কিশোরী মায়েদের গ্রাম by আহসান পাভেল

কেনিয়ার কিলিফি জেলার ছোট্ট গ্রাম 'এমতোন্ডিয়া'র বেশিরভাগ কিশোরী মেয়েই সন্তানসম্ভবা এবং তাদের অনেকেরই রয়েছে এক বা একাধিক সন্তান। যদিও তাদের সন্তান ধারণের এ প্রক্রিয়ার পেছনে লুকিয়ে রয়েছে করুণ ও বিপন্ন অতীত। ১৩ বছর বয়সী মাহেনজো এ গ্রামেরই মেয়ে । সে যখন ১০ বছরের শিশু, তখনই সে তার প্রথম সন্তানের জন্ম দেয়। যদিও সেই সন্তানের পিতৃ পরিচয় এখনো জানে না মাহেনজো। কারণ তার গভরাউর প্রথম ভ্রূণটি আসে গ্রামের কয়েকজন যুবক ্টারা ধর্ষণের শিকার হয়ে।

মাহেনজো ইতিমধ্যে আরো একটি সন্তান জন্ম দিয়েছে। এটিও এসেছে এক বছর আগের এক অভিশাপের ফসল হয়ে। তখন মাহেনজোর বয়স ১২। একদিন চিত্তবিনোদনের জন্য সে বাড়ির পাশের এক ডিসকোতে গিয়ে আবারো ধর্ষণের শিকার হয়। আর ১৫ বছর বয়সী জ্যানেট মেনজা যখন ক্লাস এইটে পড়ে তখনই তার সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে গ্রামের এক বৃদেব্দর সঙ্গে। সম্পর্কটিকে পূর্ণতা দেওয়ার জন্য শারীরিক সম্পর্কেও বাধা দেয়নি সে। তার সেই ছন্দময় দিনগুলো বেশ ভালোই কাটছিল। তবে এরমাঝেই একদিন সে আন্দাজ করল তার ছোট্ট জীবনে আসছে আরেকটি নতুন জীবন। পৃথিবীর আলো সেই শিশুটি দেখলেও সন্তান জন্ম দেওয়ার পরের দিনগুলো জ্যানেটের অসহনীয় কষে্টর ভেতর দিয়ে কেটেছে। কারণ ততদিনে নিরদু্দেশ হয়ে গেছে নবজাতকের পিতা। অভিশপ্ত এমতোন্ডিয়া গ্রামের বেশির ভাগ কিশোরীর জীবনেই এমন অসহনীয় দুর্ভোগের ঘটনা রয়েছে। দুই কিংবা তিন সন্তানের মা হওয়ার জন্য এখানে ১৬ বছর বয়সের বেশি অপেক্ষা করতে হয় না। প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার আগেই শিক্ষা জীবনের ইতি ঘটাতে হয়। কারণ অপ্রাপ্ত বয়স্ক এসব মায়ের জন্মও যে ঘটেছে নিতান্তই দরিদ্র মা-বাবার সংসারে। এমতোন্ডিয়া গ্রামে এখনো গড়ে ওঠেনি শক্তিশালী ও সচেতন পারিবারিক কাঠামো। ফলে অনেক বাবা-মাই তাদের কিশোরী মেয়েকে বিয়ে দিচ্ছেন অপ্রাপ্ত বয়সেই। আর এজন্য তাদের কোনো প্রকার অপরাধবোধও নেই। এ প্রসঙ্গে ৩৩ বছর বয়সী দামাচারুর কথাই বলা চলে। তার কিশোরী মেয়ে এরই মধ্যে এক সন্তানের মা হয়েছে! কিন্তু এ বিষয়ে দামাচারুর মধ্যে কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া নেই; বরং তিনি বেশ গর্বিত! দামাচারু বললেন, 'এটা এ কারণেই ঘটছে যে, এখানকার ছেলেমেয়েরা একই সঙ্গে স্কুলে পড়াশোনা করে এবং অপ্রাপ্ত বয়সে যৌন সম্পর্ক গড়ে তোলে।' এসব কিশোরী মেয়ের র্বতমান অবস্থা সম্পর্কে দামাচারুর বক্তব্য, 'আগে এ গ্রামের মেয়েরা গর্ভবতী হলে তাদের বাবারা দায়িত্বশীল পুরুষকে বিয়ে করার নিদরাউশ দিলেও র্বতমানে কোনো প্রকার সহযোগিতা না করে পরিবার থেকেই তাড়িয়ে দিচ্ছেন।'
এমন দুঃসহ অবস্থার শিকার হয়ে এমতোন্ডিয়া গ্রামের ৮০০ জন কিশোরী মা সম্প্রতি কেনিয়ার স্বাস্থ্যযমন্ত্রী চারিটি এনজিলুর সঙ্গে দেখা করেছে। তাদের দৈন্যের কথা মন্ত্রীর সামনে তুলে ধরার জন্যই এ আয়োজন। এই গ্রামের কিশোরী মেয়েদের এমন দুরবস্থার ব্যাপারে এনজিলু বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, 'সতি্য, আমি অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি_ আমাদের দেশেই এ ঘটনা ঘটছে কিন্তু সরকারের অংশ হিসেবে আমরা কিছুই করতে পারিনি।' অনুতপ্ত মন্ত্রী আরো বলেন, 'আইনের মাধ্যমে আমরা এসব শিশুকে কার্যকর সুরক্ষা দিতে পারিনি। কিন্তু এ সমস্যার সমাধানে এমতোন্ডিয়ার পরিবারগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে।' অনেক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও দরিদ্র এ দেশের স্বাস্থ্যযমন্ত্রী শোনান আশার বাণী, 'যেসব লোক এসব কিশোরী মেয়ের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয়ে তাদের আলোকোজ্জ্বল ভবিষ্যতের পথ বন্দ করে দিয়েছে, তাদের শাস্তি অবশ্যই হবে।'
সূত্র : বিবিসি অনলাইন

No comments

Powered by Blogger.