পাহাড় কাটায় কোর্টের নিষেধাজ্ঞা-সিলেট জেলা প্রশাসন কী করছে

সিলেট সিটি করপোরেশনসহ ছয়টি উপজেলায় পাহাড় কাটার ওপর গত রোববার উচ্চ আদালত ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। অথচ প্রশাসন দায়িত্বশীল হলে এ ধরনের নির্দেশের প্রয়োজন পড়ত না। কেউ কেউ অবশ্য জনগুরুত্ব বিবেচনায় মাঝে মধ্যেই আদালতের এ ধরনের নির্দেশকে প্রশাসনের কাজে হস্তক্ষেপ বলে মনে করেন এবং এটা প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের স্বাভাবিক গতিকে বাধাগ্রস্ত করে বলে এর বিপক্ষে যুক্তি দেন। তারা এটাকে বিচার


বিভাগের অতিরিক্ত সক্রিয়তা প্রদর্শনের নামান্তর বলে অভিহিত করেন। কিন্তু তারা ভুলে যান যে, প্রশাসন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অর্পিত দায়িত্ব পালন করে না বলেই উচ্চ আদালতকে জনস্বার্থের কথা বিবেচনা করে এগিয়ে আসতে হয়। পাহাড় কেটে আবাসন তৈরি বা অন্য কোনো উদ্দেশ্য সাধনের ঘটনা সিলেটেই শুধু নয়_ চট্টগ্রাম, গাজীপুরসহ অনেক স্থানেই এটা ঘটেছে এবং এখনও ঘটছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরিবেশের বিপর্যয় সৃষ্টিকারী এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে প্রভাবশালীরা ও প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত থাকে বলে এর বিরুদ্ধে আদালতকেই সক্রিয় ভূমিকা নিতে হয়। সিলেটের ঘটনাটিও এর ব্যতিক্রম নয়। আদালত পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী লোকজনকে উচ্ছেদ না করার জন্যও আদেশ দিয়েছেন। যারা সেখানে বসবাস করছেন তাদের অন্যত্র বাসস্থানের ব্যবস্থা না করে উচ্ছেদ সমীচীন নয়। আমাদের এখানে দেখা যায়, প্রশাসন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরিবেশ বিপর্যয়কারী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে আপনা থেকে সক্রিয় হয় না। খাল, নদী ভরাট করে আবাসন গড়ে তোলা বা বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ নিশ্চয়ই অমার্জনীয় অপরাধ। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ক্ষমতাশালীরা এ কাজে জড়িত থাকেন। এ কারণেই বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার নদী ও খালগুলোকে অবৈধ দখলদারমুক্ত করার জন্য প্রাথমিকভাবে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোকেই এগিয়ে আসতে হয়েছে। তারপরও প্রশাসনের টনক না নড়ায় উচ্চ আদালতকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। সিলেট সিটি করপোরেশনসহ ছয়টি উপজেলায় পাহাড় কাটার ওপর উচ্চ আদালত ছয় মাসের যে নিষেধজ্ঞা জারি করেছেন আমরা তাকে স্বাগত জানাই। আমরা আশা করব, আদালতের নির্দেশ মেনে প্রশাসন তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবে।

No comments

Powered by Blogger.