একজন নিকোলাস কেজ by প্লাবন ইমদাদ

মাত্র ৩২ বছর বয়সে অস্কার জয় করে রেকর্ড গড়েছেন ছবির ইতিহাসে। তাঁকে নিয়ে লিখেছেন প্লাবন ইমদাদ
পারিবারিক হিসাব কষে তাঁকে মজা করে প্রায়ই বলা হয় যে তিনি অর্ধ-জার্মান অর্ধ-ইতালিয়ান। কেননা জার্মান মা আর ইতালি বাবার ঘরেই কেজের জন্ম। সাহিত্যের অধ্যাপক বাবা আর ফ্যাশন ডিজাইনার মায়ের ছেলে বলেই হয়তো সৃজনশীলতার জগতে পদার্পণ। পরিচালক মামা ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলার ভাগ্নে পরিচয়ে পরিচিত হওয়ার বদলে নিজ


পরিচয়ে সমুজ্জ্বল হওয়ার জন্যই তিনি নাম পরিবর্তন করে হয়ে যান নিকোলাস কেজ। মজার কমিকভক্ত হওয়ায় নিজের নামের 'কেজ' অংশটি তিনি গ্রহণ করেন একটি কমিক বইয়ের চরিত্র থেকে। তাঁর অন্য দুই ভাইও কিন্তু তাঁদের নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে সমুজ্জ্বল। এক ভাই পরিচালক ক্রিস্টফার কপোলা আরেকজন রেডিও ব্যক্তিত্ব কোপ কপোলা। মঞ্চে অভিনয়ের মাধ্যমে অভিনয় শুরু করলেও ১৯৮০ সালে প্রথম চলচ্চিত্রে পদার্পণ। হাঁটিহাঁটি পা-পা করে আজকের নিকোলাস কেজ। অভিনয়ের প্রতি বরাবরই প্রচণ্ড দায়বদ্ধ। তাই হয়তো ১৯৮৮ সালে 'ভ্যামপায়ারস কিস' ছবিতে জ্যান্ত তেলাপোকা অনায়াসে চিবিয়ে ফেলেন তিনি।
আলোচনার ঝড় তুলেছেন গণমাধ্যমের র‌্যাংকিংয়ে বারবার স্থান করে নেওয়ার কারণে। ২০০৯ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিন তাকে ওই বছরের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক নেওয়া শিল্পী হিসেবে প্রকাশ করে। এরও আগে ১৯৯৭ সালে গাড়ির নিলামে তিনি প্রায় পাঁচ লাখ ডলারে একটি ল্যাম্বারগিনি কিনে স্মরণকালের নিলামের ইতিহাস ভঙ্গ করেন।
দুর্দান্ত অভিনয়জীবনের তুমুল প্রবাহে ব্যক্তিগত জীবনে সম্পর্কের উত্তালতা তাঁকে আরো আলোচিত করে যুগে যুগে। তিনি এ পর্যন্ত তিন-তিনজন নারীর সঙ্গে ঘর বাঁধেন। প্রতিবারই ভাঙনের ঝড় তাঁর সংসার তাসের ঘরের মতো চুরমার করে দিলেও শেষবারের সংসার এখনো দণ্ডায়মান। শৈশবে অ্যাঞ্জেলিনা জোলির সঙ্গে একই স্কুলে পড়াশোনা করলেও অঘটনগুলোর একটাও জোলির সঙ্গে ঘটেনি। ব্র্যাডপিটের সৌভাগ্যই বটে। তবে প্রথম বিয়ে করেন অভিনেত্রী প্যাট্রিসিয়া আরকুয়েটকে ১৯৯৫ সালে। সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী এ বিয়ে টিকে ছয় বছর। ২০০১ সালে ভাঙনের পরের বারই আবারও নদীর একূলে ভেঙে ওকূল গড়ার মতো সংসার গড়েন লিসা মেরি প্রেসলির সঙ্গে। দুর্ভাগ্য হলেও সত্য, মাত্র দেড় মাসের মাথায় এ সম্পর্কের ইতি ঘটে। মজার কথা হলো, এ সংসার যত দিন স্থায়ী হয়েছিল তারচেয়ে বেশি স্থায়ী হয় তাঁদের বিচ্ছেদের আইনি প্রক্রিয়ার সময়কাল। সবশেষে বিয়ে করেন এলিস কিম নামের এক নারীকে। এলিস সংসারটা ভালোই গুছিয়ে রেখেছেন। এখন একটি সন্তান রয়েছে তাঁর।
তাঁর প্রিয় শখ হলো কমিক বই সংগ্রহ করা। তাঁর মতে কমিক হলো আধুনিক যুগের মিথলজি, যা ভবিষ্যতের পৃথিবীতে এ যুগের মিথ হিসেবে কালের সাক্ষী হয়ে থাকবে। চিত্রশিল্পের প্রতিও তাঁর রয়েছে প্রচণ্ড দুর্বলতা। তাই তো সুযোগ পেলেই সংগ্রহ করেন ছবি। আর তাঁর এ ঝোঁকের প্রতি সম্মান দেখিয়ে ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টরেট প্রদান করে ফাইন আর্টসের ওপর। মানুষ ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে তিনি ২০০৬ সালে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালে আফ্রিকার শিশুদের জন্য ২০ লাখ ডলার সাহায্য দেন।

No comments

Powered by Blogger.