শশী ছুটছেন আপন গতিতে by কামরুজ্জামান মিলু


পুরো নাম শারমিন জোহা শশী। জন্ম রংপুর জেলার কেরানীপাড়ায়। পাঁচ বছর বয়সে নাচ শেখার জন্য ভর্তি হন শিশু একাডেমীতে। নৃত্যের প্রথম শিক্ষক শিমু হোসেন। নূপুরের ঝমঝম ছন্দে বেশ কয়েক বছর রংপুরের টাউন হলে নৃত্যে মাতিয়ে রেখেছিলেন সবাইকে। এরপর পড়াশোনা নিয়ে অনেকখানি ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তবে মনে মনে স্বপ্ন আঁকতে থাকেন কাজলচোখে। সংস্কৃতিমনা পরিবারে তাঁর জন্ম।
বাবা শামসুজ্জোহা বাবলু ও মা হোসনে আরা বেগম দুজনই নাটক এবং রেডিও বিভাগের কর্মী। তাই শশী ইচ্ছা থাকলেও মন সরাতে পারেন না মিডিয়া অঙ্গন থেকে। দশম শ্রেণীতে পড়ার সময় নাম লেখান 'লাঙ্ আনন্দধারা মিস ফটোজেনিক বাংলাদেশ-২০০৩' প্রতিযোগিতায়। এ সম্পর্কে চটপট করে শশী বলেন, 'অনেকটা শখের বশেই ছবি জমা দিয়েছিলাম এই প্রতিযোগিতায়। এরপর সত্যি সত্যি রাজশাহী বিভাগ থেকে প্রথম হলাম। তখনো এত সিরিয়াস ছিলাম না।' এরপর সত্যি একদিন স্বপ্ন বাস্তবায়নের সন্ধান পেলেন। চিত্রনায়িকা সুচন্দা দেখা করতে চান শশীর সঙ্গে। সেদিন কী যে আনন্দ! মা-বাবাসহ দেখা করলেন সুচন্দার সঙ্গে। এরপর 'হাজার বছর ধরে' চলচ্চিত্রে টুনী চরিত্রের প্রস্তাব পান শশী। সেই থেকেই শুরু তারার ভুবনে তাঁর পথচলা। এরপর অভিনয় করেন খিজির হায়াত খানের 'অস্তিত্বে আমার দেশ', মোরশেদুল ইসলামের 'বৃষ্টির দিন' এবং শফিকুর রহমানের 'শোয়াচান পাখি' চলচ্চিত্রে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত শেষ দুটি ছবিরই শুটিং এখন পর্যন্ত বন্ধ আছে। কিন্তু তাতে কী, চলচ্চিত্রে কাজ শুরু হলেও টিভি নাটকে তাঁর ব্যস্ততা বেড়ে যায়; এবং সেই সঙ্গে পরিচিতি এনে দেয় মিডিয়া অঙ্গনে। এ সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য, 'একজন অভিনয়শিল্পীর জীবনে ভালো চরিত্র ও ভালো কাজ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই শুধু চলচ্চিত্রেই অভিনয় করব, নাটকে অভিনয় করব না_এমন কোনো বিষয় আমার মধ্যে কখনোই কাজ করেনি।'
টিভি নাটকে তাঁর প্রথম প্রচারিত নাটক আশরাফী মিঠুর পরিচালনায় 'দৈনিক তোলপাড়' (২০০৬)। এর মধ্যে স্কুল ও কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে ভর্তি হন স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এলএলবি বিভাগে। বর্তমানে তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী তিনি।
রংপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের ছোট্ট মেয়েটি এখন একজন সফল অভিনেত্রী। টিভি নাটকে অভিষেকের পর ক্রমেই তাঁর ব্যস্ততা বাড়তে থাকে। এর মধ্যে একে একে অভিনয় করেছেন শাহনেওয়াজ কাকলীর 'অনেক কার্তিক একটি অগ্রহায়ণ' ও 'গাড়িয়াল ভাই', তন্ময় তানসেনের 'একজন পড়শী এবং অতঃপর' ও 'ডাঙ্গুলি', সালাহউদ্দিন লাভলুর 'ঘরকুটুম', গোলাম সোহরাব দোদুলের 'শান্ত কুটির' এবং কাওনাইন সৌরভের 'হৈমন্তী'সহ আলোচিত বেশকিছু নাটকে। বর্তমানে প্রচারিত নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে মাছরাঙায় রুলীন রহমানের 'সন্তরণ' এবং আরটিভিতে ফজলুর রহমানের 'টালবাহানা'। কোনো কোনো নাটকে সিরিয়াস, কখনোবা কমিক চরিত্রে অভিনয় করে একজন সফল অভিনেত্রীর পরিচয় দিয়েছেন। বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে অভিনয়ের সংজ্ঞা সম্পর্কে শশী বলেন, 'অভিনয় আমার কাছে একটি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার জায়গা। আমি মনে করি, মন থেকে অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসা না থাকলে কখনোই ভালো অভিনেত্রী হওয়া সম্ভব নয়।'
ব্যক্তিগত জীবনে অবসর পেলেই বাসায় কম্পিউটারে গেম খেলতে বসেন। কিন্তু দিনে দিনে ব্যস্ততা বাড়ার কারণে তাঁর অবসর মিলছে না। তাঁর অভিনীত বেশ কিছু নাটক বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে প্রচারিত হবে শিগগিরই। এর মধ্যে আলভী আহমেদের 'সমীকরণ', জুয়েল মাহমুদের 'টাট্টুঘোড়া' এবং তন্ময় তানসেনের 'ভ্যাকেশন-১১'। সংস্কৃতিপ্রেমী এই মেয়েটি অভিনয়ের পাশাপাশি আইন পেশায়ও নিযুক্ত হতে চান। শশী বলেন, 'অ্যান্টি-হিরোইন বা নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় করতে চাই। ভালো গল্প এবং ভালো চরিত্রের নাটকে কিংবা চলচ্চিত্রে কাজ করতে চাই। এভাবে সৎপথে ভালো কাজের সঙ্গে সব সময় হাঁটতে চাই।'

No comments

Powered by Blogger.