পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদনে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি

রমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে রাশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে গতকাল বুধবার। এই চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদনের পথে আরেক ধাপ এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়ার সহায়তায় পাবনার রূপপুরে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ২০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে।প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চামেলী হলে গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান বাংলাদেশের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।


রাশিয়ার পক্ষে চুক্তিতে সই করেন সে দেশের পরমাণু শক্তি করপোরেশন-রোসাটমের মহাপরিচালক সের্গেই কিরিয়েংকো।চুক্তি অনুযায়ী পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে রাশিয়া সব ধরনের সহায়তা দেবে। অবকাঠামো, মানবসম্পদ উন্নয়নসহ দীর্ঘ মেয়াদে
প্রয়োজনীয় পরমাণু জ্বালানি সরবরাহ করবে রাশিয়ান ফেডারেশন। চুক্তির শর্তাবলি বাস্তবায়নে রাশিয়ান ফেডারেশনের পক্ষে দ্য স্টেট অ্যাটমিক অ্যানার্জি করপোরেশন এবং বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সার্বিক দায়িত্ব পালন করবে। এ ছাড়া রাশিয়ান ফেডারেশনের পক্ষে জয়েন্ট স্টক কম্পানি 'অ্যাটোমসট্রয়েঙ্পোর্ট' ঠিকাদার ও বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন ক্রেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে।
চুক্তি স্বাক্ষরের পর দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটারে প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এই চুক্তির আওতায় রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। এতে প্রতিটি ১০০০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিট থাকবে।
প্রতিমন্ত্রী জানান, অর্থায়নের বিষয়টি চুক্তিতে নিশ্চিত করা না হলেও পরে এ বিষয়ে রাশিয়া ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে আরেকটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। কবে নাগাদ এর কাজ শুরু হবে তা তিনি জানাতে পারেননি। তবে এখান থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ১০০০ ও পরের দুই বছরে আরো ১০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
জাপানের ফুকুশিমায় পরমাণু কেন্দ্র বিস্ফোরণের উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে জানতে চাওয়া হয়, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে বাংলাদেশ কতটুকু প্রস্তুত? উত্তরে রাশিয়ান প্রতিনিধি জানান, রূপপুরের পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রে পাঁচটি বিশেষ দিক বিবেচনায় রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ডাবল প্রোটেকশন সিস্টেম, হিট জেনারেটর সিস্টেম ও হাইড্রোজেন প্রসেসিং সিস্টেম অন্যতম। ফলে এই পরমাণু কেন্দ্র নিরাপদ হবে।
চীন, ফ্রান্সসহ বেশ কয়েকটি দেশ বাংলাদেশে পরমাণু প্রকল্প স্থাপনে সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ করলেও কাজটি কেন রাশিয়াকে দেওয়া হলো_ এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান বলেন, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের তেজষ্ক্রিয় বর্জ্য বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর। আর রাশিয়া নিজ দায়িত্বে এসব বর্জ্য নিতে চাওয়ায় কাজটি তাদের দেওয়া হয়েছে।
সম্মেলনে জানানো হয়, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে মূলধনী ব্যয় প্রচলিত বিদ্যুৎ উৎপাদনের চেয়ে কিছুটা বেশি হলেও পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ সবচেয়ে কম। পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদনে সামগ্রিক জ্বালানি ব্যয় হিসাব করলে তা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানি ব্যয়ের এক-তৃতীয়াংশ ও গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এই চুক্তির অধীনে প্রকল্প এলাকায় দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে অর্থায়নের বিষয়ে উভয় সরকারের মধ্যে পৃথক প্রটোকল স্বাক্ষর হবে। এর আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে দুই দেশের মধ্যে এ-সংক্রান্ত একটি সমঝোতা স্মারক ও একটি ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৩১ অক্টোবর বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তা ও আইনি কাঠামো উন্নয়ন-সংক্রান্ত সহযোগিতা চুক্তি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেওয়া হয়।

No comments

Powered by Blogger.