আনন্দে ভাসছেন অধিনায়ক সামি

স্লিপে ক্যাচ ফেলেও দাঁত বের করে হাসেন ড্যারেন সামি! তাই টেস্ট সিরিজের ট্রফি জেতার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়কের হাসির 'মাপ'টা অনুমেয়। অবশ্য মাঠ থেকে ট্রফি নিয়ে সোজা প্রেস কনফারেন্স রুমে এসে সামি যা যা করলেন, সেসব যাবতীয় অনুমানকেও ছাড়িয়ে গেল! আসন নেওয়ার সময় পারলে ট্রফিটাকে বুকে জড়িয়ে বসেন। সঙ্গে বিচিত্র আনন্দধ্বনি-টনি মিলিয়ে সামি যেন বিশ্বজয়ী! যাওয়ার সময় আবার নিশ্চিত হয়ে গেলেন, 'আমি আপনাদের আনন্দ দিতে পেরেছি তো?' যেন জানিয়ে দিতে চাইলেন ক্যারিবীয়রা শুধু আনন্দে মজেই থাকে না, আনন্দের রেণুও ছড়িয়ে দিতে চায়!


ক্যাচ ফেলে ড্যারেন সামি কেন এমন নির্মল হাসেন_এ প্রশ্নটা করা হয়নি। উইকেট নেওয়ার পর প্রায় সিকি মাইল দৌড়ে তাঁর উল্লাস প্রকাশের সম্ভাব্য একটা কারণ অবশ্য বাংলাদেশের প্রেসবঙ্ েআবিষ্কৃত হয়ে গেছে, 'খুব বেশি উইকেট তো আর পান না। তাই...!' যদিও বাংলাদেশে জিতে যাওয়া ক্যারিবীয় এ দলটির টেস্ট ইনিংসে সেরা বোলিং ফিগারটা সামিরই। ২০০৭ সালে অভিষেক ইনিংসেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ইনিংসে ৬৬ রানে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। পরের ১৭ টেস্টে মাত্র ৪২ উইকেট। উইকেট পিছু ২৯.২০ গড়টাও তাই আহামরি নয়।
দাঁড়ান! এ যাবৎকালে বাংলাদেশের পক্ষে ইনিংসে সবচেয়ে বেশিবার পাঁচ কিংবা তারও বেশি উইকেট নেওয়া টেস্ট বোলার সাকিব আল হাসান। ঢাকা টেস্টে তিনি অষ্টমবারের মতো ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন। ১০ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি ১৬৮ রানও করায় ম্যান অব দ্য সিরিজ তিনি। অথচ সেই সাকিবেরও উইকেট গড় ৩১.০২। তবু সামির উইকেট প্রাপ্তির আনন্দ প্রকাশের পেছনে অবলীলায় অন্য কারণ খোঁজা হয়! ফিদেল এডওয়ার্ডস এবং কেমার রোচের লাইন-লেন্থে গণ্ডগোল বলে উড়িয়ে দেওয়া বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মনেও স্বভাবতই মিডিয়াম পেসার সামির প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধাভাব না থাকারই কথা। অবশ্য বাংলাদেশকে সত্যি সত্যি কতটা সমীহ করেছে ক্যারিবীয়রা, তা নিয়ে সংশয় আছে। কাল ম্যাচ শেষেও সাকিব আল হাসানের অদ্ভুত শট খেলে আউট হওয়া নিয়ে ড্যারেন সামির স্মৃতিচারণায় হেসে লুটোপুটি খেলেন দেবেন্দ্র বিশু। ওই অংশের ভিডিও ফুটেজটা যেন সামিকে নিয়ে ঠাট্টার জুতসই পাল্টা!
ড্যারেন সামি যখন প্রেস কনফারেন্সে বিনোদন দিতে ব্যস্ত, তখন মাঠে বাংলাদেশের আট ক্রিকেটারকে পরামর্শ দিচ্ছিলেন শিবনারায়ণ চন্দরপল। ১৩৫ টেস্টে প্রায় ১০ হাজার রান করে ফেলার অভিজ্ঞতা জানতে কার না ইচ্ছে করে! মুশফিকুর রহিম-তামিম ইকবালরা সে সেশনে শুধু শ্রোতাই নন, প্রশ্নকর্তাও। চন্দরপলের সব পরামর্শের সারমর্ম, তামিমদের ব্যাটিং দেখে মনেই হয় না যে ওদের আউট করা সম্ভব। তবে একটা সময়ে ওরা নিজেরাই উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসে। এ সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে আকাশে বল না তুলে নিচে খেলার পরামর্শ দিয়েছেন চন্দরপল। অবশ্য তিনি একা নন, একই পরামর্শ শচীন টেন্ডুলকার এবং রাহুল দ্রাবিড়ের মুখেও শুনেছেন বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা। কোনো কাজ হয়নি। চন্দরপলের পরামর্শে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মানসিকতায় রাতারাতি পরিবর্তনের সম্ভাবনা নিয়েও তাই সংশয় থাকছে।
এ সংশয় আবার দারুণ সম্ভাবনা হয়েই ধরা দিয়েছে ক্যারিবীয় বোলারদের কাছে। যদিও ড্যারেন সামির দাবি, 'বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা উইকেট ছুড়ে দিয়ে এসেছে কি না, তা নিয়ে আমি কিছু বলব না। আমি মনে করি আমাদের বোলাররা সঠিক লাইনে বল করেছে। মিরপুরের উইকেটে পঞ্চম দিনেও বোলাররা বাড়তি সুবিধা পায়নি। তাই ডিসিপ্লিনটা জরুরি ছিল। বোলাররা সেটা বজায় রাখায় আমি খুশি।' ক্যারিবীয় অধিনায়ক আরো বেশি খুশি ওয়ানডের পর টেস্ট সিরিজও জেতায়, 'যে কোনো খেলাতেই জেতাটা আনন্দের। এ ম্যাচে বাংলাদেশ লড়াই করেছে। বিশেষ করে তামিম-মুশফিক এবং মুশফিক-সাকিব জুটি ভালো খেলেছে।'
সেই ভালো খেলা খেলতে খেলতে সবাই আবার আউট হয়েছেন বাজে শট খেলে। তবে টেস্টে প্রথমবার ইনিংসে পাঁচ উইকেট প্রাপ্তির সাফল্য প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় আড়াল করবেন কেন দেবেন্দ্র বিশু, 'উপমহাদেশের উইকেট সব সময়ই স্পিনারদের সাহায্য করে। এই প্রথম ৫ উইকেট পেয়েছি। খুশি তো লাগছেই।' ক্যারিবীয় এ লেগ স্পিনার সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছেন মুশফিকুর রহিমকে আউট করে, 'বাংলাদেশ ক্যাপ্টেনের উইকেটটা পেয়ে সবচেয়ে ভালো লেগেছে।' ব্যাটসম্যানকে ধোঁকা দিয়ে উইকেট পেলে বেশি আনন্দ পান স্পিনাররা। লেন্থ না বুঝে ব্যাকফুটে বিশুকে খেলতে গিয়ে মুশফিকের বোল্ড হওয়ার ফ্রেমটা মনে নিয়েই ভারত সফরে যাচ্ছেন দেবেন্দ বিশু।

No comments

Powered by Blogger.