লালবাগ কেল্লাকে নাটকীয়ভাবে উপস্থাপন প্রক্রিয়া by আসাদুজ্জামান স্বপ্ন

ঢাকার ৪০০ বছরের ইতিহাসো নীরব সাক্ষী লালবাগ কেল্লা। যদিও এটি আসল নাম নয়, তবুও এ নামেই তার পরিচিতি। আসল নাম 'কিল্লা আওরঙ্গাবাদ'। মুঘল আমলে ঢাকা রাজধানী হওয়ার পর ওই এলাকার বিদ্যমান লাল ফুলের বাগান থেকে সম্ভবত নামটি হয়েছে। সম্প্রতি ঢাকার ঐতিহ্যকে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপনের জন্য লালবাগ কেল্লায় শুরু হচ্ছে লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো। পুরো প্রক্রিয়াটা বাস্তবায়িত হলে এখানে বাংলার ঐতিহে্যর সঙ্গে প্রযুক্তির মিশলে চোখের সামনে ভেসে উঠবে ঢাকার চারশ' বছর আগের ইতিহাস।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীন এ লাইট অ্যান্ড সাউন্ড প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এখানে এসে স্বচ্ছ পানির ফোয়ারায় দর্শনার্থীরা দেখতে পাবেন মুঘল আমলের যুদ্ধবিগ্রহ, ইতিহাস, সাংস্কৃতিক কর্মকা- আর ঐতিহাসিক কেল্লার কর্মচাঞ্চল্য ও বিয়োগান্ত ঘটনা। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এটিই হবে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে লেজার শোর নিয়মিত প্রদর্শনী। প্রযুক্তির সঙ্গে লালবাগ : সতের শতকের শুরুতে ঢাকা যখন সুবা-বাংলার রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় তখন ঢাকায় যেসব ঐতিহাসিক নিদর্শন প্রতিষ্ঠিত হয় লালবাগ কেল্লা তার মধ্যে অন্যতম। আজ অবধি লালবাগ কেল্লা নামটি উচ্চারণ করলেই চলে আসে শহর ঢাকার গৌরবময় ইতিহাসের কথা। লাইট অ্যান্ড সাউন্ড প্রকল্পের মাধ্যমে বিনোদন যোগ্য করে ঢাকার সেই ইতিহাসকে তুলে ধরা হবে দেশী-বিদেশী দর্শকদের মাঝে। ইতিমধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে এই প্রকল্পের কাজ। প্রকল্পের উবোধন করেছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বেগম সেলিমা রহমান। তিনি উবোধনী অনুষ্ঠানে বলেছেন, 'সঠিকভাবে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বিশ্ব দরবারে আধুনিকভাবে উপস্থিত হতে পারবে ৪০০ বছরের ঢাকার ঐতিহ্য। প্রযুক্তির সঙ্গে রূপসী বাংলার প্রকৃত রূপ উপভোগ করতে পারবেন দেশী-বিদেশী পর্যটকরা'। লালবাগ কেল্লায় লেজার লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শোর প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে মোট ৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
নাটকীয় কেল্লা : লালবাগের কেল্লার পরীবিবির মাজার ও হামামখানার মধ্র্যবতী ফোয়ারাকে ওয়াটার স্ক্রিন হিসেবে ব্যবহার করে তাতে লেজার লাইটের প্রতিফলন ঘটিয়ে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের প্রতিচ্ছবি ঘটানো হবে। ডিজিটাল সাউন্ড ও লেজার রশি্মর সমল্প্বয়ে ঐতিহাসিক তথ্য-উপাত্তকে উপস্থাপন করা হবে নাটকীয়ভাবে। লালবাগ কেল্লা জাদুঘরের রক্ষণাবেক্ষণকারী হাবিবুর রহমান বলেন, 'এই প্রকল্পের আধুনিকায়নে ফুটিয়ে তোলা হবে আলোক সজ্জায় পরীবিবির মাজারকেও। একই সময়ে করা হচ্ছে কাহিনী কথনে পরিবেষ্টিত সাউন্ড সিস্টেম এবং ভেতরের প্রতিরক্ষার সঙ্গে প্রদর্শিত করা হবে লেজার লাইটের ঐতিহাসিক চিত্রকলা।' প্রতিদিন উন্মুক্ত পরিবেশে সূর্যাস্টেস্নর পর আঁধার ঘনিয়ে এলে অনুষ্ঠিত হবে তিনটি করে প্রদর্শনী। আলোক রশি্মর আঁকাবাঁকা রেখা দর্গাউর প্রতিটি ভবনকে করে তুলবে ঔজ্জ্বল্যময়। সব সময় স্বস্তি দেবে স্মরণীয় মুঘল আমলের নিয়মের ভেতরের র্বণনা। এর একটি হবে ইংরেজিতে। লাইট এবং সাউন্ডের প্রবল ক্ষমতা দীপান্তরে পাঠানো খবরগুলো শ্রোতাম-লীর কাছে স্মরণ করিয়ে দেবে পেছনের অতীত। প্রদর্শনীর সময়সীমা হবে ২৫ মিনিট করে। এক সঙ্গে ৪০০ দর্শক উপভোগ করতে পারবে একেকটি প্রদর্শনী। এক বছরের মধ্যেই প্রকল্পটি সম্পূর্ণ হয়ে যাবে বলে জানালেন প্রত্দম্নতত্ত্ব অধিদফতরের পরিচালক ড. শফিকুল আলম।
প্রকল্পের পরিকল্পনা : লালবাগ কেল্লার 'লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো'র প্রকল্পটি পরিকল্পনা করা হয়েছে মাত্রানুযায়ী ৩টি পর্যায়ে। প্রথম পর্যায়ের কাজ এর মাঝে শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে করা হবে সম্পূর্ণ তথ্যের সংগ্রহশালা। আশা করা হচ্ছে এ বছরের শেষ নাগাদ অথবা আগামী বছরের শুরুর দিকে শেষ হবে। আর তৃতীয় পর্যায়ে পুরো প্রকল্পটি সম্পূর্ণ হবে ২০০৭ সালের জুন মাসে। পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এটি হবে দেশের মানুষের কাছে ভিন্ন ধরনের একটি বিনোদনের ব্যবস্থা এবং এতে বিদেশী পর্যটকদের কাছে ঢাকার ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।

No comments

Powered by Blogger.