কিলার ভাড়া করার বর্ণনা দিলেন হাজি ফারুক by পিনাকি দাসগুপ্ত ও প্রীতিরঞ্জন সাহা

রসিংদীর জনপ্রিয় মেয়র লোকমান হোসেন হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণকারী কিলার ভাড়া করার আদ্যোপান্ত বর্ণনা করলেন রাজধানীর আন্ডারওয়ার্ল্ডের নিয়ন্ত্রক হাজি ফারুক হোসেন। গতকাল বুধবার নরসিংদী আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তিনি কিলার ভাড়ার বিস্তারিত বর্ণনা দেন। লোকমান হত্যা মামলায় এজাহারভুক্ত এক আসামিসহ মোট ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইতিমধ্যে গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে নরসিংদী শহর যুবলীগ নেতা
আশরাফ হোসেন সরকার ও টঙ্গীর মোটরসাইকেল গ্যারেজ মালিক হাজি সেলিমসহ তিনজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবনন্দি দিয়েছেন। এদিকে মামলার পলাতক আসামি আওয়ামী লীগ নেতা মোবারক হোসেন মোবার ভগি্নপতি স্থানীয় বিএনপি নেতা কাজী নূরে আলম ওরফে কাজী আলমকে গতকাল জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ ৮ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে। অন্যদিকে মাহফুজ ও শাহিনকে দ্বিতীয় দফায় ৪ দিনের
রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ ম ল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হাজি ফারুককে নরসিংদী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (তৃতীয় আদালত) শিহাবুল ইসলামের আদালতে হাজির করেন। পরে ম্যাজিস্ট্রেটের খাস কামরায় জবানবন্দি দেন। জবানবন্দি শেষে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আদালতের নির্দেশে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
মামলার তদন্ত সূত্র জানায়, হাজি ফারুক ঢাকার ওয়ারী এলাকার যুবদলের সাবেক নেতা। পুরনো ঢাকায় বুলবুল প্রিন্টার্স নামে তার একটি ছাপাখানা আছে। হাজি ফারুকের বাবা একটি বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালক। আন্ডারওয়ার্ল্ডের সঙ্গে তার ব্যাপক যোগাযোগ রয়েছে। একসময় ফেনসিডিল আসক্ত ছিলেন। আর ফেনসিডিলের জন্য প্রায়ই নরসিংদী আসা-যাওয়া করতেন। এ সুবাদে নরসিংদীর সন্ত্রাসী চক্রের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। যুবলীগ নেতা আশরাফ সরকারের শ্বশুরবাড়ি ঢাকার কলতাবাজারে হওয়ার কারণে তার সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে তার। তারই অনুরোধে নরসিংদী পৌর নির্বাচনের সময় ঢাকা থেকে বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপ নরসিংদী পাঠিয়েছিলেন। হাজি ফারুক জানিয়েছেন, তিনি নিজে কখনও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সরাসরি অংশগ্রহণ করেননি। তবে ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান, ডাকাত শহীদসহ প্রায় সবার সঙ্গে তার সম্পর্ক রয়েছে।
লোকমান হত্যা সম্পর্কে হাজি ফারুক জানান, লোকমান হত্যাকাণ্ডের পেছনে কারা ছিল তা তিনি জানেন না। তবে তার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেছেন আশরাফ হোসেন সরকার। তার দায়িত্ব ছিল কিলার দিয়ে লোকমানকে হত্যা করা। এ নিয়ে আশরাফের সঙ্গে তার মোটা অঙ্কের টাকার চুক্তি হয়।
তিনি আরও জানান, এক বছর আগে থেকে ধানমণ্ডি এলাকার একটি চাইনিজ রেস্টুরেন্টে লোকমান হত্যার ব্যাপারে কথা হয়। আশরাফের কথা ছিল, যত টাকা চাইবে তাই দেওয়া হবে। কিন্তু এমন কিলার চাই, যারা প্রথম টার্গেটেই সফল হয়। লোকমানকে হত্যার পরিকল্পনার পর আশরাফ তাকে প্রথম দফায় ১৫ লাখ টাকা দেন। তবে টাকা নেওয়ার পরও হাজি ফারুক কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলেন। কারণ নরসিংদী পৌর মেয়র লোকমানকে হাজি ফারুক ভালোভাবে চিনতেন। আশরাফ হোসেন ছিলেন রীতিমতো নাছোড়বান্দা। তা সত্ত্বেও টাকা নেওয়ার পর চলে যায় এক বছর। সর্বশেষ হত্যাকাণ্ডের দেড় মাস আগে আশরাফ তাকে ২০ লাখ টাকা পরিশোধ করেন। কথা ছিল অভিযান সফল হওয়ার পর তাকে আরও টাকা দেওয়া হবে। তবে তিনি আর কোনো টাকা আশরাফের কাছ থেকে পাননি। এ টাকা পাওয়ার পরই কিলার গ্রুপকে ভাড়া করেন। ফারুক জানান, লোকমান হত্যাকাণ্ডে তিনি সাত কিলার ভাড়া করেছিলেন। তাদের সহায়তা দেয় আশরাফের দেওয়া কয়েক কিলার।
২০ কিলোমিটার মানববন্ধন : লোকমান হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেফতারের দাবিতে আগামী ৭ ডিসেম্বর মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। নরসিংদী সদরের সাংসদ নজরুল ইসলাম হিরুর উদ্যোগে এ মানববন্ধন হবে ঢাকা-সিলেট সড়কের মাধবদী থেকে ইটখোলা পর্যন্ত।
স্মারকলিপি প্রদান : গতকাল বুধবার বিকেলে নরসিংদী সদর উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে নরসিংদী পৌর মেয়র লোকমান হোসেন হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত খুনীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে নরসিংদী জেলা প্রশাসক বরাবর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ মনজুর এলাহীর নেতৃত্বে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়। স্মারকলিপি দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মনজুর এলাহী, সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ সাখাওয়াত হোসেন সকা, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট উম্মে সালমা মায়া, ইউপি চেয়ারম্যান এমএন জামান, ইউসুফ খান পিন্টু, আবু সালেহ চৌধুরী, চেয়ারম্যান মাইনুল ইসলাম ভঁূইয়া, মিজানুর রহমান, জালাল উদ্দিন, নাজিম উদ্দিন, মোঃ খোকন মিয়া প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.