বিটিআরসির গুরুত্বপূর্ণ পদে ভারতীয় নাগরিক রাষ্ট্রীয় তথ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে

বিটিআরসি বা বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন হচ্ছে সরকারি-বেসরকারি ল্যান্ডফোন, সাবমেরিন কেবল, মোবাইল ফোন কোম্পানি ও অপারেটর ব্যবস্থা, ইন্টারনেট যোগাযোগ থেকে শুরু করে বাংলাদেশের টেলিকমিউনিকেশনের সবধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থার একমাত্র নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বেসরকারি টেলিভিশন সম্প্রচারের ফ্রিকোয়েন্সি বরাদ্দ দেয়াও এর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এসব কারণে যে কোনো মোবাইল ও সরকারি-বেসরকারি ল্যান্ডফোন কথোপকথন, ইন্টারনেট ও ই-মেইল তথ্য আদান-প্রদান রেকর্ড ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে সংস্থাটি।

সাবমেরিন কেবলে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখিয়ে বিশ্বের সঙ্গে ইন্টারনেট যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার সুযোগও রয়েছে এর হাতে। দূতাবাসগুলো থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যোগাযোগ ব্যবস্থাও বিটিআরসির নিয়ন্ত্রণাধীন। সাইবার ক্রাইম ও সাইবার টেররিজম এবং ই-মেইল বা টেলিফোনের মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও অপরাধীদের খুঁজে বের করার ক্ষমতাও বিটিআরসির। অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় ও জনজীবনের নিরাপত্তার জন্য অতিগুরুত্বপূর্ণ একটি সংস্থা হলো বিটিআরসি। এরকম একটি সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ভারতীয় নাগরিকদের। বিষয়টি হেলাফেলার নয় মোটেই। বিটিআরসি গঠিত হয় ২০০১ সালে। তখন ক্ষমতায় বিএনপি জোট সরকার। তথ্য যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্প্রসারণের গুরুত্ব বিবেচনা করে সংস্থাটিকে দলনিরপেক্ষ রাখতে প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় তৎকালীন সচিব সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদকে। তারপর থেকে এভাবেই চলছিল সংস্থাটি। সেনানিয়ন্ত্রিত জরুরি অবস্থার সরকারের আমলে একজন সেনা কর্মকর্তাকে বিটিআরসির চেয়ারম্যান করা হয়েছিল। বর্তমান আওয়ামী মহাজোট সরকারের আমলে তাকে সরিয়ে নিয়োগ দেয়া হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তার দায়িত্বপালনকারী ব্যক্তিকে। সেই সঙ্গে সেনাবাহিনীর সিগন্যাল কোরের টেলিযোগাযোগ বিশেষজ্ঞদের সরিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নিয়োগ দেয়া হয় ভারতীয় নাগরিকদের। এরা আইডি কার্ড ইনফরমেশনের বিভিন্ন দায়িত্বে বিটিআরসিতে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তাদের কনসালট্যান্ট টিম লিডার, ডাইরেক্টর টিসিপিএল, রেগুলেটরি সেপশালিষ্ট, টেলিকম সেপশালিষ্টসহ বিভিন্ন কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এভাবে জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাটির সপর্শকাতর পদে ভারতীয় নাগরিকদের অবস্থানের ফলে রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্যাদি ফাঁস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়াই স্বাভাবিক। কারণ এসব পদে বসে যে কারও পক্ষেই যোগাযোগ মাধ্যমে কথোপকথনসহ তথ্য আদান-প্রদানের সবকিছুই জেনে নেয়া সম্ভব। ফলে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি এখন শুধু ভারতীয়দের নাগালের মধ্যেই নয়, অনায়াসে দেশের বাইরে পাচার হয়ে যাওয়ারও সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। যারা এটা করেছেন, তারা নিশ্চয়ই অবুঝ নন। সবকিছু জেনে-বুঝেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, এটা বিশ্বাস না করার কোনো কারণ নেই। বর্তমান সরকারের ক্ষমতায় আসা নিয়ে শুরু থেকেই অনেক কানাঘুষা শোনা যাচ্ছিল। ক্ষমতাসীন দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যরাও বিভিন্ন সময়ে চমকে ওঠার মতো মন্তব্য করেছেন। সম্প্রতি দলটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক একই বিষয়ে বোমা ফাটানোর মতো বক্তব্য দিয়েছেন। এসবের ফলে এ সরকারের ক্ষমতায় আসার পেছনে দেশি-বিদেশি শক্তির মদতের ব্যাপারটি গোপন রাখা অসম্ভব হয়ে উঠেছে বলা যায়। এ সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করে দিচ্ছে মদতদাতা শক্তির পক্ষে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ। বিটিআরসির মতো গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার সপর্শকাতর পদে ভারতীয় নাগরিকদের নিয়োগ দেয়ার পেছনে একই কারণ রয়েছে-এটা বুঝতে খুব একটা কষ্ট হয় না।

No comments

Powered by Blogger.