আগামী নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণে হবে আশা যুক্তরাজ্যের

স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ও সব দলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করে যুক্তরাজ্য। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতে    পৃষ্ঠা ১৭ কলাম ৪
যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন মন্ত্রী অ্যান্ড্রু মিশেল এ কথা জানিয়েছেন। গতকাল সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন অ্যান্ড্রু মিশেল। বৈঠকের পর আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে গণমাধ্যমে দেয়া ব্রিফিংয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী বৃটিশ মন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে আলোচনায় অ্যান্ড্রু মিশেল বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগ হ্রাস পাওয়ায় তার উদ্বেগ জানিয়েছেন। বলেছেন, যেখানে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়, সেখানে বিদেশী বিনিয়োগে অসুবিধা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগ হ্রাস পেয়েছে, এটা উদ্বেগজনক। বৃটিশ মন্ত্রী বিরোধীদলীয় নেতাকে বলেছেন, বাংলাদেশে দু’বছরের মধ্যে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে বলে আশা করে তার দেশ। শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, বৈঠকে বৃটিশ অর্থনৈতিক উন্নয়ন সহায়তার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। মন্ত্রী জানিয়েছেন, বর্তমানে বৃটিশ উন্নয়ন সহায়তা বেড়েছে। আগামীতে এ সহায়তা আরও বাড়বে। যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের স্কলারশিপ বৃদ্ধি ও ছাত্র-ছাত্রীদের ভিসা জটিলতার সহজীকরণের জন্য বৃটিশ মন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন বিরোধীদলীয় এ নেতা। সে সঙ্গে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের কাছে শুভেচ্ছা পৌঁছে দেয়ার জন্য অ্যান্ড্রু মিশেলের প্রতি অনুরোধ জানান। অ্যান্ড্রু মিশেল বলেছেন, বাংলাদেশের বৃটিশ উন্নয়ন সহায়তা, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, সুুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান, রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আগামীকাল সংবাদ সম্মেলনে সফরের বিস্তারিত তুলে ধরবেন বলে জানিয়েছেন। সাক্ষাৎকালে ঢাকাস্থ বৃটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন, বিএনপির সহসভাপতি শমসের মবিন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক হাইকমিশনার সাবিহ উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। এদিকে গতকাল বৃটিশ হাই কমিশনের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
তিনদিনের সফরে গতকাল ঢাকায় আসেন বৃটিশ উন্নয়ন মন্ত্রী। বাংলাদেশে এটি তার প্রথম সফর। এর আগে ২০১০ সালে যুক্তরাজ্যের ওই দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী অ্যালান ডানকান বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। ঢাকা সফরকালে বৃটিশ উন্নয়নমন্ত্রী বাংলাদেশে ডিএফআইডি সহায়তায় পরিচালিত কার্যক্রম পরিদর্শন করবেন। ডিএফআইডি বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ, সামাজিক সেবা প্রদানে সরকারের সক্ষমতা বৃদ্ধি, বেশিসংখ্যক শিশুকে উন্নত স্কুলে শিক্ষার ব্যবস্থা এবং পরিবার পরিকল্পনার উন্নয়ন ও মাতৃমৃত্যু হার কমানোকে অগ্রাধিকার দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করে। ২০১৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বছরে গড়ে ২৫ কোটি ডলার ব্যয় করবে ডিএফআইডি। অ্যান্ড্রু মিশেল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপুমনির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
সফরকালে তিনি বাংলাদেশে বৃটেনের সাহায্যে পরিচালিত প্রকল্পে অর্থ ব্যয়ে স্বচ্ছতা এবং বৈশ্বিক দারিদ্র্য বিমোচনে তার সরকারের নেয়া পদক্ষেপগুলো ঘুরে দেখবেন। রাজনৈতিক নেতৃত্ব, বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা, উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলবেন তিনি। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের অংশীদারিত্ব, এ দেশের রাজনীতি, শাসনব্যবস্থা, অর্থনীতি এবং উন্নয়ন প্রবৃদ্ধি ও সম্ভাবনা নিয়ে তার অভিমত তুলে ধরবেন। হাইকমিশন জানিয়েছে, যুক্তরাজ্য তার আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ডিএফআইডির মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়নে সহায়তা দিয়ে আসছে। আগামী তিন বছরে দেশটি বাংলাদেশকে সাহায্যের জন্য যে পরিকল্পনা নিয়েছে তার মধ্যে রয়েছে- ৫০ লাখ চরম দরিদ্রের অবস্থার উন্নয়ন, ১২ লাখ প্রসূতির নিরাপদ প্রসব ও সেবার ব্যবস্থা, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৫ লাখ শিশুর শিক্ষা সমাপনীর নিশ্চয়তা এবং ১২ লাখ মানুষের জন্য নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করা। ঢাকা সফরের প্রাক্কালে অ্যান্ড্রু মিশেল এক বিবৃতিতে বলেছেন, সাহায্যের অর্থ সঠিকভাবে ব্যয় হলে মানুষের জীবন বদলে যায়। বৃটিশ অর্থে বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবন কিভাবে বদলে যাচ্ছে তা দেখার জন্য বাংলাদেশ সফরের সুযোগ পেয়ে তিনি আনন্দিত বলেও জানান। এ দেশের দারিদ্র্য বিমোচন এবং জীবনমানের উন্নয়নে তার সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ বলে জানান বৃটিশ উন্নয়নমন্ত্রী।

No comments

Powered by Blogger.