সূচক লেনদেন সবই কমেছে

টানা চার সপ্তাহ ঊর্ধ্বমুখী ধারায় থাকার পর গত সপ্তাহে দেশের উভয় শেয়ারবাজারে ছিল সার্বিক নিম্নমুখী ধারা। বাজারে লেনদেন হওয়া প্রায় সব শেয়ারের দর কমার পাশাপাশি ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক কমেছে প্রায় সাড়ে ৬ শতাংশ এবং সিএসইর প্রধান সূচক কমেছে ৫ শতাংশেরও বেশি। ডিএসইর দৈনিক গড় লেনদেন এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি কমেছে।


দীর্ঘ দরপতনের ধারা থেকে বের হয়ে পরপর চার সপ্তাহ বাজারে ঊর্ধ্বমুখী ধারা বজায় থাকায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা আশার সঞ্চার হয়েছিল। তবে গত সপ্তাহের দরপতনে কিছুটা আশাহত তারা। বাজার সংশ্লিষ্ট ও বিশ্লেষকরা জানান, বেশ কিছুদিন ধরে প্রায় প্রতিটি শেয়ারের দর বাড়ার পর প্রথম দু'দিনের শেয়ার দর কমার প্রবণতা ছিল স্বাভাবিক; কিন্তু মুদ্রানীতি নিয়ে গুজবে বাজারে টানা দরপতনকে যৌক্তিক বলে মানছেন না বাজার বিশ্লেষকরা।
ডিএসইতে গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া ২৭০টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে মাত্র ১৯টির দর বেড়েছে, কমেছে ২৪৭টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ৪টি। সাধারণ মূল্যসূচক আগের সপ্তাহের তুলনায় ৩৫২ পয়েন্ট বা ৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ কমে ৫১১৪ পয়েন্টে নেমে এসেছে। সপ্তাহজুড়ে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকার শেয়ার, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় ১ হাজার ১৬৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা কম।
অন্য শেয়ারবাজার সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২১৫টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে মাত্র সাতটির দর বেড়েছে, কমেছে ২০২টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ৬টি। নির্বাচিত খাত সূচক আগের সপ্তাহের তুলনায় ৫০৬ পয়েন্ট বা ৫ দশমিক ১১ শতাংশ কমে ৯৩৯৫ পয়েন্টে নেমে এসেছে। সপ্তাহজুড়ে ২৩৬ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় ৭৭ কোটি ৬১ লাখ টাকা কম।
ডিএসইর লেনদেন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সার্বিক নেতিবাচক প্রবণতার কারণে গত সপ্তাহে প্রতিটি খাতের সার্বিক শেয়ার দর কমেছে। ক্লোজিং প্রাইসের হিসাবে ব্যাংকিং খাতের সর্বাধিক ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ দর কমেছে। এর পরের অবস্থানে সেবা ও নির্মাণ খাতের ৪ দশমিক ৭৯, জ্বালানি ও শক্তি খাতের ৪ দশমিক ৪৯, তথ্য ও প্রযুক্তি খাতের ৪ দশমিক ৪৬, ব্যাংক ও আর্থিক খাতের ৪ দশমিক ৩৮, সিমেন্ট খাতের ৪ দশমিক ৩৫ এবং সিরামিক্স খাতের ৪ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ দর কমার হার ছিল উল্লেখযোগ্য।
সব বড় খাতের সার্বিক শেয়ার দর উল্লেখযোগ্য হারে কমলেও এর বিপরীতে সামান্য টেলিযোগাযোগ খাতের গ্রামীণফোনের শেয়ার দর কমেছে মাত্র দশমিক ১১ শতাংশ। বস্ত্র খাতের সার্বিক শেয়ার দর কমেছে ১ দশমিক ৫০ এবং বীমা খাতের কমেছে ১ দশমিক ৬০ শতাংশ।
একক কোম্পানি হিসেবে ডিএসইতে 'এ' ক্যাটাগরির মোট ১৩টির দর বাড়লেও 'বি', 'এন' ও 'জেড' গ্রুপের মাত্র ছয়টি শেয়ারের দর বেড়েছে। তবে সিএসইতে দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০ তালিকা পূর্ণ করাই সম্ভব হয়নি। কারণ দেশের দ্বিতীয় এ শেয়ারবাজারে গত সপ্তাহে মাত্র সাতটি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের দর বেড়েছে। ক্লোজিং প্রাইসের হিসাবে ডিএসইতে দর হ্রাসের শীর্ষে থাকা মেঘনা পেট্রোলিয়ামের সাড়ে ২৯ শতাংশ শেয়ার দর কমলেও দর বৃদ্ধি পাওয়া শীর্ষ কোম্পানি স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক্সের বেড়েছে ৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
সার্বিক লেনদেনের পরিমাণ কমায় সব খাতেরই লেনদেন কমেছে। তবে লেনদেনের হারে ছিল মিশ্র অবস্থা। ব্যাংক, ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক খাত, জ্বালানি ও শক্তি, সিমেন্ট, সিরামিক্স, তথ্য ও প্রযুক্তি, চামড়া, সেবা ও নির্মাণ খাতের লেনদেন হার কমলেও বীমা, প্রকৌশল, ওষুধ ও রসায়ন, বস্ত্র, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক, টেলিযোগাযোগ ও বিবিধ খাতের লেনদেন বেড়েছে।
গত সপ্তাহে ডিএসইতে গ্রামীণফোনের সর্বাধিক ১০৩ কোটি ৭১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়। এর পরের অবস্থানে ছিল ন্যাশনাল ব্যাংক, আরএন স্পিনিং, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ, বিকন ফার্মা, বেক্সিমকো লিমিটেড, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফু-ওয়াং সিরামিক্স, আফতাব অটোমোবাইলস ও কেয়া কসমেটিক্স।

No comments

Powered by Blogger.