নারী সংবেদী পদক্ষেপ চাই by শাহনাজ সুমী ও নাসরিন বেগম

ম্মিলিত আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা ও সচেতনতার ফলে এইচআইভি/এইডস বিষয়ে ইতিবাচক অগ্রগতি লক্ষণীয়। বিশ্বে এইডস সংক্রান্ত মৃত্যুর সংখ্যা ২০০৫ থেকে ২০১০ সালে ২২ লাখ থেকে ১৮ লাখে নেমে এসেছে (পাঁচ বছরে ২১ শতাংশ হ্রাস)। ১৯৯৭ থেকে নতুন সংক্রমণের হার হ্রাস পেয়েছে ২১ শতাংশ। এ অর্জনের ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালের মধ্যে 'এইচআইভি সংক্রমণ, সংক্রমিত ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য এবং এইডস সংক্রান্ত মৃত্যু শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা'র আন্তর্জাতিক আহ্বান জানানো হয়েছে এ বছরের বিশ্ব এইডস দিবসে।


এ অর্জন সত্ত্বেও এখনও প্রতিদিন বিশ্বে প্রায় ৭ হাজার ১০০ মানুষ এইচআইভিতে সংক্রমিত হয় এবং ৪ হাজার ৯০০ মানুষ এইচআইভি/এইডসে মারা যায়। বর্তমানে বিশ্বে তিন কোটি চলি্লশ লাখ মানুষ এইচআইভি সংক্রমণ নিয়ে বেঁচে আছে। এইডস আক্রান্ত অধিকাংশ মানুষই নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে বসবাস করে। বিশেষভাবে লক্ষণীয়, এইচআইভি সংক্রমণ এবং এইডস রোগীদের অর্ধেকের বেশি নারী। বাংলাদেশে এইচআইভি/এইডস সংক্রমণ তুলনামূলক কম হলেও আমরা ঝুঁকিমুক্ত নই। এ পর্যন্ত এইচআইভি পজিটিভের সংখ্যা ২০৮৮ জন, রোগীর সংখ্যা ৮৫০ জন,এ কালান্তক ব্যাধিতে মারা গেছেন ২৪১ জন। মাদকসেবন, যৌন ব্যবসায়, বিরাটাকারের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অভিবাসী জনগোষ্ঠী, অনিরাপদ রক্ত সঞ্চালন, দারিদ্র্য, পর্যাপ্ত শিক্ষা ও চিকিৎসাসেবার অভাব_ এসব মৌলিক বিষয় রয়েছে, যা এ ধরনের রোগের বিস্তারে সহায়তা করে এবং প্রতিরোধে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এইডস আক্রান্ত ব্যক্তিদের সুচিকিৎসায় কিছু নতুন ওষুধ আবিষ্কার এবং চিকিৎসাসেবায় অভিগমত্য বৃদ্ধি পেলেও বিশেষত দরিদ্র ও নারীদের জন্য ওষুধ প্রাপ্তি ও সেবাদান নিশ্চিত করতে আরও সক্রিয় পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। দেশে এইডস রোগী শনাক্ত করা কঠিন। কেননা এইচআইভি ভাইরাসের উপস্থিতি প্রমাণের জন্য এখানে রক্ত পরীক্ষার সুযোগ যথেষ্ট নয়। এইচআইভি পরীক্ষার জন্য ৯৬টি ভলান্টারি কাউন্সেলিং অ্যান্ড টেস্টিং কেন্দ্র রয়েছে। এসব কেন্দ্রে রক্তে এইচআইভি ভাইরাস আছে কি-না তা বিনামূল্যে পরীক্ষা করা হয়। বেসরকারি সংস্থা পরিচালিত এসব কেন্দ্র মূলত নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর প্রতি মনোযোগী; যেমন কিছু কেন্দ্রে যৌনকর্মী ও কিছু কেন্দ্রে হিজড়াদের রক্ত পরীক্ষা করা হয়। তা ছাড়া কেন্দ্রগুলো ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের মতো বিশেষ কয়েকটি অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে এইচআইভি সংক্রমণ চিহ্নিত হলে রোগীকে নিয়মিত এন্টিরেট্রোভাইরাল ওষুধ দিতে হয়। এই ওষুধ ব্যয়বহুল, যে জন্য বিশেষায়িত গ্রুপ হিসেবে সুবিধাপ্রাপ্তদের বাইরে চিকিৎসা পাওয়ার ক্ষেত্রে এইডস আক্রান্ত সাধারণ দরিদ্ররা বৈষম্যের শিকার হন। এইডস আক্রান্তদের চিকিৎসার দায়িত্বটি অবশ্যই সরকারের গ্রহণ করা উচিত। দেশে প্রকট জেন্ডার বৈষম্য বিদ্যমান থাকায় নারীদের ভুক্তভোগী হওয়ার আশঙ্কা পুরুষের তুলনায় বেশি। আক্রান্ত নারী পরিবারে, সমাজে সর্বত্র সন্দেহের এবং বৈষম্যের শিকারে পরিণত হন। এ ছাড়া অতি দরিদ্র, ক্ষমতাহীন, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাহীন নারীদের এইডসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি এবং তাদের পরিণতি হয় আরও ভয়াবহ। এইচআইভি/এইডসের সংক্রমণ, রোগীদের প্রতি বৈষম্য এবং আক্রান্ত ব্যক্তিদের মৃত্যু শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে কয়েকটি জরুরি করণীয় সমন্বিতভাবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমে আনা দরকার :
_সব পর্যায়ের চিকিৎসাসেবা কেন্দ্রগুলোতে নারীবান্ধবভাবে পরিবেশ গড়ে তোলা এবং সেবা নিতে আসার জন্য নারীদের উৎসাহিত করতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া।
_জরুরি মুহূর্তে শরীরে রক্ত গ্রহণের আগে স্ক্রিনিং টেস্টের মাধ্যমে দানকৃত রক্তে এইচআইভিসহ অন্য সংক্রামক ভাইরাস আছে কি-না তা পরীক্ষা করা।
_বয়ঃসন্ধিকালের জনগোষ্ঠীর দায়িত্বশীল আচরণের ওপর এইচআইভি/এইডসসহ যৌনবাহিত রোগব্যাধি প্রতিরোধ নির্ভর করে। এই জনগোষ্ঠীকে স্কুল পর্যায় থেকে জাতীয় কারিকুলামের আওতায় পূর্ণাঙ্গভাবে প্রজনন স্বাস্থ্য ও যৌন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও সচেতনতা প্রদান করার ব্যবস্থা নেওয়া তাই জরুরি।

No comments

Powered by Blogger.