পবিত্র কোরআনের আলো-আল্লাহ তুর পাহাড়ে মুসা (আ.)-কে তাওরাত কিতাব দান করেছিলেন

৪৩. ওয়া লাম্মা জা-আ মূছা লিমীক্বা-তিনা ওয়া কাল্লামাহূ রাব্বুহূ ক্বা-লা রাবি্ব আরিনী আনযুর্ ইলাইক; ক্বা-লা লান তারা-নী ওয়া লা-কিনিন্ যুর ইলাল জাবালি ফায়িনিছ্ তাক্বার্রা মাকা-নাহূ ফাছাওফা তারা-নী; ফালাম্মা তাজাল্লা রাব্বুহূ লিলজাবালি জাআ'লাহূ দাক্কান ওয়া খার্রা মূছা সায়ি'ক্বা-; ফালাম্মা আফা-ক্বা ক্বালা ছুব্হানাকা তুব্তু ইলাইকা ওয়া আনা আউওয়ালুল মু'মিনীন।১৪৪. ক্বা-লা ইয়া মূছা ইনি্নস্ ত্বাফাইতুকা আ'লান্নাছি বিরিছা-লা-তী ওয়া বিকালা-মী ফাখুয্ মা আ-তাইতুকা ওয়া কুম্ মিনাশ্ শা-কিরীন।


১৪৫. ওয়া কাতাব্না- লাহূ ফিল আলওয়া-হি মিন্ কুলি্ল শাইয়িম্ মাওয়ি'যাতান ওয়া তাফসীলাল্ লিকুলি্ল শাইয়িন; ফাখুয্হা বিক্বুওয়্যাতিন ওয়া'মুর্ ক্বাওমাকা ইয়া'খুযূ বিআহ্ছানিহা; ছাঊরীকুম দা-রাল ফা-ছিক্বীন।
[সুরা : আল-আ'রাফ, আয়াত : ১৪৩-১৪৫]

অনুবাদ : ১৪৩. মুসা যখন আমার নির্ধারিত সময়ে (ইতিকাফের জন্য) এসে পেঁৗছাল এবং তাঁর প্রভু তাঁর সঙ্গে কথা বললেন। মুসা বললেন, হে প্রভু! আমাকে দর্শন দাও, আমি তোমাকে দেখব। আল্লাহ বললেন, (হে মুসা) তুমি আমাকে কিছুতেই দেখতে পাবে না। তুমি বরং ওই পাহাড়ের দিকে তাকাও। (আমার তাজালি্ল নিক্ষেপের পর) তা যদি স্থির থাকে, তবে তুমি আমাকে দেখতে পারবে। (আসলে তা অসম্ভব) অতঃপর যখন তাঁর প্রভু পাহাড়ে তাজালি্ল ফেললেন, তখন তা পাহাড় চূর্ণ-বিচূর্ণ করে ফেলল এবং মুসা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে গেলেন। পরে যখন তাঁর সংজ্ঞা ফিরে এল, তখন তিনি বললেন, (হে প্রভু) তোমার সত্তা পবিত্র। আমি আপনার দরবারে তওবা করছি এবং চর্মচোখে যে কেউ আপনাকে দেখতে সক্ষম নয়, এ বিষয়ে আমি সবার আগে ইমান এনেছি। ১৪৪. আল্লাহ বললেন, হে মুসা। আমি আমার রিসালাত ও বাক্যালাপ দ্বারা সব মানুষের ওপর তোমাকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি। সুতরাং আমি তোমাকে (হেদায়েতসংক্রান্ত) যা কিছু দিলাম, তা নিষ্ঠার সঙ্গে গ্রহণ করো এবং কৃতজ্ঞ থাকো।
১৪৫. এই ফলকগুলোর মধ্যে আমি তার জন্য সব বিষয়ে উপদেশ এবং সব কিছুর বিস্তারিত ব্যাখ্যা লিখে দিয়েছি। অতএব তোমরা এগুলো শক্তভাবে ধরো এবং নিজ সম্প্রদায়কে নির্দেশ দান করো যে তারা এর উত্তম বিধানগুলো মেনে চলে। আমি তোমাদের অতিসত্বর অনাচার সৃষ্টিকারীদের আবাসভূমি দেখাব।

ব্যাখ্যা : ১৪৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা হজরত মুসা (আ.)-কে তুর পাহাড়ে তাঁর বিশেষ সানি্নধ্যে আমন্ত্রণ করে নিয়ে যাওয়ার পর যেসব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছিল, তা বর্ণনা করা হয়েছে। মুসা (আ.) আল্লাহর কাছে তাঁর সাক্ষাৎ লাভের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছিলেন : যেমন এ আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করত তাঁর কওমের লোকরাও। কিন্তু বাস্তব সত্য হলো, এ জগতে আল্লাহকে চর্মচোখে দেখা সম্ভব নয়। মানুষের পক্ষে তো আল্লাহকে দেখা সম্ভব নয়ই, এমনকি বিশ্বপ্রকৃতির অন্যান্য সৃষ্টি যেমন_পাহাড়-পর্বতেরও এ ক্ষমতা নেই যে আল্লাহর নুরের তাজালি্ল বরদাশত করবে। এ বিষয়টা হজরত মুসা (আ.)-কে চাক্ষুষ দেখানোর জন্যই আল্লাহ তায়ালা তুর পাহাড়ে তাজালি্ল ফেলেছিলেন, যা সে পাহাড়ের পক্ষে বরদাশত করা সম্ভব হয়নি। রেওয়ায়েত আছে যে ৭০ হাজার পর্দার অন্তরাল থেকে আল্লাহ সুচের ছিদ্র পরিমাণ নুর প্রকাশ করেছিলেন। সে সময় পৃথিবীর সব কিছু অপ্রকৃতিস্থ হয়ে গিয়েছিল। হঠাৎ সব পীড়িত লোক আরোগ্য লাভ করল, সব অনুর্বর জমি শস্য-শ্যামল হয়ে উঠল। পার্শ্ববর্তী বৃহৎ পাহাড় খণ্ড খণ্ড হয়ে উড়ে গেল। রেওয়ায়েতে আরো আছে যে এর তিনটি অংশ মদিনায় এবং তিনটি অংশ মক্কায় গিয়ে পড়েছিল। ১৪৪ ও ১৪৫ নম্বর আয়াতে মুসা (আ.)-কে নবুয়ত ও তাওরাত কিতাব দিয়ে জগদ্বাসীর ওপর সম্মানিত করার কথা বলা হয়েছে। আর সেই সঙ্গে বনি ইসরাইল সম্প্রদায়কে তাদের পিতৃভূমির অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে ইঙ্গিত করা হয়েছে। সেটা ভূমধ্যসাগরের পূর্বতীরের ফিলিস্তিন অঞ্চল। ইয়াকুব (আ.) তাঁর পরিবার নিয়ে এ অঞ্চল ছেড়ে চলে যাওয়ার পর আমালিকা বংশের লোকরা এখানে আবাস স্থাপন করে পুরো এলাকার ওপর তাদের কর্তৃত্ব বিস্তার করেছিল। পরে বনি ইসরাইলরা এ অঞ্চলের রাজত্ব ফিরে পেয়েছিল।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.