সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে ভাটা by ওবায়দুল্লাহ রনি

লতি অর্থবছর বাড়ানো হয়েছে সঞ্চয়পত্রের সুদ হার। বাড়ানো হয়েছে বিনিয়োগ সীমা। উৎসে কর কর্তনের হার কমিয়ে পাঁচ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। তারপরও সঞ্চয়পত্র বিনিয়োগে ভাটা পড়েছে। ২০১০-১১ অর্থবছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ১ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল। চলতি অর্থবছরের তিন মাসে নিট বিক্রি দাঁড়িয়েছে ৪৯৮ কোটি টাকা। সে হিসাবে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯৩৫ কোটি টাকা বা ৬৫ দশমিক ২৪ শতাংশ বিক্রি কমেছে। সঞ্চয়পত্রের সুদ হার ও আরোপিত করের বিষয়টি সাধারণ মানুষের কাছে পরিষ্কার না থাকা, ব্যাংকের সুদ হার বাড়াসহ নানা কারণে এমন হয়েছে বলে অর্থনীতিবিদদের ধারণা।


এ বিষয়ে জাতীয় সঞ্চয় পরিদফতরের পরিচালক কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ সমকালকে বলেন, সাধারণত নির্দিষ্ট আয় ও অবসরপ্রাপ্তরা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেন। ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে সঞ্চয়পত্রে সুদ হার ও উৎসে আয়কর কর্তনের বিধান নিয়ে বিভ্রান্তি আছে। সে সময়ে কর কর্তন একই সঙ্গে সুদ হার কমানোর ফলে মানুষ বিকল্প পথে বিনিয়োগ করেছে। পরে সুদ বাড়ানো ও কর কর্তনের হার কমানো হলেও সাধারণ মানুষের কাছে তা পরিষ্কার নয়। এসব কারণে গত বছর অনেকেই এখান থেকে টাকা তুলে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছেন। দরপতনের ফলে বেশিরভাগই সেখান থেকে বের হতে পারছেন না। সালেহ উদ্দিন বলেন, মূল্যস্ফীতি বাড়ার ফলে সাধারণ মানুষ সংসার চালিয়ে এখন আর সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের মতো টাকা পাচ্ছেন না। যাদের হাতে বিনিয়োগের মতো টাকা আছে ব্যাংকের সুদ বেশি থাকায় সে দিকে যাচ্ছে। এসব কারণে বিক্রি কমছে বলে তিনি মনে করেন।
সঞ্চয়পত্র পরিদফতরের তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ব্যাংকের মাধ্যমে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি দাঁড়িয়েছে ৪২ কোটি ১১ লাখ টাকা। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ১৬২ কোটি ৭২ লাখ টাকা। সঞ্চয় ব্যুরোর মাধ্যমে বিক্রি হয়েছে ৩৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। আগের বছরের এ সময়ে যা ছিল ১২২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। ডাকঘরের মাধ্যমে তিন মাসে বিক্রি হয়েছে ৭৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, গত বছর যা ছিল ১৬২ কোটি ৭২ লাখ টাকা।
তথ্য মতে, সরকার দেশের মধ্যে ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত এই দুই উৎস থেকে ঋণ নিয়ে থাকে। এবার সঞ্চয়পত্র বিক্রি ব্যাপক হারে কমার ফলে ব্যাংক ঋণের ওপর অনেকটা নির্ভর হয়ে পড়েছে। চলতি অর্থবছরের ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার নিট ঋণ নিয়েছে ১১ হাজার ৫৮১ কোটি টাকা। এতে করে সরকারের মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে ৮২ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে এ খাতে নিট ঋণ ছিলো ৯৭০ কোটি টাকা। সে হিসাবে একই সময়ের তুলনায় ১০ হাজার ৬১১ কোটি টাকা বা কয়েক গুণ বেশি ঋণ নিতে হয়েছে সরকারকে। সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ এলে সরকারের ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর এত বেশি নির্ভর করতে হতো না বলে ধারণা করা হয়। এছাড়া আশানুরূপ রাজস্ব আদায় না হওয়া, পর্যাপ্ত বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান না আসা, রেমিট্যান্স প্রবাহে ধীরগতিসহ নানা কারণে সরকারকে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে অতিরিক্ত ঋণ নিয়ে বাজেট ব্যয় মেটাতে হচ্ছে বলে জানা গেছে।

No comments

Powered by Blogger.