সামির কথা মানতেই হচ্ছে মুশফিককে

কটা দল জয়ের লক্ষ্য নিয়ে শুরু করেছিল শেষ দিনের খেলা। সে ম্যাচ তারা হেরে গেল কিনা ২২৯ রানে! অবিশ্বাস্য বললেও কি কম বলা হয় না?দলের প্রতিনিধি হয়ে নাঈম ইসলাম কথাটি বলেছিলেন আগের দিন। দলেরথিংক-ট্যাংকের চিন্তাভাবনা অমন কি না, তা নিয়ে তবু সংশয়ের বাতাবরণ ছিল খানিকটা। কাল ম্যাচ শেষে মুশফিকুর রহিমও জানালেন, ৫০৮ রান তাড়া করে জিততেই চেয়েছিল বাংলাদেশ। পারল যে না, এর কারণ বিশ্লেষণ করেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, 'জয়টা বড়, তবে ড্র-ও কম বড় নয়। আমরা পরিকল্পনা করেছিলাম প্রথম সেশনে সর্বোচ্চ দুই উইকেট যদি যায়, তাহলে হয়তো ওদের জন্য কঠিন হবে আমাদের অলআউট করা।


দুর্ভাগ্যজনকভাবে তামিম আউট হওয়ার পর আমি আর সাকিব খেলছিলাম। আমরা লাঞ্চের পর খেলতে পারলে ব্যাপারটা অন্য রকম হতো। আমার মনে হয়, সাকিবের আউটটা অনেক বড় টার্নিং পয়েন্ট ছিল। ও আউট হওয়ার পর আমিও আউট হয়ে গেলে প্ল্যান অনুযায়ী কাজ করা কঠিন হয়ে গেছে।' এই উইকেটে হারের দোষটা যে ব্যাটসম্যানদের বেশি, তা-ও স্বীকার করেছেন মুশফিক, 'ওদের বোলাররা যত না আমাদের আউট করেছে, আমরা নিজেরা নিজেদের আউট করেছি বেশি। খুব কমই আমরা ভালো বলে আউট হয়েছি। খেলা শেষে চন্দরপলের সঙ্গে কথা বলছিলাম। ও একটা কথাই বলেছে, কখনো মনে হয়নি আমরা তোমাদের আউট করছি। তোমরা নিজেরাই নিজেদের আউট করছ।' এটি যে চন্দরপলই প্রথম বলেননি, তা-ও স্বীকার করেছেন মুশফিক। এরপর বলেছেন অসহায়ের মতো, 'এটা অনেকেই বলছে এবং আমরা নিজেরাও জানি। জানি সবকিছু; কিন্তু কাজে লাগাতে পারছি না। এটাই হচ্ছে ব্যর্থতা।'
প্রথম ইনিংসে বড় ব্যবধানে পিছিয়ে থাকাই হারের বড় কারণ হিসেবে দেখছেন মুশফিক। সেই সঙ্গে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন ব্যাটসম্যানদের বড় ইনিংসে খেলতে না পারাকে, 'চট্টগ্রামে বলেছিলাম, আমরা প্রায় সাত-আটজন ব্যাটসম্যান ৫০-৬০ রান করেছি। এখানে আবার কয়েকজন ৩০-৪০ রান করেছি। এ রকম হলে টেস্ট জেতা কঠিন। টেস্টে আপনি শুরুতে আউট হতে পারেন। কিন্তু সেট হয়ে গেলে আপনাকে বড় স্কোর করতে হবে। যেটা ওরা করেছে। কার্ক এডওয়ার্ডস সেঞ্চুরি করেছে, ৮৬ করেছে। ব্রাভো ১৯৫ করেছে। টেস্ট জিততে বা ড্র করতে আমার মনে হয় এ রকম বড় ইনিংস খেলা খুব জরুরি। এই জায়গায় আমাদের সমস্যা আছে।' প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে খুব বেশি না খেলাই এর কারণ বলে মেনেছেন অধিনায়ক। সেটিকেই বলছেন টেস্টে এত দিন পরও বাংলাদেশের শক্ত জমিনে দাঁড়াতে না পারার কারণ, 'ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে আমরা যদি না জানি কিভাবে ১০০, কিভাবে ১৫০, কিভাবে ২০০ রান করতে হয়, সেই অভ্যাস না থাকলে সমস্যা তো হবেই। আর টেস্ট ক্রিকেট কিন্তু খুব কঠিন খেলা। এখন এমন প্রযুক্তি এসেছে যে প্রতিপক্ষ আপনার শক্তি-দুর্বলতা সব জেনে যায়। এখান থেকে বের হয়ে ১০০-১৫০-২০০ রান করা খুব কঠিন। আমরা চার দিনের ম্যাচ খুব একটা খেলার সুযোগ পাই না। আর যাঁরা খেলেন, খুব একটা বড় রান করতে পারেন না। এটা নিয়ে আমাদের অবশ্যই ভাবতে হবে। আমার মনে হয়, এ কারণেই গত ১০ বছরে আমরা টেস্ট ক্রিকেটে সফল না।'
কোচ স্টুয়ার্ট ল যে বলেছিলেন, সুন্দর ৪০ রানের চেয়ে কুৎসিত সেঞ্চুরি বেশি জরুরি_সেটা মানতে দ্বিধা নেই মুশফিকের। কিন্তু ব্যাটসম্যানরা আত্মতৃপ্ত হয়ে উইকেট ছুড়ে আসেন, সেটা মানছেন না তিনি, 'আমাদের মধ্যে এটা কম থাকার কথা। আমাদের গড় কিন্তু ৪০-৫০ বা ৬০ না যে আমরা গিয়েই ৫০ করলাম, গড়টা ঠিক থেকে গেলে। যা ইচ্ছা মেরে চলে এলাম। আমাদের গড় ২৫-২৬-৩০, সর্বোচ্চ হয়তো ৪০। আমাদের চিন্তা থাকে যেদিন আমরা সেট হব সেদিন বড় ইনিংস খেলব। ব্যাটিংয়ে মাঝেমধ্যে আমাদের মনোসংযোগে চিড় ধরে। একজন আউট হয়ে গেলে আরেকজন মনোযোগ হারিয়ে ফেলে। এগুলো নিয়ে কাজ করা দরকার।'
হেরে যাওয়া সিরিজে খণ্ড খণ্ড প্রাপ্তি আছে। তবে 'কাজ করার' আছে বোধ হয় এর চেয়ে বেশি।

No comments

Powered by Blogger.