চকবাজার, বাদুরতলা, কাতালগঞ্জ-পানি ঢোকে ঘরে ঘরে by মিঠুন চৌধুরী

চকবাজার নাসির কলোনির বাসিন্দা দিনমজুর মো. শফিক। এক কক্ষের একটি ঘরে স্ত্রী ও এক সন্তান নিয়ে থাকেন। গত মঙ্গলবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, পরিবারের সবাইকে নিয়ে খাটের ওপর আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। ঘরের জিনিসপত্র খাটের ওপর তুলে রেখেছেন। পানি বাড়ছিল তখনো।


শফিক বলেন, ‘পানিতে খাট ডুবে গেলে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কোথায় যাব জানি না।’
গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে পানিবন্দী হয়ে পড়েন চকবাজার, কাতালগঞ্জ, প্রবর্তক মোড়সহ সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা। চকবাজার, কাপাসগোলা, বাদুরতলা, মুন্সি পুকুরপাড়, কাতালগঞ্জ, বড় গ্যারেজসহ কয়েকটি এলাকায় প্রতিটি বসতবাড়ি, দোকান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকেছে। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত এসব এলাকায় দিনের বেশির ভাগ সময় বিদ্যুৎও ছিল না। এ ছাড়া বহদ্দারহাট মোড়, মুরাদপুর, চকবাজার মোড়, সিরাজউদ্দৌলা সড়ক জলমগ্ন থাকায় এসব এলাকার বাসিন্দারা ঘর থেকে বের হতে পারেনি।
বাদুরতলা এলাকার বাসিন্দা শাহনাজ আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘মঙ্গলবার সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি ঘরের ভেতর পানি। কিছুক্ষণ পর রান্নার চুলা ডুবে যায়। তীব্র স্রোতের সঙ্গে পানি আসতে থাকে। তারপর ডুবে যায় খাট। এর আগে গত রোববারও ঘরে পানি ঢুকেছিল।’ জলাবদ্ধতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে এই গৃহিণী বলেন, ‘পানি আগেও উঠত। এখন আরও বেড়ে গেছে। সামান্য বৃষ্টি হলেও ঘরে পানি ঢোকে। ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে পারে না। বাজারে যেতে হয় হাঁটুপানি ডিঙিয়ে।’
কাপাসগোলা এলাকার একটি সরকারি ব্যাংকের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা গত মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই এলাকা বিচ্ছিন্ন দ্বীপে পরিণত হয়েছে। সব রাস্তা পানির নিচে। ব্যাংকের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী পানি ডিঙিয়ে দুপুর পর্যন্ত অফিসে পৌঁছাতে পারেননি।’
মুন্সি পুকুরপাড় এলাকার একটি মেসের বাসিন্দা শিক্ষার্থী এমরান হোসেন গত মঙ্গলবার বলেন, ‘ঘরের সব জিনিস পড়ার টেবিলের ওপর রেখেছি। চুলা পানির নিচে তাই রান্না বন্ধ। দুপুরে বাসার কাছে দোকান থেকে পাউরুটি কিনে খেয়েছি। কোথাও যেতেও পারছি না। এত পানি যে কোথায় রাস্তা, কোথায় নালা সেটাই বোঝা যাচ্ছে না।’ এ বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘হিজড়া খাল এবং কাপাসগোলা ও কাতালগঞ্জ এলাকায় যেসব নালা-নর্দমা আছে সেগুলোর অধিকাংশ দখল হয়ে গেছে। এসব খাল-নালা দখল করে পাকা দালান উঠেছে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় এবং চাক্তাই খালের ওই অংশের গভীরতা কম হওয়ায় এখানে অল্প বৃষ্টিতেও পানি উঠে যায়।’

No comments

Powered by Blogger.