সেই নর্দাম্পটনকে ফিরিয়ে আনার আশা থাকছেই by সাইদুজ্জামান

রপর দুটো প্রশ্নে দুই রকম উত্তর দিলেন স্টুয়ার্ট ল। পাকিস্তানের এ দলটার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলাই কঠিন জানিয়ে পরের উত্তরে ওয়ানডে সিরিজে জেতার স্বপ্নে বিভোর বাংলাদেশ কোচ, 'গোটা দুয়েক ম্যাচ জেতার সামর্থ্য আমাদের আছে। জেতার ইচ্ছা নিয়েই সিরিজ শুরু করছি।'তাঁর কী দোষ? ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে জেতার সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধিকে। পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগে
গতকাল মিডিয়ার মুখোমুখি হয়েছিলেন স্টুয়ার্ট ল। ম্যাচের আগে 'আমরা হারব' বলে দলের আত্মবিশ্বাসের শেষটুকুও কেন নিংড়ে বের করে দেবেন? আত্মবিশ্বাসের ভগ্নাংশই অবশিষ্ট আছে বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে।
মঙ্গলবারের টি-টোয়েন্টিতেই যে উধাও আত্মবিশ্বাসের বাকি অংশ!
এ ইঙ্গিতটা আছে স্টুয়ার্ট ল'র পাকিস্তান দল সম্পর্কে করা মন্তব্যে, 'ওদের স্পিন আক্রমণটা দুর্দান্ত। পেস বোলিং ভালো। আর ব্যাটিংয়েও অভিজ্ঞতা আছে।' মধ্যপ্রাচ্যে শ্রীলঙ্কাকে পিষে ফেলা পাকিস্তানের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনে কার্পণ্য করেননি বাংলাদেশ দলের কোচ। এর সঙ্গে এবার চিরাচরিত 'হোম অ্যাডভান্টেজ'ও কেমন যেন গলার কাঁটা হয়ে বিঁধছে। ধীর গতির সঙ্গে বল টার্ন করবে_অতিথি 'সৎকার' সম্পন্ন করতে এমন উইকেটই পছন্দ বাংলাদেশ দলের। কিন্তু সাঈদ আজমল, শহীদ আফ্রিদি, মোহাম্মদ হাফিজ এবং শোয়েব মালিকের স্পিন সামর্থ্যের কারণে নিজেদের পছন্দের উইকেটকেই এখন ভয় বাংলাদেশের। সেটা আবার দারুণ স্বস্তি পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক ইউনিস খানের, 'আমাদের দারুণ সব স্পিনার আছে। গত রাতেই তো দেখা গেছে বাংলাদেশ স্পিনে আমাদের চেয়ে বেশি ভুগেছে।' আবার প্রতিপক্ষের স্পিন কোয়াট্র্রেটকে নির্বিষ করে দিতে যে একটু বাউন্সি ট্র্যাক চেয়ে কিউরেটর বরাবর নিবেদন করবেন মুশফিকুর রহিম, সে উপায়ও নেই। পাকিস্তান দলে নতুন বলটা যে ওঠে উমর গুলের হাতে! এ ব্যাপারটাকে নিজের দলের বাড়তি সুবিধা বলেই মনে করেন ইউনিস, 'পেস বোলারদের জন্য সহায়তা থাকলেও আমাদের সমস্যা নেই।' আর পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া ব্যাটিংটা প্রায় এক দশক আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অলিগলি চষে বেড়ানো পাকিস্তানের সাবেক এ অধিনায়কের জানা আছে। হাফিজ, আফ্রিদি, শোয়েব মালিক কিংবা বর্তমান অধিনায়ক মিসবাহ উল হকের ক্যারিয়ারেও কীর্তির অভাব নেই। আর অভিজ্ঞদের ছায়ায় থেকে প্রয়োজনে হাল ধরতে জানেন তরুণরাও।
আর বাংলাদেশ? যতটুকু জানা গেছে, আজ মিরপুরের ওয়ানডেতে খেলছেন তামিম ইকবাল। অবশ্য মঙ্গলবারের ঘটনার পর এ ব্যাপারে পুরোপুরি সংশয়মুক্ত হতে টস পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। তো, তামিম খেললে তিন নম্বর নিয়ে নতুন কিছু ভাবতে হবে না টিম ম্যানেজমেন্টকে। শাহরিয়ার নাফীস আছেন এ পজিশনের জন্য। তবে দুশ্চিন্তাটা আসলে শুরুতেই। স্বপ্নের একটা বছর কাটিয়ে আসা ইমরুল কায়েসের ব্যাটে যে রান নেই! অবশ্য দুঃসময়ের অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসার অতীত আছে বাঁহাতি এ ওপেনারের। মিরপুরের ব্যাটিং-সহায়ক ছয় নম্বর উইকেটে আজ সে অতীত তো ফিরিয়ে আনতেই পারেন ইমরুল!
শুরুটা সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিপক্ষের শক্তি বিবেচনায় তা আরো বেশি দরকার বাংলাদেশের, কারণ টি-টোয়েন্টি অভিজ্ঞতার পর ওয়ানডে সিরিজে পাকিস্তানের ম্যাচ পরিকল্পনা বোধগম্য। সে তাঁরা যতই অনুশীলন পর্ব গোপন রাখতে মিডিয়ার সামনে 'নো এন্ট্রি' ঝুলিয়ে রাখুক না কেন। বাংলাদেশের বিষে বাংলাদেশকে খুন করার পরিকল্পনাও গোপন রাখেননি ইউনিস খান। দেশের মাটিতে ম্যাচ জিততে ঠিকঠাক কাজ করলে ৪০ ওভারও স্পিনারদের দিয়ে করানোর রেকর্ড আছে বাংলাদেশের। এবার চার স্পিনার দিয়ে একই কাজ করতে পারে পাকিস্তান। চারজনের তিনজন পরিচয়ে অলরাউন্ডার হলেও বিশেষজ্ঞ স্পিনারের মর্যাদার অধিকারী। কে না জানে, ভালো পেস বোলিংয়ের মতো মানসম্পন্ন স্পিনের বিপক্ষেও দুর্বল বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা।
তাই এমন দলের বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলার সম্ভাবনা নিয়েও সতর্ক মন্তব্য করতে হচ্ছে স্টুয়ার্ট ল'কে। আবার তাই বলে আগেই হেরে যাওয়ার মানসিকতা নিয়ে মাঠে নামারও তো কোনো মানে হয় না। তাই হার-জিত প্রশ্নে সাহসী উত্তরই দিয়েছেন বাংলাদেশের কোচ। কে জানে, গুরুত্বপূর্ণ টসটা হয়তো আজ জিতবেন মুশফিকুর রহিম। টসের গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে শীতের রাত। সন্ধ্যার পর থেকে শিশির পড়ে এখন। এতে দিবা-রাত্রির এ ম্যাচে দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিং করা কঠিন। বিশেষ করে যে ম্যাচে দু-দলেরই বোলিং আক্রমণ স্পিননির্ভর। আবার সে চিন্তা থেকে পরে ব্যাটিং করাতেও ঝামেলা আছে। টি-টোয়েন্টি ম্যাচেই নিজের দলকে পরে ব্যাটিং করতে দেখে স্টুয়ার্ট ল'র মনে হয়েছে, '২০ ওভার পরই উইকেট এতটা ভাঙবে বুঝিনি। উইকেট যে আচরণ করেছে, তাতে আগে ব্যাট করে ১৩০ রান করতে পারলে পাকিস্তানকে হয়তো বিপদে ফেলা যেত।' তবে উইকেটে হারের কারণ না খোঁজারই পক্ষে বাংলাদেশ কোচ, 'দু-দল একই উইকেটে খেলে। তাই এটা নিয়ে বেশি কথা বলতে চাই না।' তাহলে আত্মবিশ্বাসের ডানা মেলে দেওয়া ইউনিস খান কেন মিরপুরের উইকেট নিয়ে অযথা দুশ্চিন্তা করবেন, 'উইকেট যেমনই হোক, তা নিয়ে আমাদের কোনো চিন্তা নেই।'
কাল মিরপুরের আকাশে-বাতাসে এমনই ম্যাচের একপেশে পূর্বাভাস উড়ে বেরিয়েছে। অবশ্য তা পাল্টেও যেতে পারে। স্টুয়ার্ট ল বরং শেষ পর্যন্তও বলছেন সম্ভাবনার কথা, আশার কথা, 'আমরা আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী যদি ভালো ক্রিকেট খেলতে পারি, তাহলে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়।'
ড্রেসিংরুমের ব্ল্যাকবোর্ডে কোচ ছক এঁকে বুঝিয়ে দেবেন আর তা মাঠে নিখুঁতভাবে অনুবাদ করবেন মুশফিক-সাকিব-তামিমরা_এমন নির্ভেজাল দিন বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে খুব বেশি নেই। আজকের প্রতিপক্ষ পাকিস্তানের বিপক্ষেই এমন দিন ১৯৯৯ সালের ৩১ মে'র পর আর আসেনি।

No comments

Powered by Blogger.