকের কাছে প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এ ধরনের প্রশিক্ষণ চলতে পারে না। এটি আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। আবার দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে গাড়ি ভাঙচুরের যে তাণ্ডব ঘটানো হয়েছে, তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলেই তাঁরা আইনকে নিজের হাতে তুলে নিতে পারেন না। দুর্ঘটনায় যে শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছেন, তাঁর প্রতি আমাদের অবশ্যই সহমর্মিতা আছে এবং আশা করি, চিকিৎসার মাধ্যমে তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন। আইন অনুযায়ী দুর্ঘটনার জন্য দায়ী গাড়ির চালক ও প্রশিক্ষণার্থীর শাস্তি হোক, সেটা সবারই কাম্য।
যে গাড়িটি দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে, সতীর্থরা আগেই সেটি আটক করেছেন, সেই গাড়িতে করেই আহত শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে পৌঁছানো হয়েছে। পরে বিক্ষুব্ধ সতীর্থরা সেই গাড়িটি পুড়িয়েই ক্ষান্ত হননি, ক্যাম্পাসের আরও ২৫টি গাড়ি ভাঙচুর করেছেন। এটি সোজা কথায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ছাড়া কিছু নয়। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীরা যদি এ ধরনের বিশৃঙ্খলা করেন, তাহলে সাধারণ যুবকেরা কী করবে? শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সবাই অনুকরণীয় আচরণই আশা করে।
এর আগেও গাড়ি দুর্ঘটনা, এমনকি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ছাত্রদের তাণ্ডব লক্ষ করা গেছে। যেকোনো দুর্ঘটনা দুঃখজনক। কিন্তু একটি দুঃখজনক ঘটনার প্রতিকার নিশ্চয়ই আরও বেশি দুর্ঘটনা ঘটানো নয়। গাড়ি ভাঙচুর করলে আহত ব্যক্তি ক্ষতিপূরণ পান না কিংবা তাঁর যন্ত্রণারও উপশম হয় না। আহত সাধন আশঙ্কামুক্ত জেনেও কারা তাঁর মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে ক্যাম্পাসে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে, সেটি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভারী যানবাহন ক্যাম্পাসে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। সাধারণ প্রাইভেট কারের ওপর নয়। গত বছর একটি দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে প্রশিক্ষণার্থীর গাড়ি প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তার পরও কীভাবে সেখানে দিনে-দুপুরে প্রশিক্ষণার্থী গাড়ি চালাচ্ছিলেন? প্রশিক্ষণের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা থাকতে হবে। যেকোনো জায়গায় গাড়িচালকদের প্রশিক্ষণকাজ চলতে পারে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বারবার এ ধরনের দুর্ঘটনা কেন ঘটে, তাও খতিয়ে দেখতে হবে। মনে রাখতে হবে, ক্যাম্পাসটি মহানগরের মাঝখানে। অতএব, সেখানে সাধারণের গাড়ি চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ সমীচীন নয়। নিরাপদ ক্যাম্পাস যেমন জরুরি, তেমনি সড়কে যানবাহনের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে হবে।
একটি দুর্ঘটনাকে পুঁজি করে যদি আরও দশটি দুর্ঘটনা ঘটানো হয়, তাতে রাষ্ট্র ও জনগণের সম্পদই নষ্ট হয়। এটি কোনোভাবেই আইনের শাসনের সহায়ক নয়। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলে খ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা আইন মেনে চলবেন এবং কোনো বিশৃঙ্খলাকে প্রশ্রয় দেবেন না আশা করি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সমন্বিত ও সুচিন্তিত পদক্ষেপই পারে ক্যাম্পাসে সবার নিরপত্তা নিশ্চিত করতে।

No comments

Powered by Blogger.