এইডস দিবস-শূন্য হোক এইচআইভি মৃত্যুহার

লবেয়ার কামু তাঁর 'দ্য প্লেগ' বইতে রোগের মহামারির চেহারাটা বর্ণনা করেছেন। কামু দেখিয়েছেন, রোগ যখন ছড়িয়ে পড়ে গোটা সমাজব্যবস্থার ওপর, এর বিরূপ প্রভাব কেমন হয়। তবে সে তো মাত্র ওরাও নামে একটি শহরের গল্প। কিন্তু যদি ওই শহরের মতোই বিশ্বের অনেক দেশের অনেক শহরে এমন আরেকটি ভয়াবহ অসুখের বিস্তৃতি হয়? আমি এইচআইভি মানে এইডসের কথা বলছি। এ মুহূর্তে বিশ্বে এইচআইভি আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা তিন কোটিরও কিছু


বেশি। ১৯৮১ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ২৫ মিলিয়ন মানুষ। বিশ্বাস হয়? আসলে অবিশ্বাস্য হলেও খুব দুঃখজনক যে বিশ্বে এ মুহূর্তে প্রায় তিন লাখ শিশু এইডস আক্রান্ত। গত সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে এ বছরের বিশ্ব এইডস দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, 'গেটিং টু জিরো, জিরো নিউ এইচআইভি ইনফেকশনস, জিরো ডিসক্রিমিনেশন অ্যান্ড জিরো এইডস রিলেটেড ডেথ।' আর এই শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার থিমটা চলবে ২০১৫ সাল পর্যন্ত। এবারের প্রতিপাদ্য থেকে বোঝা যাচ্ছে, গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তিনটি বিষয়ে_এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনা, নতুন করে আক্রান্ত হতে না দেওয়া, বৈষম্যমূলক আচরণকে শূন্য পর্যায়ে আনা এবং এ রোগে আক্রান্তের মৃত্যুহারকে শূন্যের কোটায় নামানো। এইডস আক্রান্ত রোগীর সঙ্গে বিশ্বের উন্নত দেশগুলো তো অবশ্যই_শ্রীলঙ্কা বা কম্বোডিয়ায়ও ভালোবাসা দিয়ে, যত্ন করে তাদের সুস্থ রাখা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে? এইডস মানেই হলো, সমাজ অচ্ছুত ও একঘরে। এমনকি এইডস শুধু অনিরাপদ শারীরিক সম্পর্ক থেকে হচ্ছে বলে একটা ভুল ধারণা থাকায় খোলামেলা আলোচনার পরিবেশও আমাদের তৈরি হয়নি। অতিরিক্ত রাখঢাকের কারণে সমস্যা ও বিপদও বেশি। আমাদের দুর্বলতা হচ্ছে, এ বিষয়ে আমাদের কোনো শিক্ষা নেই। কিন্তু এটি ছড়াচ্ছে অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক থেকে শুরু করে শিরায় মাদকসেবী, এমএসএম, এমনকি ব্লাড ব্যাংক থেকে রোগীর রক্ত গ্রহণের মাধ্যমে। আজ আমাদের বাড়ির ছোট শিশুটিও তার অসুস্থতার সময় সিরিঞ্জ বা রক্ত গ্রহণের মধ্য দিয়ে এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। প্রতিবছর ১ ডিসেম্বর পালন করা হচ্ছে বিশ্ব এইডস দিবস। অন্তত দিসবটি সামনে রেখেও এ সম্পর্কে আমাদের সচেতনতার বিষয়গুলো আবার তুলে ধরার সুযোগ রয়েছে। এইডস নিয়ে যথেষ্ট সচেতনতা তৈরি না হলে এটি মাহামারি রূপ নিতে খুব বেশি সময় প্রয়োজন হবে না।
সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমাম

No comments

Powered by Blogger.