চতুর্মুখী আন্দোলনে অচল জাবি, বন্ধ ক্লাস, একাডেমিক কার্যক্রম

সিরাজুল ইসলাম/জাকারিয়া পলাশ, জাবি থেকে: চতুর্মুখী আন্দোলনে অচল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। একদিকে সাধারণ শিক্ষার্থী। অন্যদিকে শিক্ষক সমাজ। অপরদিকে ভিসিপন্থি শিক্ষক গ্রুপ। আরেকদিকে ভিসিপন্থি ছাত্রলীগ। সবাই পৃথক কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে। এতে করে বন্ধ রয়েছে ক্লাস-পরীক্ষাসহ একাডেমিক কার্যক্রম। দাবি আদায়  পৃষ্ঠা ২০ কলাম ৩
 না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনসহ প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও কর্মসূচি দিয়েছে শিক্ষক সমাজ। অবিলম্বে দাবি বাস্তবায়ন না হলে চলমান কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি কঠিন আন্দোলনের ঘোষণা দিবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা আজ সন্ধ্যায় মশাল মিছিল করার ঘোষণা দিয়েছে। ভিসিপন্থি শিক্ষক এবং ছাত্রলীগের অংশটি ক্লাস পরীক্ষা চালুর পক্ষে আন্দোলনে নেমেছে।
জুবায়ের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, প্রক্টর ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের অপসারণ, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এএ মামুনকে লাঞ্ছনাকারীদের বিচার এবং গণ-নিয়োগের মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া দলীয় অযোগ্য শিক্ষকদের বরখাস্তের দাবি জানিয়েছে  শিক্ষক সমাজ এবং “সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর” ব্যানারে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা গতকাল ক্লাস বর্জন, মৌন মিছিল, সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে। শিক্ষার্থীরা আজ থেকে আন্দোলনের পাশাপাশি ক্লাস শুরু করার ঘোষণা দিলেও শিক্ষকরা অনড়। তারা জানিয়েছেন, একজন শিক্ষার্থীকে হত্যার পর আমরা যেসব দাবি নিয়ে মাঠে নেমেছি গত ৬ দিনেও এসবের প্রতি কোন আন্তরিকতা দেখায়নি প্রশাসন। ভিসি অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবিরের একগুঁয়েমি এবং ভিসির মদতপুষ্ট ২০-২৫ জন শিক্ষকের কারণে  বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে আমাদের দাবি না মানলে আমরা ভিসি অপসারণের আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব। গতকাল ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে ভিসিকে স্মারকলিপি দিয়েছে শিক্ষক সমাজ। তারা আগামীকাল সকাল ১০টায় ভিসি অফিস ঘেরাও কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে। আন্দোলন চালিয়ে নেয়ার জন্য সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক নাসিম আখতার হোসাইনকে সমন্বয়কারী করে একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যদের মধ্যে অধ্যাপক এমএ মতিন, মজিবর রহমান, এটিএম আতিকুর রহমান, শামছুল আলম সেলিম, আনোয়ারুল্লাহ ভুঁইয়া, মানস চৌধুরী, সহযোগী অধ্যাপক জামাল উদ্দিন রুনু, মাফরুহী সাত্তার টিটু ও সহকারী অধ্যাপক মজিবুল আনাম লাবিব। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবির, প্রক্টর অধ্যাপক আরজু মিয়া এবং প্রক্টরিয়াল বডির অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনেছেন আন্দোলনকারীরা।
ওদিকে গতকাল ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’র ব্যানারে প্রফেসর আবুল খায়ের, আবুল হোসেন, এসএম বদিয়ার রহমান, আবদুল মান্নান চৌধুরী, আরজু মিয়া, এএসএম আবু দায়েনসহ ভিসিপন্থি  শিক্ষকরা মৌন মিছিল ও সমাবেশ করেছেন। তারা বলেন, শিক্ষক সমিতির সভাপতিকে লাঞ্ছিত করা হয়নি। প্রশাসনের বিরুদ্ধে একটি মহল নানা অপপ্রচারে লিপ্ত। যে কোন মূল্যে তাদের রোখা হবে। তারা সবাইকে একাডেমিক কার্যক্রমে অংশ নেয়ার আহ্বান জানান। তারা জানান, জুবায়ের হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য প্রশাসন আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।
গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশের সামনে শিক্ষার্থীদের সমাবেশে ৩৫তম ব্যাচের মৈত্রী বর্মণ বলেন ‘ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের নাম সবাই জানে। ভিসির কাছে হত্যাকারীদের তালিকা দেয়া হয়েছে। অজ্ঞাত কারণে ভিসি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা সন্ত্রাসী হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়নি। টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি এবং দলীয় লেজুড়বৃত্তিসহ নানা কারণে তারা সন্ত্রাসী হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এদের মদত দেয়া হচ্ছে। হত্যাকাণ্ডের ৬ দিন পরও সন্ত্রাসীরা ক্যাম্পাসে ঘুরছে। সাধারণ ছাত্ররা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত করবে। ৩৮তম ব্যাচের জাহিদুল ইসলাম জিন্নাহ জানান, ৪ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ৩৬তম ব্যাচের আফিফা রাজ্জাক মুনা, ৩৭তম ব্যাচের আর্ক রহমান, মেহেদী উল্লাহ প্রমুখ।
শহীদ মিনারের পাদদেশে শিক্ষক সমাজের  সমাবেশে অধ্যাপক এমএ মতিন বলেন, ভিসি অগণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতায় থাকার জন্যই সন্ত্রাসীদের লালন করছেন। অধ্যাপক একেএম শাহনেওয়াজ বলেন, বিশেষ গোষ্ঠীর অধীনে চাকরি করে শিক্ষকদের নৈতিক স্খলন চরম মাত্রায় পৌঁছেছে। এখন আর শিক্ষক সুলভ আচরণ করে না। সহযোগী অধ্যাপক জামাল উদ্দিন রুনু বলেন ভিসি শিক্ষক নিয়োগের নামে গুণ্ডা-পাণ্ডা নিয়োগ দিয়ে শিক্ষাঙ্গনকে কলুষিত করেছেন। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক এএ মামুন, সাধারণ সম্পাদক ড. মো. শরিফ উদ্দিন, অধ্যাপক নাসিম আখতার হোসাইন, অধ্যাপক শামছুল আলম সেলিম, অধ্যাপক এটিএম আতিকুর রহমান প্রমুখ।
এদিকে শিক্ষক সমিতির সভাপতি’র ওপর হামলাকারীদের বিচার ও জুবায়ের হত্যার সঙ্গে জড়িত সব ছাত্রলীগ কর্মীকে অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবিতে সাভারে ছাত্রদল এবং ঢাকায় জাতীয়তাবাদী গ্রাজুয়েট ফোরামের পক্ষ থেকে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়েছে। সমাবেশে ছাত্রদলের জাবি শাখার সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, আমরা আজ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হওয়ায় ক্যাম্পাসে যেতে পারি না। তাই ক্যাম্পাসের বাইরে থেকেই জুবায়ের হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে বিচার দাবি করছি। একই দাবিতে মৌন মিছিল ও ক্লাস বর্জন কর্মসূচি পালন করেছে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
আরও ১ কর্মী গ্রেপ্তার: জুবায়ের হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গতকাল ছাত্রলীগ কর্মী নাজমুস সাকিব তপুকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। এ নিয়ে ৩ ছাত্রলীগ কর্মী গেপ্তার হলো। এর আগে একই অভিযোগে সোমবার আশিক ও বৃহস্পতিবার মাহবুব আকরামকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তদন্ত চলছে: জুবায়ের হত্যার ঘটনায় আটক হওয়া ৩ ছাত্রকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে বলে জানিয়েছেন আশুলিয়া থানার ওসি এসএম বদরুল আলম। তিনি জানান, ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে গ্রেপ্তার হওয়া আশিক। তার কাছ থেকে আরও ৬ ছাত্রের নাম জানা গেছে। তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম জানানো যাচ্ছে না। আইনের আওতায় আনতে তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। ঘটনার তদন্তে গঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটিও কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন কমিটির সদস্য প্রক্টর আরজু মিয়া।
প্রক্টরিয়াল বডিতে কারা: প্রক্টর অধ্যাপক আরজু মিয়াসহ ৯ সদস্যের প্রক্টরিয়াল বড়ির ৭ জনের বিরুদ্ধেই রয়েছে নানা অভিযোগ। ৪ জনই ছিলেন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী। অভিযোগ রয়েছে, প্রক্টর হওয়ার পর থেকেই আরজু মিয়া ভিসিপন্থি ছাত্রলীগকে দিয়ে ভিন্ন মতের ছাত্রদের দমন করে আসছেন। এখন পর্যন্ত প্রায় দু’শ’ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করছে। তারা বিভিন্ন সময় প্রক্টরের কাছে সহাবস্থানের দাবি জানালেও তিনি এতে কর্ণপাত করেননি। বিদ্যুতের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করলে প্রক্টর ক্যাম্পাসে ভিসি লীগ নামে পরিচিত ছাত্রদের ব্যবহার করে আন্দোলনরত  শিক্ষার্থীদের মারধর করে। জুবায়ের হত্যার বিষয়ে প্রক্টর তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন বলে অভিযোগ করছেন সাধারণ শিক্ষকরা। সর্বশেষ গত ১২ই জানুয়ারি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এএ মামুনের গায়ে হাত তুলে তাকে লাঞ্ছিত করেন প্রক্টর। এ কারণে সবমহল থেকেই তার পদত্যাগের দাবি উঠেছে। তিনি এ ব্যাপারে বলেন, আমি সাফল্যের সঙ্গে ৩ বছর প্রক্টরের দায়িত্ব পালন করছি। এখন পদত্যাগের প্রশ্নই আসে না।
সহকারী প্রক্টরদের মধ্যে সুবিধাবাদী শিক্ষক হিসেবে পরিচিত কবিরুল বাশার। ২০০৫ সালে বিএনপির সময় নিয়োগ পাওয়া এই শিক্ষক বর্তমান প্রশাসনের কাছ থেকে সুবিধা হাতিয়ে নিতে যোগ দেন ভিসির সঙ্গে। পুরস্কার হিসেবে বর্তমান উপাচার্য তাকে সহকারী প্রক্টরের দায়িত্ব দেন।
সহকারী প্রক্টর সাব্বির আলম মীর মশাররফ হোসেন হলের ছাত্রলীগ কর্মী ছিলেন। ২০০৯ সালের মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রীতম-সাব্বির গ্রুপের নেতৃত্বে ছিলেন এই সাব্বির। সে সময় হল দখলের জন্য একাধিক হামলা ও সশস্ত্র সংঘর্ষের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। আ স ম  ফিরোজ-উল-হাসান ৩ মাস আগে মেডিকেল প্রশ্নপত্র জালিয়াতির অভিযোগে রাজধানীর শ্যামলীতে র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। জামিনে বের হয়ে এখনও তিনি সহকারী প্রক্টর পদে দায়িত্ব পালন করছেন। তার বিরুদ্ধে ওই  মামলা এখনও অব্যাহত রয়েছে। ক্যাম্পাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ও মারমুখী ছাত্রলীগের ক্যাডার বাহিনীর আবাসস্থল রফিক-জব্বার হলের ছাত্রলীগ তিনিই পরিচালনা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ছাত্রদের কাছে নিজের দাপট দেখাতে বেশ পটু আরেক সহকারী প্রক্টর মুহাম্মদ ছায়েদুর রহমান। তার বিরদ্ধে লোকপ্রশাসন বিভাগে ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক সম্মান শ্রেণীর চূড়ান্ত পরীক্ষায় ফলাফল জালিয়াতির অভিযোগ কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়। কিন্তু সহকারী প্রক্টর এক সময়ের ছাত্রলীগ কর্মী হওয়ায় প্রশাসন কোন তদন্ত কমিটি গঠন করেনি। আরেক সহকারী প্রক্টর কামাল হোসেনও ছাত্রলীগের রাজনীতি করতেন। শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার কিছুদিন পর বঙ্গবন্ধু হলের লন্ড্রিবয়ের সঙ্গে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটান। পরে তিনি এর জন্য ক্ষমাও চান। তার স্ত্রী একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিসংখ্যান বিভাগে পাস করেছেন। কিন্তু তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে জাবি স্কুল অ্যান্ড কলেজের কম্পিউটার বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে। কামালের বিরুদ্ধে রয়েছে ভিসি অফিসের কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ। ভিসির ভাগ্নে বউ হওয়ার কারণেই সেলিনা আক্তার নিয়োগ পেয়েছেন শিক্ষক হিসাবে। একই কারণে তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে সহকারী প্রক্টর হিসাবে। এ ব্যাপারে অধ্যাপক নাসিম আক্তর হোসাইন বলেন, ভিসি অনির্বাচিত ভাবে ক্ষমতায় থাকতে শিক্ষার্থীদের পেটানোর জন্য তৈরি করেছেন বিশেষ বাহিনী। তেমনি শিক্ষকদের পেটানোর জন্য তৈরি করেছেন প্রক্টরিয়াল বাহিনী।
ভিসির বিরুদ্ধে যত অভিযোগ: ভিসি অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবিরের বিরুদ্ধে রয়েছে এন্তার অভিযোগ। ২০০৮ সালের ২৪শে  ফেব্রুয়ারি ভিসি নিযুক্ত হওয়ার পর তিন বছরের মধ্যে তিনি দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ দিয়েছেন প্রায় ২০০ শিক্ষক। ক্যাম্পাস চালাতে তিনি নিজের অধীনস্ত ছাত্রলীগ কর্মীদের দিয়ে গঠন করেছেন গোপালগঞ্জ-নির্ভর বিশেষ বাহিনী। এদেরকে তিনি ছাত্রলীগ নাম দিলেও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সঙ্গে এদের কোন যোগাযোগ নেই। ভিসির বিমাতাসুলভ আচরণের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকসহ ছাত্রলীগের অনেকেই ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারছে না বলে অভিযোগ ছাত্রলীগের। দায়িত্ব পাওয়ার ৩ বছর পার হলেও ভিসি পদে নির্বাচন না দিয়ে অগণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতায় রয়েছেন তিনি। জুবায়ের হত্যাসহ ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপে অর্ধশতাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ভিসি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতিকেও নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখার বিভিন্ন সময়ে চেষ্টা চালিয়েছেন। ২০১২ সালের সাংবাদিক সমিতির নির্বাচনে তফসিল ঘোষণার পরও নির্বাচন স্থগিত হয়েছে ভিসির হস্তক্ষেপে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে গতকাল দুপুরে তার দপ্তরে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করা হয়। তিনি কথা বলতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন।
জাবি ছাত্র যুুবায়ের হত্যার
বিচার দাবি
বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার জানান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থী যুবায়ের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সব খুনির বিচার, খুনিদের মদদদাতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ ভিসি ও প্রক্টরের অপসারণ দাবি করেছেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা। গতকাল  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা এসব দাবি করেন। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলারও প্রতিবাদ জানান। এ সময় বক্তারা বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বছরের শুরুতেই ছাত্রলীগ বেপরোয়া ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করেছে। মধ্যযুগীয় কায়দায় তারা সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ওপর হামলা চালিয়ে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। অন্যদিকে দলীয় প্রশাসনের স্বেচ্ছাচারি ভূমিকার ফলে ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশের অনুপস্থিতি দিন দিন প্রকট হয়ে উঠছে। তারা আরও অভিযোগ করেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবীর ক্যাম্পাসে সহাবস্থান বজায় না রেখে নিজের নামে দলীয় অনুগত বাহিনীর মাধ্যমে ক্যাম্পাসে একক আধিপত্য বজায় রেখেছেন। বক্তারা এ সময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা উন্নয়ন ফি প্রত্যাহারের অংশ হিসেবে ব্যাংক অবরোধ কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদ ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন। এছাড়া খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) ও রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতা-কর্মীদের ওপর হামালার শাস্তি দাবি করেন তারা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এস এম শুভ। সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষে মোট ৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে ১৭ই জানুয়ারি সারা দেশে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাস-দখলাদিরত্বের বিরুদ্ধে এবং ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ এবং কেন্দ্রীয়ভাবে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের উদ্যোগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও চ্যান্সেলর বরাবর স্মারকলিপি পেশ। ২১শে জানুয়ারি অবিলম্বে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে ভিসি/অধ্যক্ষ বরাবর স্মারকলিপি এবং ৩০শে জানুয়ারি ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে ছাত্র সংগঠন ও ছাত্র সংসদের সাবেক নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ফেরদৌস আহমেদ উজ্জল, কেন্দ্রীয় সহসভাপতি আবু তোয়াব অপু, মীর মোশাররফ হোসেন, কোষাধ্যক্ষ মনজুর মঈন, আরিফুল ইসলাম নাদিম, রেজাউল করিম খোকন ।
কলাপাড়ায় মানববন্ধন ও
প্রতিবাদ সমাবেশ
কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, ছাত্রলীগের নির্মম নির্যাতনে নিহত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি শেষবর্ষের ছাত্র জুবায়ের আহমেদ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় গতকাল শোকর‌্যালি, মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিকালে শিশু কিশোর সংগঠন মানিকমালা খেলাঘর আসরের স্থানীয় শাখার উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালিত হয়। শিশুপার্ক সংলগ্ন সংগঠনের কার্যালয় থেকে বের হয়ে শোকর‌্যালিটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে নতুন বাজার এলাকার মনোহরি পট্টিতে এসে শেষ হয়। এরপর বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ।
মানিকমালা খেলাঘর আসরের সহসভানেত্রী ও খেপুপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মনোয়ারা বেগমের সভাপতিত্বে ওই প্রতিবাদ সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কলাপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোস্তাফিজুর রহমান, খেলাঘর জাতীয় পরিষদের সদস্য কমরেড নাসির তালুকদার, কলাপাড়া উপজেলার মানিকমালা খেলাঘর আসরের সাধারণ সম্পাদক মো. হেমায়েত উদ্দিন লিটন, সাংগঠনিক সম্পাদক ও আমিরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শাহ সুজা, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক তুষার কান্তি হাওলাদার প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ।
কলাপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোস্তাফিজুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, ‘একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির মদদপুষ্ট ছাত্ররা এমন ঘটনা ঘটাতে পারে, গণতান্ত্রিক দেশে এটা কোনভাবেই কাম্য নয়। আমরা দায়ী ভিসির বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি।’

No comments

Powered by Blogger.