ইনজেকশনে মাদকসেবন কমাতে বিশেষ থেরাপি-আজ এইডস দিবস, নানা অনুষ্ঠান by তৌফিক মারুফ

নজেকশনে মাদক গ্রহণকারীদের মাধ্যমে রাজধানীতে এইচআইভি-এইডস বিস্তৃতি আগের চেয়ে কমেছে। তবে অন্যান্য কারণে ঝুঁকি কমছে না। গত এক বছরে দেশের এইচআইভি-এইডস পর্যবেক্ষণে এ ইতিবাচক পরিবর্তন ধরা পড়েছে বলে দাবি করছেন সরকারি-বেসরকারি বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে ইনজেকশনের সাহায্যে মাদক গ্রহণ নিরুৎসাহ করতে দেশে চালু করা হচ্ছে বিকল্প মাদক, যা এখন পরীক্ষামূলকভাবে কেবল ঢাকায় চলছে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার


তত্ত্বাবধানে।সর্বশেষ পরিস্থিতি অনুসারে দেশে মোট এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা দুই হাজার ৮৮। এইডস রোগী মোট ৮৫০ জন। এইডসে মারা গেছেন মোট ২৪১ জন। ২০০৯ সালের নভেম্বর থেকে গত বছরের অক্টোবর পর্যন্ত সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন জাতীয় এইডস/এসটিডি কর্মসূচির আওতায় দেশের বিভিন্ন এলাকার ৩২ হাজার ২০৯ জনের ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এই আক্রান্ত ও মৃতদের শনাক্ত করা হয়েছিল। যদিও কোনো কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থার দাবি অনুযায়ী বাংলাদেশে এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা ১২ হাজারের বেশি।
দেশে এইচআইভি-এইডস আক্রান্তদের পরিসংখ্যান প্রকাশে সরকারি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাই গত বছরের ১ ডিসেম্বর প্রকাশিত পরিসংখ্যানকেই এখনো সর্বশেষ তথ্য হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। গত বছরের পর থেকে একই কার্যক্রমের মাধ্যমে আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ব এইডস দিবসে একটি পরিসংখ্যান-সংবলিত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। পুরনো হিসাবে দেশে মোট এইচআইভি আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে ইনজেকশনের সাহায্যে শিরায় মাদক গ্রহণকারী। এর পরই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে যৌনকর্মীরা। পেশাদার রক্তদাতাদের মাধ্যমেও এইচআইভি ছড়ানোর প্রবণতা রয়েছে। ফলে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায় থেকে ইনজেকশনের সাহায্যে শিরায় মাদক গ্রহণকারীদের দিকে বেশি নজরদারি করা শুরু হয়। একই সঙ্গে তাদের সচেতন করা ও বিকল্প মাদকে আকৃষ্ট করার পথ খোঁজা হয়।
সরকারের জাতীয় এইডস/এসটিডি কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. আবদুল ওয়াহেদ গত মঙ্গলবার কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রথা অনুসারে ১ ডিসেম্বর এইডস দিবসের আগে নতুন পরিসংখ্যান প্রকাশ করা যাবে না। ওই দিন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওই তথ্য প্রকাশ করবেন। বরাবরই এমনটা হয়। ফলে এখন পর্যন্ত গত বছরের পরিসংখ্যানই কার্যকর আছে। তিনি আরো বলেন, গত জুলাই থেকে নতুন কার্যকর হওয়া এইচএনপিএসডিপির (হেলথ, নিউট্রিশন পপুলেশন ডেভেলপমেন্ট সেক্টর প্রোগ্রাম) আওতায় এইচআইভি/এইডস নিয়ে আরো গুরুত্বপূর্ণ কিছু কার্যক্রম চালু হবে। ফলে এ ক্ষেত্রে আরো অগ্রগতি হবে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, চলতি বছরে পুরো কার্যক্রমে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বড় ধরনের সাফল্য এসেছে ইনজেকশনের সাহায্যে শিরায় মাদক গ্রহণের প্রবণতা কমানোর ক্ষেত্রে। আগের বছর এ প্রবণতা যে হারে কমেছিল, এবার তার চেয়েও বেশি মাত্রায় কমেছে।
একই আভাস দিয়েছেন আন্তর্জাতিক উদরাময় রোগ গবেষণা কেন্দ্রের (আইসিডিডিআর,বি) এইচআইভি বিভাগের বিশেষজ্ঞ ড. নাশাবা মতিন। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে ইনজেকশনের সাহায্যে শিরায় মাদক গ্রহণকারীদের অনেকটাই সচেতন করা গেছে। এ ছাড়া মেথাডন থেরাপি নামের একটি পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে বিকল্প মাদক চালুর কারণেও ঢাকায় এ অগ্রগতি হয়েছে। আইসিডিডিআর,বি এ প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে, যা এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। তিনি জানান, এ প্রকল্পের মাধ্যমে কেবল ঢাকায় ইনজেকশনের সাহায্যে শিরায় মাদক গ্রহণকারীদের মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে মেথাডন (সবঃযধফড়হব) সিরাপ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা হয়। নির্দিষ্ট পরিমাণে এ সিরাপ সেবন করলে নেশাগ্রস্তরা ইনজেকশনের সাহায্যে শিরায় মাদক গ্রহণের তাড়না অনুভব করে না।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আশা করছেন, ইনজেকশনের মাধ্যমে এইচআইভি ছড়ানোর হার মেথাডন থেরাপির মাধ্যমে কমিয়ে আনা সম্ভব। জাতীয় এইডস/এসটিডি কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. আবদুল ওয়াহেদ বলেন, মেথাডন থেরাপি থেকে ঢাকায় সাফল্য পাওয়া গেছে। তাই পাইলট প্রকল্পটি শেষ হলে কিভাবে এটা সারা দেশে ইনজেকশনের সাহায্যে শিরায় মাদক গ্রহণকারীদের কাছে বিকল্প মাদক হিসেবে পেঁৗছানো যায় সে লক্ষ্যে কাজ চলছে।
ড. নাশাবা মতিন বলেন, সব মাদকের মতোই মেথাডনেরও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে সিরিঞ্জের মাধ্যমে এইচআইভি ছড়ানো রোধের বিষয়টিকে।
ডা. মো. আবদুল ওয়াহেদ বলেন, গ্লোবাল ফান্ডের আওতায় ইউএনওডিসির অর্থ ও কারিগরি সহযোগিতায় বাংলাদেশে ২০০৮ সাল থেকে এ কার্যক্রম চালাচ্ছে আইসিডিডিআর,বি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দিষ্ট বিভাগ এ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে থাকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক আ ব ম ফারুক কালের কণ্ঠকে বলেন, মেথাডন ক্ষতিকর হলেও এইচআইভির মতো মরণব্যাধি থেকে ফেরানোর জন্য এ থেরাপি প্রয়োগ করলে এটাকে ইতিবাচক বলতে হবে। অনেক দেশেই এটা আছে। তবে সবার লক্ষ্য হওয়া উচিত মাদক গ্রহণকারীদের ধীরে ধীরে চিকিৎসার মাধ্যমে পুরোপরি সুস্থ করে তোলা।
এইডস দিবসের কর্মসূচি : আজ বিশ্ব এইডস দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠন শোভাযাত্রা, সেমিনারসহ নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ঠিক করা হয়েছে 'এইচআইভি সংক্রমণ ও এইডসে মৃত্যু নয় একটিও আর, বৈষম্যহীন পৃথিবী গড়ব সবাই_এই আমাদের অঙ্গীকার'। দিবসটি উপলক্ষে আজ সকাল ৯টায় জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে এইডসবিরোধী শোভাযাত্রা শুরু হবে। সাড়ে ১০টায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এইডসবিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। পরে হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বাংলাদেশে বর্তমান এইডস পরিস্থিতির ওপর একটি বিশেষ প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হবে সেমিনারে। সেমিনারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সচিব, প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্যবিষয়ক উপদেষ্টা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং দাতাগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী
রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান বিশ্ব এইডস দিবস উপলক্ষে এক বাণীতে বলেছেন, 'এইডস রোগকে ঘৃণা করুন, রোগীকে নয়_বিশ্ব এইডস দিবসে এটাই প্রত্যাশা।'
পৃথক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'এইচআইভি/এইডস প্রতিরোধে বর্তমান সরকার নানাবিধ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এসব কার্যক্রম সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। বাংলাদেশে এইচআইভি সংক্রমণের হার প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর তুলনায় অনেক কম। এর প্রকোপ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে সরকার বদ্ধপরিকর।' প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, 'এইচআইভি আক্রান্তের প্রতি সামাজিক বৈষম্য রোধ করতে হবে।'

No comments

Powered by Blogger.