৩-০-এর দিকে ধাবমান অস্ট্রেলিয়া

ডেভিড হুকস কি কাল স্বর্গ থেকে বসে চোখ রাখছিলেন পার্থ টেস্টের ওপর? এক দিনেই শেষ হয়ে যাবে টেস্ট—২০০৩ সালে বাংলাদেশের অস্ট্রেলিয়া সফরের সময় এমন মন্তব্য করে আলোচিত হয়েছিলেন। এ নিয়ে অনেক কথাও হয়েছে, হুকসকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেছিল বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং।


তবে ২০০৪ সাল থেকে স্বর্গবাসী এই সাবেক অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানের জন্য তৃপ্তির একটা দিন হয়ে এসেছিল কাল। টেস্টের দ্বিতীয় দিনের মাথায়ই যে হারতে বসেছিল ভারত!
একসময় সেই সম্ভাবনা বা শঙ্কা জেগেছিল বটে। রানের খাতা খোলার আগেই বিষণ্ন বদনে ক্লান্ত পায়ে যখন সাজঘরে ফিরলেন ভিভিএস লক্ষ্মণ, ভারতের চতুর্থ উইকেটের পতন মাত্র ৫১ রানে। দিনের খেলা তখন ১৩ ওভার বাকি। স্টার্ক-হিলফেনহস-সিডলের গতি আর সুইংয়ে ভারত তখন দিশেহারা। মাত্রই কিছুদিন আগে টেস্টের এক নম্বর দলের মুকুটধারী ভারতের জন্য দুই দিনে টেস্ট পরাজয় কি এক দিনে হেরে যাওয়ার চেয়ে কম লজ্জার!
না, শেষ পর্যন্ত সেই কেলেঙ্কারি হয়নি। তবে আজ তৃতীয় দিনের কতটা ভারত টেনে নিয়ে যেতে পারে, সেটাই এখন দেখার। বিরাট কোহলিকে নিয়ে রাহুল দ্রাবিড় একটা ‘দেয়াল’ গড়েছেন। তার পরও এখনো অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসের চেয়ে ১২০ রানে পিছিয়ে ভারত। হাতে ছয় উইকেট। সিরিজটা অস্ট্রেলিয়া ৩-০ করে ফেলল প্রায়!
চা-বিরতির পর যখন সদলবলে মাঠে নামলেন মাইকেল ক্লার্ক, তাঁর চোখেমুখে তৃপ্তি-অতৃপ্তির আলো-ছায়া দুটোই ছিল। তৃপ্তি ২০৮ রানের লিড পাওয়া। অতৃপ্তি, লিডটাকে আরও বড় করতে না পারা। উদ্বোধনী জুটিতেই ২১৪ রান তোলার পরও অস্ট্রেলিয়াকে ৩৬৯ রানে আটকে ফেলতে পেরেছে ভারত। মূল কৃতিত্ব ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ৫ উইকেট নেওয়া উমেশ যাদবের।
নিজের টানা চার ওভারে যাদব ফিরিয়েছেন এড কাওয়ান, শন মার্শ আর রিকি পন্টিংকে। একটা উইকেটের জন্য ভারত তখন চাতক পাখির মতো তাকিয়ে, কোনো উইকেট না হারিয়েই অস্ট্রেলিয়া ততক্ষণে ৫৩ রানের লিড পেয়ে গেছে। প্রথম উইকেটেই এত বড় লিড পাওয়ার উদাহরণ টেস্ট ইতিহাসেই আছে মাত্র ১০টি। সেই সময় যাদবের ওই আঘাত। ২৮ রানের মধ্যে তিন উইকেট হারিয়ে হুট করে অস্ট্রেলিয়া হয়ে গেল ৩ উইকেটে ২৪২।
বাকি দুটো উইকেট যাদব পেয়েছেন শেষের দিকে। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করেছেন ফিল্ডার হিসেবে। ওয়ার্নার তখনো ছিলেন। ছিলেন নিজের মতো। ১৫০ এসেছে ১২৮ বলে। দ্বিতীয় সেঞ্চুরিটাকেই ‘ডাবল’ বানিয়ে ফেলা যখন মনে হচ্ছিল সময়ের ব্যাপার, ২০ রান দূরে থাকতে ইশান্ত শর্মাকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অনে তালুবন্দী যাদবের হাতে। ওয়ার্নারের বিদায়ের পর আর বেশি কিছু করতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। ৭৯ রানে তারা হারিয়েছে শেষ ৭ উইকেট!
তার পরও ২০৮ রানের লিড অনেক বড়। এত বড় লিড নিয়ে পার্থে ম্যাচ না জেতার উদাহরণ আছে একটিই, সেটিও মার্ক গ্রেটব্যাচ ৬৫৫ মিনিট লম্বা এক দুঃসাহসিক ইনিংস খেলেছিলেন বলে। দ্রাবিড় আজ ‘গ্রেটব্যাচ’ হয়ে উঠলেও এই ম্যাচ বাঁচাতে পারবেন কি না সন্দেহ!

No comments

Powered by Blogger.