ঈদের পর বিপর্যয়ের আশঙ্কা অনলাইন ব্যাংকিংয়ে by সজল জাহিদ

দের পর ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরের অনলাইন ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নেটওয়ার্ক সংক্রান্ত জটিলতায় বিপর্যয়ের মুখে পড়তে যাচ্ছে। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর নেটওয়ার্ক ট্রান্সমিশন ভাড়ার ওপর ১০ নভেম্বর থেকে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় এ আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। নিষেধাজ্ঞার কারণে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও বগুড়া ছাড়া অন্য সব জেলার কেবলভিত্তিক ইন্টারনেট সেবায়ও বিঘ্ন ঘটবে। এরই মধ্যে গ্রামীণফোন, বাংলালিংক ও সিটিসেল তাদের কাছ থেকে নেটওয়ার্ক ভাড়া নেওয়া গ্রাহকদের বিটিআরসির নির্দেশনার কথা জানিয়েছে।


মোবাইল অপারেটরদের চিঠিতে উদ্বিগ্ন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন (আইএসপিবি) টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে বিপর্যয়কর পরিস্থিতি এড়াতে অনুরোধ জানিয়েছে। তারা বলছে, ঢাকার বাইরের ৯০ শতাংশ অনলাইন যোগাযোগ এ তিন মোবাইল অপারেটরের নেটওয়ার্কের ওপর তৈরি। বিকল্প ব্যবস্থা না করে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলে বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। তাছাড়া প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এমন রাতারাতি সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে চরম নেতিবাচক প্রভাব এ সেক্টরের ওপর পড়বে বলেও মনে করে তারা। এক্ষেত্রে বিটিআরসি যে বিকল্পের কথা বলছে তা এখনও প্রস্তুত হয়নি। তিন বছর আগে দেশব্যাপী ফাইবার অপটিকের নেটওয়ার্কিংয়ের জন্য এনটিটিএন লাইসেন্স দেওয়া হয়। এখন পর্যন্ত তারা বড় কয়েকটি শহরের বাইরে
যেতে পারেনি। ফলে গ্রামীণফোন, বাংলালিংক বা সিটিসেলের ফাইবারের ওপরই দূর-দূরান্তের গ্রাহকদের ভরসা করতে হচ্ছে। এনটিটিএন কোম্পানি 'ফাইবার অ্যাট হোম'ও সিটিসেলের কয়েকশ' কিলোমিটার নেটওয়ার্ক ভাড়া নিয়ে কাজ চালাচ্ছে। তারপরও নিজেদের নেটওয়ার্ক ৯০ উপজেলায়ও নিতে পারেনি তারা। অন্য এনটিটিএন 'সামিট কমিউনিকেশন' এখনও ঢাকার বাইরে বেরোতে পারেনি। অথচ তিন মোবাইল অপারেটরের নেটওয়ার্ক দেশের সর্বশেষ উপজেলায়ও রয়েছে। শুধু বাংলালিংকেরই মাটির নিচে তিন হাজার কিলোমিটার ফাইবার বিছানো আছে বলে জানান অপারেটরটির হেড অব ইনফ্রাস্ট্রাকচার শেয়ারিং অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক বিজনেস মাহবুব আলম। তিনি বলেন, সরকার চাইলে মোবাইল অপারেটরদের এ ব্যবসা বন্ধ করে দিতে পারে; কিন্তু তাতে অনলাইন ব্যাংকিংয়ে লেজে গোবরে অবস্থার সৃষ্টি হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, অনলাইন ব্যাংকিংয়ে নেটওয়ার্কিংই হলো মূল শক্তি। নেটওয়ার্কিংয়ে সমস্যা হলে সবকিছুতেই গড়বড় হবে। অনলাইন লেনদেনসহ এমটিএম বুথও তখন কাজ করবে না। জানা গেছে, ব্যাংকগুলো জেলা-উপজেলা পর্যায়ে আইএসপির কাছ থেকে নেটওয়ার্কিং সেবা নেয়। আর আইএসপিরা পাইকারি দরে এ সেবা নেয় গ্রামীণফোন, বাংলালিংক ও সিটিসেলের ব্যাকহোলের মাধ্যমে। ফলে তিন মোবাইল অপারেটরের নেটওয়ার্কিং বন্ধ হলে হাজার হাজার গ্রাহক অনলাইন ব্যাংকিংয়ের সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন।
এমন বিপর্যয়ের আশঙ্কায় বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না হলে তারাই এ বিষয়ে উদ্যোগ নিয়ে সরকারের কাছে যাবে। ব্যাংকিং সেক্টরের ক্ষতি করে বিটিআরসিকে কোনো কিছু করতে দেওয়া হবে না বলেও জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক এএইচএম কায়সার। অন্যদিকে অনলাইনভিত্তিক বেসরকারি ব্যাংক ব্র্যাকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, সরকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত না নিলে তাদের বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।
এদিকে বিটিআরসির সিদ্ধান্ত বিষয়ে মতামত চেয়েছে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। তবে বিটিআরসি এখনও সাড়া দেয়নি। গত জুলাইয়ে অবকাঠামো ভাগাভাগি সংক্রান্ত নীতিমালায় সংশোধন করে বিটিআরসি জানায়, মোবাইল ফোন অপারেটররা নিজেদের কাজে ব্যবহার করা ছাড়া অপটিক্যাল ফাইবারের এসব নেটওয়ার্ক অন্য কারও কাছে ভাড়া দিতে পারবে না। বিটিআরসির এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটবের সেক্রেটারি জেনারেল আবু সাঈদ খান বলেন, সরকারকে বিষয়টি পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানানো হয়েছে। ৪০ কোটি ডলার খরচ করে বানানো নেটওয়ার্কের সঙ্গে অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থান এবং সেবা নিশ্চিত করার বিষয় জড়িত। এগুলো বিবেচনায় নিয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
অন্যদিকে আইএসপিবির সাধারণ সম্পাদক এমএ হাকিম বলেন, বিটিআরসিকে মনে রাখতে হবে মোবাইল ফোন অপারেটরের সংযোগ ছাড়া রাজধানীর বাইরের নেটওয়ার্ক শূন্যপ্রায়। তাছাড়া এনটিটিএন কোম্পানি কোনো অবস্থায় মোবাইল অপারেটরদের মতো সেবা দিতে পারবে না বলেও জানান তিনি। এতে গ্রাহক ভোগান্তি অনেক বাড়বে।
এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে বিটিআরসির কেউ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে 'ফাইবার অ্যাট হোমে'র এক কর্মকর্তা দাবি করেন, বিটিআরসির এ সিদ্ধান্তে ঢাকার বাইরের খুব বেশি জায়গায় নেটওয়ার্ক সংক্রান্ত সমস্যা হবে না।

No comments

Powered by Blogger.