এক বছরের মাথায় মইনের হতাশা

ড়াই লাখ মার্কিন তারবার্তা ফাঁস করেছে উইকিলিকস। মার্কিন কূটনীতিকদের ভাষ্যে এসব তারবার্তায় বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশের রাজনীতি ও ক্ষমতার অন্দরমহলের খবর। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এক বছরের মাথায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, তৈরি পোশাক কারখানায় অসন্তোষ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রবিক্ষোভ—একের পর এক সংকটে হতাশ হয়ে পড়েন সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ। তখন তাঁর উপলব্ধি হয়, রাজনৈতিক সংস্কারসহ নির্বাচনের রোডম্যাপ বাস্তবায়নের ধারণার চেয়ে কঠিন হয়ে উঠছে।

এর ওপর চার উপদেষ্টার পদত্যাগসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দিন দিন মতপার্থক্য বাড়তে থাকায় তাঁর হতাশা আরও বাড়ে। আলোচিত ওয়েবসাইট উইকিলিকসের ফাঁস করা মার্কিন দূতাবাসের তারবার্তায় এ কথা বলা হয়েছে। ২০০৮ সালের ১৭ জানুয়ারি ওয়াশিংটনে ওই তারবার্তা পাঠায় ঢাকার মার্কিন দূতাবাস। তারবার্তায় দূতাবাস জানায়, ১৪ জানুয়ারি দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স গীতা পাসি এবং অন্য একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে নৈশভোজের আমন্ত্রণ জানান সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ। গীতা পাসি তারবার্তায় জানান, নৈশভোজে সাম্প্রতিক ঘটনাবলি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মকাণ্ড নিয়ে সেনাপ্রধানকে তাঁর চিন্তিত বলে মনে হয়েছে। তবে মইন জোর দিয়ে বলেছেন, ২০০৮ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হবে। একই সঙ্গে তিনি তাঁর আগের বক্তব্যের পুনরুক্তি করে বলেছেন, ‘জীবন থাকতে’ তিনি সামরিক শাসন জারি করবেন না। রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে তিনি সরিয়ে দিতে চাচ্ছেন বলে যে কথা শোনা যাচ্ছে, তা-ও নাকচ করে দেন মইন। কিন্তু প্রশ্ন করা হলে তিনি স্বীকার করেন, সেনাপ্রধান হিসেবে তাঁর মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানোর বিষয়ে সেনাবাহিনীর মধ্যে আলোচনা হচ্ছে।
গত এক বছরে নিজেদের অভ্যন্তরীণ সংস্কারের সুযোগ কাজে লাগাতে না পারার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সমালোচনা করেন সেনাপ্রধান। তবে পরিস্থিতি আগের অবস্থায় ফিরতে দেওয়া হবে না বলে জোর দিয়ে জানিয়ে দেন তিনি।
তারবার্তায় বলা হয়, সেনাপ্রধানের সঙ্গে দূতাবাসের কর্মকর্তাদের ওই নৈশভোজের ব্যবস্থা করেন গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের সন্ত্রাসবাদবিরোধী শাখার প্রধান ব্রিগেডিয়ার এ টি এম আমিন। ১০ জানুয়ারি তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও সেনাবাহিনীর নির্বাচন-পরিকল্পনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানান গীতা পাসিকে। আমিন বলেন, ফেব্রুয়ারি থেকে জাতীয় পর্যায়ে সংলাপ শুরু হবে। তিনি আরও বলেন, বিশিষ্ট কিছু ব্যক্তি এই সংলাপ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করতে পারেন। উদাহরণ দিয়ে তিনি সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবুল হোসেন চৌধুরী ও শিক্ষাবিদ মিজানুর রহমান শেলীর নাম উল্লেখ করেন। আমিন আরও বলেন, ওই সময়ে দুই নেত্রীকে বিদেশে পাঠানোর কোনো পরিকল্পনা ছিল না।
তারবার্তায় বলা হয়, আলোচনার একপর্যায়ে গীতা পাসি উল্লেখ করেন, বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধান উপদেষ্টা ওই মাসেই দাভোসে যাচ্ছেন। তখন মইন উ আহমেদ বলেন, তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। প্রধান উপদেষ্টা আদৌ বিদেশে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে মইন বলেন, ‘তাহলে তো অবশ্যই আমার জানার কথা।’
গীতা পাসির তারবার্তায় উল্লেখ করা হয়, জানুয়ারির প্রথম দিকে চার উপদেষ্টার পদত্যাগ এবং নতুন করে উপদেষ্টা নিয়োগসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ও সেনাপ্রধানের সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে বলে দূতাবাস বিভিন্ন সূত্রে জেনেছে। বার্তায় আরও বলা হয়, মইন উ আহমেদের সঙ্গে দূতাবাসের সাম্প্রতিক আলোচনায় তাঁকে আর আগের মতো উৎসাহী মনে হয়নি।

No comments

Powered by Blogger.