দার্শনিক সমালোচক আল-গাজালির ভক্তিবাদ by স্বকৃত নোমান

বিশাল সমদু্রের পর আরো বিশাল আছে যেখানে মানুষ যেতে পারে না। কিন্তু যতটুকু যাওয়া সম্ভব ততটুকু যেতে ক্ষতি কোথায়? সুউচ্চ হিমালয়ে কিংবা এভারেস্টে উঠতে পড়ে যাওয়ার ভয় থাকে, গম্য সমদু্র দিয়ে অগম্য সমদু্র পর্যন্ত যেতে ডুবে যাওয়ার শঙ্কা থাকে, তাই এসব শঙ্কা-ভয় উপেক্ষা করার মন-মানসিকতাসম্পন্ন সাহসী ও মানবান ব্যক্তির পক্ষে অগম্য পর্যন্ত যাওয়া উত্তম গম্য অতিক্রম করে। আর এরপর যে অগম্য সমদু্র আছে সেখানে যাওয়া যাবে না, তাকে অনুভূতির মাধ্যমে ধারণ করে নিতে হয়।

উপরোক্ত কনসেপ্ট প্রদানের উদ্দেশ্য আল গাজালি ও তার ভক্তিবাদ সম্পর্কে ধারণা দেওয়া। গাজালি উপকূলে বসে হাহুতাশ না করে দর্শন সমদু্রের যতটুকু যাওয়া সম্ভব ততটুকু গেছেন, অগম্য দর্শন সমদু্রকে তিনি অনুভূতি ও ভক্তি ্টারা হূদয়ে ধারণ করতে প্রচেষ্ঠা চালিয়েছেন। গাজালির দর্শন পাঠ করে আমরা এ সিদ্ধানেস্ন উপনীত হতে পারি যে, তিনি মানুষের জ্ঞানকে দেখেছেন সসীম হিসেবে আর পরমসত্তাকে দেখেছেন অসীম হিসেবে। তাই সসীম জ্ঞান ্টারা অসীম জ্ঞানের সাক্ষাৎ অসম্ভব। তার মতে_ প্রচলিত বিশ্বাস আর খ-বদুিব্দ_ এ দুয়ের কোনোটাই পরমার্থিক সত্তার অখ- অপরোক্ষ জ্ঞান দিতে পারে না। এর জন্য চাই এমন এক উচ্চতর মরমি অভিজ্ঞতা যা অর্জিত হয় সুফিবাদের এক উচ্চতর পবরাউ। আল্লাহর যথার্থ জ্ঞান পাওয়া সম্ভব এ প্রক্রিয়ারই সর্বোচ্চ পর্যায়ে। সাধারণ মানুষ পার্থিব বিষয়াদি নিয়ে এতই ব্যতিব্যস্ত থাকে যে, তাদের পক্ষে এ উচ্চতম ঐশী জ্ঞান অর্জন সম্ভব নয়। আবার নিত্যদিনকার যুক্তি-বিচারে আস্থাশীল তার্কিক মানুষও আল্লাহকে দেখে থাকেন পৃথিবীর সঙ্গে তার সম্পর্কের প্রেক্ষিতে। সাধারণ মানুষের পক্ষে যেমন, এসব তার্কিক মানুষের পক্ষেও তেমনি অখ- অপরোক্ষ ঐশী জ্ঞান অর্জন সম্ভব নয়।
আল গাজালি ভক্তি বা অনুভূতিকেই পরমসত্তার সন্ধান লাভের একমাত্র উপায় বলে মনে করছেন। তার সর্বশেষ অভিমত এ হলেও তিনি কিন্তু যুক্তি-তর্ক চর্চা করেই তার অভিমতে পপৌঁছেছেন। প্রথম জীবনে তিনি নব্য প্লেটোবাদী ও অন্যান্য সব দর্শনকে আয়ত্ত করেছেন গভীরভাবে। কিন্তু এসব দর্শন থেকে তিনি যে কোনো কারণে আধ্যাত্দি্মক প্রশ্নাবলির সদুত্তর পাননি। না পেয়েই গাজালি ঝুঁকে পড়েন সুফিবাদের দিকে।
ইমাম আল গাজালি ১০৫৮ খ্রিস্টাব্দে (মৃত্যু-১১১১) ইরানের খোরাসান প্রদেশের অন্তর্গত তুসনগরীর তাবারান নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। প্রকৃত নাম আবু হামেদ মোহাম্মদ গাজালি। কিন্তু ইমাম গাজালি নামেই তিনি ব্যাপক পরিচিত। জানা যায়, গাজাল শব্দের অর্থ সুতাকাটা তার পিতা মোহাম্মদ কিংবা পূর্বপুরুষরা সম্ভবত সুতার ব্যবসা করতেন। তাই উত্তরাধিকার হিসেবে তিনি গাজালি উপাধি পান।
শৈশবে পিতা-মাতাকে হারিয়ে গাজালি প্রতিপালিত হন তার বাবার এক সুফি বন্দুর তত্ত্বাবধানে। অল্প বয়সেই আইন, ফিকহ, ধর্মতত্ত্ব, দর্শন প্রভৃতি বিষয়ে তিনি ব্যাপক অধ্যয়ন করেন। আশারিয়া পণ্ডিত আল-জুবাইনি গাজালির শিক্ষকদের মধ্যে অন্যতম। এছাড়া সুফি আল-ফারমাধির কাছ থেকে মরমিত্ব অধ্যয়ন ও অনুশীলনে প্রত্যক্ষ সহায়তা লাভ করেন। সেলজুক সুলতান মালিক শাহেব বিদ্যানুরাগী মন্ত্রী নিজামুল মুলকের সঙ্গে পরিচয়ের ঘটনার সন্দে যুক্ত ছিল গাজালির কর্মবহুল ও সফল পাণ্ডিত্যপূর্ণ জীবন। ১০৯১ খিস্টাব্দে গাজালি নিশাপুরের নিজামিয়া একাডেমির প্রধান নিযুক্ত হন এবং এ পদে ৫ বছর বহাল থাকেন। ১০৯২ খ্রিস্টাব্দে একজন ঈসমাইলীয় ঘাতকের হাতে নিজামুল মুলকের মৃত্যু, এরপর সুলতান মালিক সাহেব মৃত্যু তাকে খুব বেশি হতাশ করে। এতে তিনি শিক্ষকতার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে সুফি অনুশীলনে মনোনিবেশ করেন।
তার নিজের বিবরণানুয়ায়ী, পরসঙ্রবিরোধী ধারণাও শাস্টে্পর উপস্থিতি, বিশেষত সাধারণ মানুষের নিষ্ফি্ক্রয়তা, বিশ্বাসপ্রবণতা ও নির্বিচার শাস্ত্রনির্ভরতার দৃশ্য প্রত্যক্ষ করে তিনি ব্যথিত হন। তার নিজের বিশ্বাস ও ধারণা যথার্থ কি-না এ প্রশ্নের সদুত্তর আবিষ্কার করতে গিয়েই তিনি বোধ করলেন বিশ্বাস ও জ্ঞান প্রমাণের জন্য এক সুনিশ্চিত মানদন্ডের প্রয়োজন। তিনি প্রথমেই উপলব্ধি করলেন যে, প্রথমেই তাকে নির্ণয় করতে হবে জ্ঞানের ভিত্তি। দেখতে হবে যে, সুনিশ্চিত জ্ঞান হবে এমন সুসঙ্ষ্ঠ ও পরিপূর্ণ জ্ঞান যেখানে দ্বিধা বা সংশয়ের কোনো অবকাশ থাকবে না।
উল্লেখ্য, আমাদের বড় বড় আলেম-ওলামা এক বাকেয়া গাজালিকে হুজ্জাতুল ইসলাম বা ইসলামের সংরক্ষক বলে দাবি ও মান্য করেন। কিন্তু গাজালি যে নিজের বিশ্বাস যথার্থ কি-না এ বিচার-বিশ্লেষণ করেছিলেন আজকে তারা কি সেই বিশ্লেষণ আদৌ প্রয়োজন বলে মনে করেন? নাকি গতানুগতিক অন্দবিশ্বাসের ওপর নিজেকে সম্পূর্ণ করে আল্লামা মৌলানা উপাধি লাগিয়ে বসে আছেন? একথা নিশ্চিত যে, কেউ নিজের বিশ্বাসের যথার্থতা বিশ্লেষণ করছেন না।
গাজালি সেই বিশ্লেষণ করতে গিয়ে তিনি প্রথমে ইন্দি্রয়-প্রত্যক্ষণ এবং চিন্তার আবশ্যক নীতিগুলোর পরীক্ষায় প্রবৃত্ত হন। অনেক বিচার-বিশ্লেষণের পর গাজালি গণিত ও আকারি যুক্তিবিদ্যার নিয়মাবলিকে সুনিশ্চিত বলে গ্রহণ করতে পারলেন না। দশকি তিনের চেয়ে অধিক? একই বস্থু কি একই সঙ্গে থাকতে ও না থাকতে পারে? হয়তোবা তাই। কিন্তু একথা নিশ্চিত করে বলবে কে? ইন্দি্রয় প্রায়ই আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করে; কিন্তু বদুিব্দ কি তার চেয়ে ভালো? ইন্দি্রয়ের ভ্রান্তি ধরা পড়েছে বদুিব্দর বিচারে। বদুিব্দর চেয়ে এমনও এক উচ্চতর কিছু থাকতে পারে যার বিচারে বদুিব্দ ভ্রমাত্নক বলে প্রমাণিত হবে। স্বপেম্ন আমরা স্বপেম্নর অভিজ্ঞতা সঙ্ষ্ঠ-প্রাঞ্জল বলে মনে করি, কিন্তু ঘুম ভাঙার পর ঠিকই বুঝি যে স্বপম্নই।
এ মানসিক অস্থিরতা ও সংশয় তাকে পীড়িত করে দু'মাস ধরে। আর এ থেকে তিনি নিষ্ফ্কৃতি পান মরমি। অভিজ্ঞতার আলোকে ও সহায়তায়। তাহলে দেখা যাচ্ছে, গাজালি বদুিব্দবাদী জ্ঞান প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিলেন মরমি পর্যায়ে। ফিরে এলেন রক্ষণশীল ধর্মমতের সমর্থনে।
১। ধর্মতাত্তি্বক সম্প্রদায়
২। ইসমাঈলি (বাতেনি) সম্প্রদায়
৩। দার্শনিক সম্প্রদায়
৪। সুফি সম্প্রদায়
ধর্মতত্ত্ব পাঠ ও অধ্যয়ন করতে গিয়ে তিনি দেখলেন যে, ধর্মবেত্তারা রক্ষণশীলতা সমর্থন করেন এবং ধর্ম বিরদুব্দ মত প্রতিহত করেন। রক্ষণশীলতার সমর্থনে তারা অগ্রসর হতে গিয়ে এমন কিছু হেতু বাক্য দিয়ে প্রথমে শুরু করেন যেগুলোকে গ্রহণ করা হয় এজন্য নয় যে, এগুলো আসলেই অভ্রান্ত ও নিশ্চিত বরং এজন্য যে এগুলোকে মেনে নেওয়ার জন্য শাস্ত্রীয় বিধান ও সামাজিক ঐকমত্য বিদ্যমান। এ কারণেই জ্ঞানের শাখা হিসেবে ধর্মতত্ত্ব যতই জনপ্রিয় হোক না কেন তা যথার্থ নিশ্চিত জ্ঞান দিতে পারে না, দেওয়া আদৌ সম্ভব নয়।
এভাবে তিনি ইসমাঈলিদের ইমাম সম্পর্কিত মতবাদের সমালোচনা করেন। দার্শনিকদের মতের সমালোচনা করতে গিয়ে তিনি অনুভব করলেন, তাদের সমালোচনা করতে হলে তো দর্শন আয়ত্ত করতে হবে, তাই তিনি আয়ত্ত করেন তাৎকালীন সব দার্শনিক বিজ্ঞানকে।
গাজালি তার তাহাফুতুল ফালাসিফা গ্রনে্থ স্বীকার করেন, পূর্বর্বতী কথিত ধর্ম বিশ্বাসে আক্রান্তকারী (?) দার্শনিকরা প্রত্যেকেই আল্লার অস্তিত্ব ও শেষ বিচারের দিনকে অস্বীকার করেননি। তার মতে, পদার্থবিদ্যা ও অধিবিদ্যার মতবাদগুলোতেই দার্শনিকদের ধর্ম বিরদুব্দ মত ও বিভ্রান্তিগুলোর অনেক। এ জন্য গাজালি তার দর্শনবিরোধী যুক্তিগুলোকে পরিচালিত করেছিলেন প্রত্যক্ষভাবে আল ফারাবি ও ইবনে সিনার বিরুদ্ধে এবং পরোক্ষভাবে তাদের পথিকৃৎ এরিস্টটলের বিরুদ্ধে। এসব দার্শনিকের যেসব মত খ-নে তিনি অগ্রসর হন তার মধ্যে জগতের অনাদিত্ব, আল্লাহর জ্ঞান ও মৃত্যুর পর দেহের উত্থান উল্লেখযোগ্য। আলোচ্য নিবল্পেব্দ দার্শনিকদের সঙ্গে গাজালির ওই তিনটি মতের আলোচনা করব।
গাজালির মতে, উপরোক্ত তিনটি মত ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ঘোর আপত্তিকর। এছাড়া দার্শনিকদের আরো ১৭টি মত রয়েছে_ যেগুলো গাজালির দৃষ্টিতে ধর্মবিরোধী হলেও কম আপত্তিকর। সে ১৭টি মত শুধু দার্শনিকরাই প্রচার করেননি, মুতাজিলা ও অন্যান্য সম্প্রদায়ও প্রচার করেছে, তাই এগুলোর জন্য তাদের স্বধর্মত্যাগী বলা ঠিক নয়।
তাহাফুত গ্রনে্থ গাজালি প্রথমে জগতের অনাদিত্ত্ব সম্পর্কে আলোচনা করেন। আল ফারাবি ও ইবনে সিনার মতে, আল্লাহ জগতের শাশ্বত স্রষ্ঠা। কিন্তু একই সঙ্গে তারা এরিস্টটলের মতও সমর্থন করে বলেন, সৃষ্ঠ হলেও জগতের কোনো কালিক গুরু ছিল না। অর্থাৎ জগৎ অনাদি, কোন বিশেষ সময়ে সৃষ্ঠ নয়, গাজালি তাদের এ মত জোরাল যুক্তি ্টারা খ-ন করেছেন ঠিকই কিন্তু তিনি শাস্ত্রানুমোদিত আকস্টি্মক সৃষ্টিতত্ত্বে বিশ্বাসী হলেও তার বিস্তৃত যুক্তি দাঁড় করাতে অপরাগতা প্রকাশ করে বলেন_ আমাদের সসীম জ্ঞানে সৃষ্টিতত্ত্বের অপার রহস্য অনুধাবন করা অসম্ভব। তার মানে গাজালি এ বিষয়ে দার্শনিক মতের সঙ্গে ঠিকই তর্ক করেছেন কিন্তু সর্বশেষ তার নিশ্চুপতা লক্ষণীয়। এখানেই তিনি ভক্তি ও অনুভূতির শরণাপন্ন হন।
আল গাজালি দার্শনিকদের অপর যে মতটির সমালোচনা করেন তা হচ্ছে আল্লাহর জ্ঞান। দার্শনিকরা আল্লাহকে সব রকমের গুণ বিবর্জিত বলে র্বণনা করেছেন এবং এ ধারণা থেকে তারা বলেন_ সব প্রভুর প্রভু সব কারণের কারণ আল্লাহ এ জগতে সংঘটিত কোনো কিছুই জানেন না। আত্নজ্ঞান ছাড়া আল্লাহর আর কোনো জ্ঞান নেই। গাজালি বলেন, আত্নজ্ঞান ছাড়া আল্লাহ যদি অন্য সব কিছু সম্পর্কে অজ্ঞই থেকে গেলেন তাহলে আত্নজ্ঞানইবা তার থাকে কীভাবে?
ইবনে সিনাসহ যেসব দার্শনিক স্বীকার করেন যে, নিজেকে ছাড়াও আল্লাহ অন্যান্য জিনিসকে জানেন। তাদের মতে ঐশী জ্ঞান বিশেষ নয়, নির্বিশেষ তথা সার্বিকধর্মী। আল্লাহ শুধু সার্বিককেই জানেন, বিশেষকে নয়, আল্লাহর জ্ঞান চিরন্তন ও শাশ্বত এবং তা বিশেষ স্থান-কালের ওপর নির্ভরশীল নয়। আল্লাহকে যে কোনো ঘটনাকে তা ঘটার আগ থেকেই ধারণা হিসেবে জানেন। বিশেষ ঘটনাটি যেসব কার্যকারণ অনুক্রমে সংঘটিত হবে সেগুলোকে তিনি আগেভাগেই জেনে থাকেন, কিন্তু কোনো ঘটনাকে পৃথকভাবে জানেন না জানা তার কাজ নয়। বিশেষ ঘটনার বেলায় যা, বিশেষ ব্যক্তির বেলায়ও তা। কোনো বিশেষ ব্যক্তিকে তিনি পৃথকভাবে জানেন না, জেনে থাকেন সার্বিক মানুষকে জানার আঙ্গিকে অর্থাৎ দেশ-কাল নিরপেক্ষভাবে।
গাজালি বলেন, আল্লাহর জ্ঞান যে দেশ-কালের শর্তমুক্ত তা ঠিক। কিন্তু দেশ-কালের অন্তর্গত বিশেষ বস্থু, ব্যক্তি বা ঘটনাকে আল্লাহ জানবেন না কিংবা জানতে পারেন না_ একথা অসঙ্গত ও অগ্রহণযোগ্য। এ ব্যাপারে গাজালি তার জোরালো যুক্তি প্রদান করেন তাকাফুত গ্রনে্থ।
অন্যদিকে মৃত্যুর পর দেহের পুনরুত্থান সম্পর্কে দার্শনিকরা সংশয়বাদী ছিলেন। তাদের মতে, পরলোক পুরোপুরি আধ্যাত্দি্মক একটি বিষয়। বেহেশত ও দোযখ আসলে কোন স্থান নিদরাউশ করে না, বরং বোঝায় মনের অবস্থাকে। তাদের বক্তব্য, বেহেশত দোযখ সম্পর্কিত কোরানের বাণীকে আক্ষরিক অর্থে না বুঝে প্রতীকী অর্থে বোঝতে হবে। সাধারণ মানুষের বোঝার সুবিধার্থে আল-কোরানে পরকালের জীবনের এক পদার্থিক চিত্র দেওয়া হয়েছে বটে, কিন্তু বিচার-বদুিব্দসম্পন্ন জ্ঞানী ব্যক্তিদের এ আক্ষরিক জগতে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না, প্রবেশ করতে হবে তার চেয়ে গভীর ও গভীরে, যেতে হবে সেসব বাণীর গুঢ় মর্মার্থ ভুবনে।
যেসব মানুষ শুধু ইন্দি্রয়নির্ভর বা সহজ বদুিব্দসম্পন্ন তাদের গাজালি ধর্মের অনুশাসনেই চলতে বলেছেন। ধর্মের অনুশাসনের বাইরে গেলে তাদের স্খলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যেহেতু তাদের বদুিব্দ কম। এরা দার্শনিক আলোচনায় নিরত হলে ভয়াবহ হবে। অন্যপক্ষে সহজ বদুিব্দর মানুষ ছাড়াও উন্নত বদুিব্দসম্পন্ন কিছু মানুষ রয়েছে, তারা অনুসন্দিৎসু তত্ত্বপিপাসু। গাজালি বলেন, এ উন্নত বদুিব্দসম্পন্ন মানুষরাই কেবল দার্শনিক চিন্তায় আত্ননিয়োগ করতে পারে। জ্ঞানের পথে পূর্ণতা অর্জন করতে সক্ষম শুধু তারাই যারা অভ্যন্তরীণ অভিজ্ঞতা বা আত্দি্মক অনুভূতির মাধ্যমে নূরে ইলাহির সন্ধান পেয়েছেন। আসলে এরাই হলেন সুফি সাধক, অলি-আওলিয়া, পীর-দরবেশ। ঐশী প্রেমে তারা এতই বিভোর যে, যে কোনো পার্থিব বস্থুতেও তারা আল্লাহর উপস্থিতি লক্ষ্য করেন। খোদার প্রেমে মগ্ন এ শ্রেণীর মানুষ শাস্তির ভয়ে ভীত নন কিংবা পুরস্কারেরও আশা করেন না। তাদের একমাত্র লক্ষ্য ঐশীজ্ঞান বা ঐশী প্রেম।
ধর্মীয় ও আধ্যাত্দি্মক চিন্তার বিকাশে তার অবদান অতুলনীয়। অনেকেই তাকে হুজ্জাতুল ইসলাম বা ইসলামের সংরক্ষক বলে থাকেন। অনেকেই ইমাম গাজালিও বলেন।

No comments

Powered by Blogger.