বিল পাস নিয়ে স্পিকারের সঙ্গে এমপিদের বাগ্‌যুদ্ধ

পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই দিনের অন্যান্য কার্যসূচি স্থগিত করে মাত্র ৯ মিনিটে উপজেলা পরিষদ ও ঢাকা বিভক্তীকরণ বিল পাস নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংসদ সদস্যরা। জবাবে স্পিকার অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ সংসদ সদস্যদের সময়জ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। দুই পক্ষের আলোচনা-সমালোচনায় গতকাল বুধবার সংসদ অধিবেশন কিছু সময়ের জন্য উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।


গতকাল বিকেলে নবম জাতীয় সংসদের একাদশ অধিবেশন সমাপনীর দিনে প্রশ্নোত্তর শেষে পয়েন্ট অব অর্ডারে আগের দিন বিল পাসের বিষয়ে সদস্যরা আলোচনা উত্থাপন করেন। এ সময় ক্ষোভ প্রকাশ করেন জাসদের মইনউদ্দীন খান বাদল, ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন এবং একমাত্র স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ফজলুল আজিম। আলোচনার সময়ে স্পিকার বারবার তাঁদের থামিয়ে দিয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন এবং সংসদ সদস্যদের সময় সম্পর্কে সতর্ক করেন। প্রধানমন্ত্রী সমাপনী ভাষণে এ বিষয়ে তাঁর অবস্থান তুলে ধরেন।
আলোচনাকালে স্পিকার আবদুল হামিদ সংসদকে জানান, তিনি কার্যপ্রণালি বিধি অনুসারেই এগিয়েছেন। এর ব্যত্যয় ঘটানো তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। বরং সংসদে কথা বলতে হলে সঠিক সময়ে অধিবেশন কক্ষে থাকতে হবে। তবে এ বিষয়ে পরবর্তী অধিবেশনে চাইলে পয়েন্ট অব অর্ডারে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হবে।
পয়েন্ট অব অর্ডার শেষে রীতি অনুযায়ী সমাপনী ভাষণ দেন সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সংসদ সদস্যদের কড়া সমালোচনা করে বলেন, 'কেউ সংসদ অধিবেশনে সময়মতো উপস্থিত না থেকে তার দায়ভার স্পিকারের ওপর চাপিয়ে দিতে পারেন না। এ বিষয়ে তাঁদেরই সতর্ক হতে হবে।'
এর আগে পয়েন্ট অব অর্ডারে বিষয়টির সূত্রপাত করে মইনউদ্দীন খান বাদল বলেন, তাঁরা যে কয়জন উপজেলা পরিষদ (সংশোধনী) বিল ও স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) (সংশোধনী) বিলের ওপর সংশোধনী প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তাতে হয়তো কয়েক মিনিট খরচ হতো। কিন্তু বিল পাস হওয়া নিয়ে কোনো সমস্যা হতো না। বরং এর মাধ্যমে জনগণের মাঝে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হতো না। তিনি বলেন, 'অন্যান্য কার্যসূচি স্থগিত করে এভাবে বিকেলে কয়েক মিনিটের মধ্যে বিল পাস হবে, জানতে পারিনি। আমি রাস্তায় থাকার সময়েই বিল পাস হয়ে যায়। দিনের কার্যসূচি অনুযায়ী সন্ধ্যায় বিল পাস হওয়ার কথা ছিল।'
এরপর স্পিকার বলেন, 'রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি থাকায় অধিবেশনের অন্যান্য কর্মসূচি স্থগিত করে আইন প্রণয়ন কার্যক্রম শুরু করা হয়। কিন্তু এ সময় বিরোধী দলের বাইরে যে পাঁচজন সংশোধনী প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তাঁদের একজনও উপস্থিত ছিলেন না। অথচ একবার অধিবেশন শুরু হয়ে গেলে তো আর কারো জন্য অপেক্ষা করে থাকা সম্ভব নয়। কেউ যদি উপস্থিত থাকতেন তাহলে কিছুটা সময় পাওয়া যেত এবং অন্যরা ততক্ষণে আসতে পারতেন। সময়মতো উপস্থিত না থেকে কথা বলার দাবি কেউ জানালে তা পূরণ করা সম্ভব নয়।' তিনি সময়জ্ঞান সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে বলেন, 'অধিবেশন শুরু হওয়ার কথা ছিল সোয়া ৪টায়। শুরু হয় সাড়ে ৪টায়। তার পরও যদি কেউ না পেঁৗছাতে পারেন তাহলে তো কিছু করার থাকে না।' কোনো নোটিশ বা প্রস্তাব জমা দেওয়া থাকলে তাঁর আগেই সংসদে উপস্থিত হওয়া উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।
স্পিকারের বক্তব্যের সমালোচনা করে রাশেদ খান মেনন বলেন, বিলের ওপর সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপন না করতে পারায় তাঁরা সবাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছেন। একই সঙ্গে সংসদও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। তবে আগে থেকে যদি তাঁরা জানতেন যে অন্য সব বিষয় স্থগিত রেখে কেবল বিল নিয়ে কথা হবে, তাহলেও তাঁরা আরো আগে আসতেন। তাঁর আসতে ১০ মিনিট দেরি হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'স্বল্প সময়ের মধ্যে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিষ্পত্তি করার পরিকল্পনা থাকলে তা আগেই জানালে ভালো হতো।'
রাশেদ খান মেননের বক্তব্য প্রসঙ্গে স্পিকার বলেন, সংসদের কোন বিষয় স্থগিত থাকবে আর কোনটিকে গুরুত্ব দেওয়া হবে, সে বিষয়ে আগে থেকে জানানোর সুযোগ নেই। রাতে জার্মানির ভাইস চ্যান্সেলরের সম্মানে ডিনার ছিল। সেখানে সময়মতো উপস্থিত থাকতে হবে বলেই প্রশ্নোত্তর ও ৭১ বিধি স্থগিত করে বিল পাস করা হয়।
একমাত্র স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মো. ফজলুল আজিম একই বিষয়ে কথা বলতে গেলে স্পিকার তাঁকে একপর্যায়ে থামিয়ে দেন। তার পরও তিনি বলেন, এত গুরুত্বপূর্ণ বিল এত কম সময়ে পাস করা কারো পক্ষেই কাম্য নয়।
পরে সব সংসদ সদস্যের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে স্পিকার বলেন, 'অনেকেই কেবল বক্তব্য দেওয়ার জন্য সংসদে আসেন আবার তাঁর বক্তব্য শেষ হলে চলে যান। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বরং এর মাধ্যমে অনেক সময়ই কোরাম সংকটে পড়তে হয়।' এই বিব্রতকর অবস্থা থেকে রেহাই দেওয়ার জন্যও তিনি সবার প্রতি অনুরোধ জানান।

No comments

Powered by Blogger.