পাহাড়ি সড়ক থেকে গভীর খাদে বাস, নিহত ১৭

বান্দরবানের থানচিতে গতকাল শনিবার সড়ক দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও অন্তত ২৭ জন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সকাল সাড়ে আটটার দিকে জেলা সদর থেকে প্রায় ৭৪ কিলোমিটার দূরে শিলাঝিরির উঁচু পাহাড়ি সড়ক থেকে নামার সময় একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গভীর খাদে পড়ে যায়। পাহাড়িকা নামের ছোট আকৃতির বাসটি অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে থানচি উপজেলা সদর থেকে বান্দরবান জেলা শহরের দিকে যাচ্ছিল।


শিলাঝিরির পাশের কমলাবাগান পাড়ার কার্বারি (পাড়াপ্রধান) গুরিকালা চাকমা ও থানচির সাংবাদিক মংবোয়াচিং মারমা জানান, বাসটি প্রায় ৩০০ ফুট উঁচু পাহাড় থেকে গড়িয়ে ঝিরি বা পাহাড়ি ছড়ায় পড়ে যায়।
গুরিকালা চাকমা বলেন, ঘটনাস্থল থেকে লোকালয় কিছুটা দূরে হওয়ায় উদ্ধার তৎপরতা শুরু করতে সময় লেগে যায়। এ সময় আহত ব্যক্তিদের আর্তচিৎকারে শিলাঝিরি এলাকায় এক হূদয়বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
স্থানীয় লোকজন জানান, খবর পেয়েই সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ সদস্য এবং স্থানীয় জনতা ঘটনাস্থলে ছুটে এসে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেন।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) বলীপাড়া ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক নূরুল মোমেন চৌধুরী বলেন, ঘটনাস্থল থেকে ১৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আহত ৩১ জনকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। তিনি বলেন, বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর দুর্ঘটনাস্থল থেকে কাছে হওয়ায় উদ্ধার তৎপরতা চালানো এবং আহত ব্যক্তিদের দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো সম্ভব হয়েছে।
বান্দরবান সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাহাম্মুল হক বলেন, দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে চারজন মারা গেছে হাসপাতালে। তিনি জানান, গুরুতর আহত ১৪ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
উহ্লাচিং মারমা (৬১), তাঁর মেয়ে কিকিনু (সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী), সুশান্ত ত্রিপুরা, কান্তি ত্রিপুরা, মাসাথুই মারমা (১১), অংহ্লাপ্রু মারমা (৬০), রিন্টু চাকমা, মংচিংসা মারমা, মংহ্লাচিং মারমা ঘটনাস্থলে নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া চার পর্যটক ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান। হাসপাতাল ও বিজিবি সূত্রমতে তাঁরা হলেন, চাঁদপুরের রাজীব চৌধুরী, হাসান ও তরিকুল আলম ওরফে সুজন এবং ঢাকার ঝিগাতলার তানভীর রেজোয়ান ওরফে মুগ্ধ।
বান্দরবান সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ঢাকার পর্যটক মাইনুল বলেন, দুর্ঘটনার পর তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। উদ্ধার তৎপরতা চলার সময় জ্ঞান ফেরার পর দেখেন বন্ধু তানভীর রেজোয়ানকে সংকটজনক অবস্থায় গাড়ির ভেতর থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তারপর তাঁকে কোথায় ও কী অবস্থায় রাখা হয়েছে, তা তিনি জানেন না। তবে হাসপাতালে তানভীর রেজোয়ান নামের আহত কাউকে পাওয়া যায়নি।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, জ্যাকব ত্রিপুরা, নূরুল ইসলাম, সমুদত্ত বড়ুয়া ও বেলুয়ার বড়ুয়া হাসপাতালে মারা যান।
গুরুতর আহত গঙ্গাচন্দ্র ত্রিপুরা, রিরংমা মারমা, সাক্কই ম্রো, মেসাং মারমা, নবম শ্রেণী ছাত্রী ডচিংনু মারমা, থুইঅংমা মারমা, গাড়ির চালক সুভাষ দাশ, পর্যটক সালেহীন, অংচিংম্যা মারমা, পর্যটক নূরুল হুদা, শাহাবুদ্দিন ও অজ্ঞাতপরিচয় তিনজনসহ ১৪ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আহত অন্যদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে নিহত ১৩ জনের লাশ বান্দরবান সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
থানচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নেয়ামতুল করিম পাটোয়ারী জানান, নিহত পর্যটকদের বিস্তারিত পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে।

No comments

Powered by Blogger.