মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশায় কেন আগ্রহী নয় by মাহফুজুর রহমান মানিক

সমকালের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনটি গুরুত্বপূর্ণ। ২৪ জুন প্রকাশিত 'শিক্ষকতায় অনীহা মেধাবীদের' শিরোনামে বলছে, দেশের মেধাবী তরুণ-তরুণীরা শিক্ষকতা পেশায় আসতে দিন দিন অনাগ্রহী হয়ে উঠছে। প্রতিবেদনটি বিশেষত দুটি বিষয়কে কারণ হিসেবে দেখাচ্ছে_ কম বেতন-ভাতা এবং কম সামাজিক সম্মান।


প্রতিবেদনটি সাম্প্রতিক হলেও এ বিষয়টি আসলে আমাদের দেশের অনেক আগের সমস্যা। এটা নিয়ে লেখালেখি বা আলোচনা-সমালোচনা এবং একই সঙ্গে সরকারের প্রতিশ্রুতি যে কম হয়েছে তাও নয়। এ পেশায় আসার প্রতিবন্ধকতা হিসেবে যে বিষয়গুলো রয়েছে তা দেখলে সহজেই এটা বলা যায়_ অনীহা আসলে মেধাবীদের নয়, বরং সমাজ এবং রাষ্ট্রই মেধাবীদের এই পেশায় আসতে দিচ্ছে না। কোনো পেশা যত মহৎই হোক তার দ্বারা যদি কারও পেট না চলে তিনি পেশায় আসবেন না_ এটাই তো স্বাভাবিক। সমকাল দেখাচ্ছে_ প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং কলেজ পর্যায়ের প্রারম্ভিক বেতন কাঠামো ৪ থেকে ৮ হাজার টাকার মধ্যে। কলেজ পর্যায়ে কিছুটা বাড়লেও প্রাথমিক এবং মাধ্যমিকে শিক্ষকদের খুবই অল্প টাকায় জীবনধারণ করতে হয়। এর চেয়ে খারাপ ব্যাপার হলো, অনেক সময় বেসরকারি শিক্ষকরা ঠিকমতো মাসে মাসে এই কম বেতনটুকুও পাচ্ছেন না।
শিক্ষকদের জন্য আলাদা বেতন কাঠামোর কথা তো আমরা কম শুনিনি। এটা ঠিক, সাম্প্রতিক সময় সরকার সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পদমর্যাদা দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নীত করেছে আবার রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের ঘোষণা দিয়েছে। এগুলো আসলে খুবই সামান্য।
অথচ গোটা দুনিয়া শিক্ষকদের জন্য বিনিয়োগে ব্যস্ত। ফলে যেখানে তারা ঠিকই মেধাবী আর দক্ষদের শিক্ষক হিসেবে পাচ্ছেন, সেখানে শিক্ষার মান ভালো। সবচেয়ে বড় কথা হলো, আমাদের প্রাথমিক, মাধ্যমিক, কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধার মধ্যে যে আকাশ-পাতাল ফারাক তা কোথাও নেই। ভারতে শিক্ষকদের বেতন বাংলাদেশের দ্বিগুণেরও বেশি। দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী প্রত্যেকটি দেশেই শিক্ষকদের বেতন বেশি। আর উন্নত বিশ্বের চিত্র ড়িৎষফংধষধৎরবং.ড়ৎম দেখাচ্ছে, আমেরিকার একজন শিক্ষক গড়ে পান বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৪ লাখ টাকা, ইংল্যান্ডের শিক্ষক পান সাড়ে ৩ লাখের মতো, জার্মানির শিক্ষকের বেতন সাড়ে ৪ লাখ আর জাপানের শিক্ষকদের বেতনও সাড়ে ৩ লাখের বেশি। এসব দেশের শিক্ষকদের বেতনের একটা অংশ (২৫ থেকে ৩৫ শতাংশ) কেটে রাখা হয় এবং শিক্ষকদের কাজের সময় নির্ধারণ করা হয় সপ্তাহে ৩২ থেকে ৪০ ঘণ্টা।
আমাদের এখানেও শিক্ষকদের ভালো বেতন-ভাতার ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষকদের ভালোভাবে জীবনধারণের বেতন এবং সুযোগ-সুবিধা না দিলে মেধাবীরা এই পেশায় আগ্রহী হবে না। ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত ফল লাভ অধরাই থেকে যাবে।

সমাহফুজুর রহমান মানিক
শিক্ষার্থী, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
mahfuz.manik@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.