চিঠিপত্র-শিক্ষামন্ত্রী সমীপে

বাংলাদেশের মিডিয়ায় আলোড়ন সৃষ্টিকারী বরগুনা জেলার আমতলী থানার কুকুরা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কালিপুরা গ্রামের ফারজানা। ১১ নভেম্বর সকালে স্থানীয় কাজী সাহেব যথারীতি ধর্মীয় বিধিবিধানমতে ফারজানার বিয়ে পড়ান ও কাবিননামায় বর-কনের স্বাক্ষর গ্রহণ করেন। দুপুরে বর-কনে বিয়ের সাজে যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতায় শরিক। খাওয়া-দাওয়ার পর তর্কবিতর্ক, শোরগোল; নতুন বউ ফারজানার কাছে বরের ফুফু স্থানীয় একটি প্রাথমিক


বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা তাহমিনা বেগম যৌতুক হিসেবে ফ্রিজ, টেলিভিশন, মোটরসাইকেল দাবি করেন। অথচ যৌতুকের কোনো কথাই ছিল না। মেয়ে পক্ষের লোকজন প্রতিবাদ করলে ছেলের ফুফু তাহমিনা বেগম দাবিকৃত যৌতুক যতদিন মেয়ে পক্ষ না দেবে ততদিন, প্রয়োজনে ৫ বছরেও নতুন বউকে উঠিয়ে নেওয়া হবে না বলে হুমকি দেন। এ সময় বর হিরণ বলে, 'ফুফুর কথাই আমার কথা।' এ কথা শুনে ক্ষোভে-ঘৃণায় মুহূর্তে বিয়ের আসর ত্যাগ করে ফারজানা বরকে তালাক প্রদান করেন। একটি মেয়ের হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত আপাতদৃষ্টিতে পাগলামি মনে হতে পারে কিন্তু আসল বিবেচ্য বিষয়, যৌতুকের ওপর প্রচণ্ড ঘৃণাই মুহূর্তে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সক্ষমতা ফারজানার মধ্যে সৃষ্টি করেছে। ১৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় বিবিসির প্রবাহ অনুষ্ঠানে ফারজানা ইয়াসমিন নিপার সাক্ষাৎকার প্রচার ও পরদিন ১৫ নভেম্বর ঢাকা থেকে প্রকাশিত প্রায় প্রতিটি পত্রিকায় 'যৌতুককে না বলা'র ফারজানার দৃঢ়প্রত্যয়ের সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
ফারজানা যৌতুকের বিরুদ্ধে যে স্ফুলিঙ্গ প্রজ্বলিত করেছেন, আমাদের সাংবাদিক মহল তথা মিডিয়া সে স্ফুলিঙ্গকে যৌতুকের বিরুদ্ধে মশাল হিসেবে প্রজ্বলিত করেছে। যৌতুকের বিরুদ্ধে এ প্রজ্বলিত মশাল দাবানল আকারে দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে বিবিসি বাংলা এবং সংবাদপত্র বিশেষ করে সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো সমন্বয় করে একটি এক পাতার প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রতিটি বিদ্যালয়ের নিজস্ব তহবিল থেকে প্রজ্ঞাপনকৃত প্রতিবেদনটি বিদ্যালয়ের যত শিক্ষার্থী আছে ফটোকপি করে প্রত্যেকের হাতে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকে সম্পৃক্ত করে বিদ্যালয় এলাকার ৫ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে নিয়ে একটি টিম গঠন করে প্রতিটি শিক্ষার্থীর হাতে যাতে প্রতিবেদনটির ফটোকপি পেঁৗছে সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি বিদ্যালয়ে ক্লাস শুরুর আগে অ্যাসেম্বলিতেও যৌতুককে না বলার প্রতিজ্ঞা সংযোজন করে এ দাবানলকে সর্বত্র পেঁৗছে দিয়ে চিরতরে যৌতুককে দাহ্য করে যৌতুক তথা কুসংস্কারমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে সরকারসহ আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
মুক্তিযোদ্ধা ডা. সেখ বনি আমীন
ফকিরহাট, বাগেরহাট
লক্ষ্মীপুর বাঁচান!
লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি ও কমলনগর উপজেলা মেঘনা নদীর ভয়াবহ ভাঙনের শিকার। নদীভাঙনে উপজেলা দুটির ৩৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের প্রায় পুরোটাই নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে। গত দুই বছরে বর্ষায় নদীভাঙন এতটাই তীব্র আকার ধারণ করেছে যে, ৭৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী ২ বছরের ভেতর মেঘনার উত্তর সীমানা রামগতি ও কমলনগর অতিক্রম করে হয়তো লক্ষ্মীপুরে গিয়ে ঠেকবে। ভাঙনের ফলে উপজেলার সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো মেঘনার মাত্র ৪০০-৫০০ মিটারের মধ্যে চলে এসেছে। ইতিমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাতে গড়া বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম আশ্রয়ণ প্রকল্প চর গজারিয়ার অনেকাংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ফলে লক্ষ্মীপুরের অস্তিত্ব আজ হুমকির সম্মুখীন। লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড রামগতি ও কমলনগর উপজেলার মেঘনা নদী-তীরবর্তী ভাঙনকবলিত অঞ্চলে ৩৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য প্রায় ৬০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে, যা এখনও অনুমোদিত হয়নি। প্রকল্পটির অনুমোদন সময়সাপেক্ষ। ফলে অস্থায়ীভাবে জংলা বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে নদীভাঙন ঠেকানোর জন্য উদ্যোগ গ্রহণ এবং প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
ফয়সল হাসান
লক্ষ্মীপুর
fhassanlux@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.