আমার দেশ সম্পাদকের গাড়িতে হামলা ফ্যাসিবাদী মত্ততার আরেক দৃষ্টান্ত

বুধবার দুপুরে আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে বহনকারী গাড়িতে দুর্বৃত্তদের হামলার ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন হলেও অবাক অথবা বিচলিত হইনি। বর্তমান সরকারের প্রশ্রয়পুষ্ট 'সোনার ছেলেরা' দেশজুড়ে সাংবাদিক দমনের যে অভিযান শুরু করেছে, মাহমুদুর রহমানের গাড়িতে হামলা তারই ধারাবাহিকতা মাত্র। তবে পার্থক্য হচ্ছে, এর মধ্য দিয়ে জানা হয়ে গেল সাংবাদিকরা, বিশেষ করে ক্ষমতাসীনদের অপছন্দের সাংবাদিকরা মফস্বলে তো বটেই, খোদ রাজধানীতেও নিরাপদ নন।
আলোচ্য ঘটনায় মাহমুদুর রহমান তার উত্তরাস্থ অফিস থেকে কারওয়ানবাজারে আমার দেশ-এর অফিসে আসছিলেন। এটা তার দৈনিক রুটিন। হামলাকারীরা বিষয়টি জানত। তাকে নিয়মিত অনুসরণকারী সাদা পোশাকধারীদেরও এ রুটিন অজানা ছিল না। তার গাড়িটি বিমানবন্দর সড়ক ধরে আর্মি ষ্টেডিয়ামের কাছাকাছি পৌঁছলে মোটরসাইকেল আরোহী দুই দুর্বৃত্ত গাড়িতে বোমাসদৃশ একটা বস্তু ছুড়ে মেরে দ্রুত পালিয়ে যায়। এতে গাড়িটির সামান্য ক্ষতি হলেও কোনো বিসেফারণ না ঘটায় তিনি অক্ষত অবস্থায় প্রাণে বেঁচে গেছেন। হয়তো দুর্বৃত্তরা তাকে 'সোজা পথে আসার' জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে এ হামলা চালিয়েছে। এই হামলার বিরুদ্ধে দেশব্যাপী প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন ছাড়াও সাংবাদিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিত্বকারী ব্যক্তি কাঠোর ভাষায় এ হামলার নিন্দা করেছেন। অবশ্য এতে হামলাকারী দুর্বৃত্ত অথবা তাদের গডফাদারদের হৃদয়ে শুভ পরিবর্তন ঘটবে তেমন আশা আমরা করি না। আমার দেশ-এর ওপর একটি বিশেষ মহল যে রুষ্ট তার আলামত কিছুদিন থেকেই পাওয়া যাচ্ছিল। বিভিন্ন স্থানে আমার দেশ প্রতিনিধিদের ওপর হামলা, তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের, আমার দেশ-এর কপি পোড়ানো ইত্যাদি ঘটনা ছাড়াও মোবাইল ফোনে হুমকি দেয়া বার্তা আসছিল এ পত্রিকায় কর্মরত একাধিক জনের নামে। বিশেষ করে কারও প্রতি অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী না হয়ে কোদালকে কোদাল বলার নীতি দৃঢ়ভাবে অনুসরণ করতে থাকায় ছিঁচকে চোর থেকে মহাচোর পর্যন্ত অনেকে এই পত্রিকাকে তাদের শত্রু ভাবতে শুরু করেছে। স্বাধীন বাংলাদেশের সার্বভৌম শক্তিকে যারা নড়বড়ে করে ফেলতে চায়, তারাও আমার দেশ-এর অবিকৃত সত্যকথন সহ্য করতে পারছে না-সে আলামত ক্রমেই সপষ্ট হয়ে উঠছিল। এ পটভূমিতে মাহমুদুর রহমানের গাড়িতে হামলা আরও বড় হামলার প্রস্তুতি কিনা আমরা জানি না। বর্তমান সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন স্তরের লোকজন সাধারণভাবে গণমাধ্যমের ব্যাপারে দিন দিন যেভাবে অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে তাতে এ হামলার সঙ্গে তাদের কারো না কারোর সংশ্লিষ্টতা আছে বলে সন্দেহ জাগে। বিশেষ করে আওয়ামী ঘরানা এবং এনজিও ঘরানার পত্রিকা হিসেবে পরিচিত সংবাদপত্রের সাংবাদিকরা পর্যন্ত যখন হামলার শিকার হচ্ছেন তখন এ সন্দেহ দৃঢ়তর হয়। আমরা লক্ষ্য করেছি, অন্তত দুটি দৈনিক মাহমুদুর রহমানের গাড়িতে হামলার বিষয়টি এমন ভঙ্গিতে প্রকাশ করেছে, যেন এ ঘটনায় তারা বেশ মজা পেয়েছে। যদিও পত্রিকা দুটির একাধিক সাংবাদিক আওয়ামী সন্ত্রাসের ভুক্তভোগী। অবক্ষয়ের যুগে সবই সম্ভব বলে আমরা এসব আচরণে বিচলিত হই না। আমরা শুধু বলতে চাই, আমার দেশ জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে, সত্য ও ন্যায়ের প্রশ্নে, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কখনও কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেবে না। এতে কে শত্রুতা করল, কে বোমা ফাটাল তা আমাদের জন্য বিবেচ্য বিষয় নয়। পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীদের উদ্দেশে আমাদের বক্তব্য- 'অসত্যের কাছে নত নাহি হবে শির, ভয়ে কাঁপে কাপুরুষ লড়ে যায় বীর।'

No comments

Powered by Blogger.