মায়ের বিশ্বাস সালমান এমনটা করতে পারেন না

রিবারে এসেছে নতুন সন্তান, তাকে ঘিরে ভিড় তো থাকবেই। করাচিতে সালমান বাটের বাড়িতে কিন্তু পরশু ভিড় ছিল অন্য কারণে। আর সে কারণে খুব বিরক্ত স্পট ফিঙ্ংিয়ের দায়ে অভিযুক্ত সাবেক পাকিস্তান অধিনায়কের পরিবার। মিডিয়ার বিরুদ্ধে 'অসহযোগিতা'র অভিযোগ তাদের, আর সেই সঙ্গে দাবি ইংল্যান্ডের আদালতে দোষী সাব্যস্ত হলেও সালমান আসলে নিরপরাধ!তবে সালমান নিজেকে যতই নিরপরাধ দাবি করুন, তাঁর আর সতীর্থ মোহাম্মদ আসিফের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ আদালতে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তোলপাড় চলছে ক্রিকেট-বিশ্বে।


পাকিস্তানের তো বটেই, সারা বিশ্বেরই সাবেক ক্রিকেটাররা গলা মিলিয়ে বলছেন, এ ঘটনা ক্রিকেট দুর্নীতির সঙ্গে সংশিষ্ট ব্যক্তিদের জন্য একটি সতর্ক সংকেত। আর এ সতর্কবার্তায় জেগে ওঠার সময় এসেছে আইসিসির। আইসিসির নিষ্ক্রিয়তায় তাদের কেউ কেউ যখন ক্ষুব্ধ, তখন ঘুম ভাঙছে আইসিসিরও। পাকিস্তানেরই অন্য দুই ক্রিকেটার ওয়াহাব রিয়াজ ও কামরান আকমলের বিরুদ্ধে নতুন করে তদন্ত শুরু করতে যাচ্ছে তারা।
মঙ্গলবার লন্ডনের সাউথওয়ার্ক ক্রাউন কোর্টে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে সালমানের বিরুদ্ধে আর সেই দিনই করাচিতে জন্ম হয়েছে তাঁর পুত্রসন্তানের। রায় ঘোষণার পর সাংবাদিকরা প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে এড়িয়ে গেছেন তাঁর বোন, 'আপনাদের বুঝতে হবে, অভিযোগ ওঠার পর থেকেই মিডিয়া ট্রায়াল করা হচ্ছে সালমানের; দারুণ অসহযোগিতা করা হচ্ছে আমাদের সঙ্গে।'
এর আগে সালমানের মা তাঁর ছেলের সম্ভাব্য শাস্তি প্রসঙ্গে বলেন, 'আল্লাহই সবাইকে সম্মান দেন, তিনিই ঠিক করেন কখন কী কারণে কাকে অপমানিত হতে হবে। সব কিছু আমি আল্লাহর ওপরেই ছেড়ে দিলাম। তবে ছেলেকে আমরা যেভাবে বড় করেছি, তাতে আমি নিশ্চিত ওর কোনো দুর্নীতিতে জড়িত হওয়ার কথা নয়।'
তবে সালমান বাটের পরিবার যতই তাঁর পক্ষে সাফাই গেয়ে যাক, ক্রিকেট-বিশ্বের জনমত মোটেই তাঁদের পক্ষে নয়। ভারতীয় অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির যেমন সহজ সরল প্রতিক্রিয়া, 'অপরাধ করলে শাস্তি তো পেতেই হবে।'
সালমানদেরই সতীর্থ জুলকারনাইন হায়দার তো এখন গলা ফাটাচ্ছেন, 'আমি যখন ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব পাওয়ার কথা বলেছিলাম তখন আমাকে কত কী যে বলা হয়েছে। এখন তো প্রমাণিত হলো যে পাতানো খেলা হচ্ছে।' গোপন ক্যামেরায় ধারণ করা যাঁর সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে উদ্ঘাটিত হয়েছে সালমানদের অপকর্ম, সেই মাজহার মাজিদের বক্তব্যে যাঁদের নাম এসেছে তাঁদের সবার সম্পদের হিসাব নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার-সংগঠকরা আবার এ অবস্থার জন্য দায়ী করছেন প্রশাসনকে। পিসিবি তো বটেই, আইসিসিকেও। সাবেক ফাস্ট বোলার সরফরাজ নেওয়াজের চাঁচাছোলা বক্তব্য, 'আইসিসির তথাকথিত দুর্নীতি দমন ইউনিটটাই যত নষ্টের মূল। টাকা খেয়ে ওরা দুর্নীতি ধামাচাপা দেয়, তারই পরিণতিতে আজ সৃষ্টি হয়েছে এ অবস্থা।'
পিসিবির সাবেক প্রধান শাহরিয়ার খানের চোখে আবার দোষটা পাকিস্তানের ক্রিকেট প্রশাসনের, 'মাজহার মাজিদের মতো লোক খেলোয়াড়দের হোটেল রুমে আসছে-যাচ্ছে, এটা কি ওরা জানত না? দলের কোচ ম্যানেজার কী করছিল? আর ওই লোকটাকে সাত-আটজন ক্রিকেটারের নাম বলল, তারপর পিসিবি কি এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে?'
একই বক্তব্য পাতানো খেলার বিরুদ্ধে বরাবরের জেহাদি রশিদ লতিফের, 'কাইয়ুম কমিশনের রিপোর্টের পর পিসিবির বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া উচিত ছিল ক্রিকেটকে কলঙ্কমুক্ত করতে। কিন্তু ওই কমিশনের রিপোর্টটাই তো বাস্তবায়িত হয়নি।'
আইসিসির প্রধান নির্বাহী হারুন লরগাত অবশ্য মনে করেন, বসে নেই আইসিসি। এবং তাঁর ধারণা, বাট-আসিফদের বিরুদ্ধে আদালতের কার্যক্রম আসলে পাতানো খেলার সঙ্গে জড়িতদের জন্য একটা সতর্কবার্তা। এবার হয়তো তারা বুঝতে পারবে, দুর্নীতি করে আর পার পাওয়া যাবে না! ওয়েবসাইট

No comments

Powered by Blogger.