রমজান, জাকাত ও ভ্রাতৃত্ব by মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন

র্মীয় যে কোনো নিদরাউশ ও ইবাদতের মূল মর্ম হলো আল্লাহর সমীপে নিঃশর্ত সমর্পণ। তাই রমজানে দিবসে পানাহার র্বজন যেমন পুণ্যময় ইবাদত, সূর্যাস্টেস্নর সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করাও তেমনি নূরময় নেক আমল। এখানে খানাপিনা গ্রহণ কিংবা র্বজনটা মুখ্য নয়। মুখ্য হলো আল্লাহর নিদরাউশের প্রতি নিঃশব্দ আনুগত্য। অবশ্য সেই আনুগত্যের মধ্য দিয়ে যে আমাদের পশুবৃত্তি দমিত হয়, খানাপিনা ও যৌন সক্ষেত্রোগ পরিহারের মধ্য দিয়ে যে আমরা নিষ্পাপ ফেরেশতা চরিত্র চর্চা করার সুযোগ পাই তা সিয়াম সাধনার অনিবার্য ফসল, তবে প্রধান লক্ষ্য নয়।

এও স্বীকার করতে হবে, পৃথিবীব্যাপী সমদুয় সৃষ্টি মিলেই আল্লাহর পরিবার। মানবগোষ্ঠী এই পরিবারের প্রধান ও মুখ্য সদস্য। ধনী-গরিব সবাই। যাপিত রমজানের ক্ষুধা-তৃষষ্ণার মধ্য দিয়ে আমরা আল্লাহর পরিবারের অসহায়-নিঃস্ব দরিদ্রজনদের কাছে যাওয়ার সুযোগ পাই। তাদের প্রতিদিনের দুঃখ-বেদনাকে ঘনিষ্ঠভাবে উপলব্ধি করতে পারি। উপলব্ধি করতে পারি আমাদের প্রতি র্বষিত অফুরন্ত নেয়ামতের মূল্যও। অভাবীজনদের এই বেদনা উপলব্ধির ভেতর দিয়ে আমরা জাকাত, সদকা দান ও সাহায্যেযর মূল প্রয়োজন ও আবেদনকেও নিবিড়ভাবে জানার সুযোগ পাই। আর এজন্যই রমজানুল মুবারককে বলা হয় একটি প্রশিক্ষণ কোর্স। নির্দিষ্ঠ সময়ের জন্য খানাপিনা পরিহারের মধ্য দিয়ে এ কোর্স আমাদেরকে নিয়মানুবর্তিতা শেখায়, আত্ননিয়ন্ত্রণ শেখায়, নেয়ামতের মূল্য উপলব্ধি করতে শেখায়। আমাদের চারপাশে বসবাসরত আমাদের অসহায় দরিদ্র ভাইদের জীবনজ্বালা জানতে শেখায়, শেখায় জীবনের সব ক্ষেত্রে 'আল্লাহ আমাদের দেখছেন' এই উপলব্ধিসহ এগিয়ে যেতে।
এ কারণেই আমরা দেখি, পবিত্র ইসলামের নিখুঁত ও পূর্ণাঙ্গ আদর্শ হজরত রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান মাস এলেই দানের মাত্রা বাড়িয়ে দিতেন। রমজানের মূল আবেদন তাকওয়া যদি অন্তরে অর্জিত হয় তাহলে তো আল্লাহর অসহায় বান্দাদের প্রতি এভাবে ঝুঁকে পড়াটাই স্বাভাবিক। মালিকের আপনজনকে উপেক্ষা করে কি কেউ কখনো মালিকের প্রিয়ভাজন হতে পারে? আর এই পরীক্ষার জন্যই তো রোজার শেষে সাদকাতুল ফিতরের নিদরাউশ।
একই অনুভূতিতে রমজানে জাকাত দানের আয়োজনও আমরা লক্ষ্য করি। এই আয়োজন প্রশংসনীয়। মুমিনের জীবনে আকাঙ্খিত। কারণ জাকাতের ্টারা বান্দা সমৃদ্ধির পথে অগ্রসর হয়। ইরশাদ হয়েছে : আল্লাহতায়ালা সদুকে নির্মূল করে দেন আর জাকাত-সদকাকে বাড়িয়ে দেন। [বাকারা : ২৭৬] এবং হজরত রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন : যখন কোনো বান্দা জাকাত আদায় করে তখন ফেরেশতাগণ তার জন্য এই দোয়া করে_ হে আল্লাহ, যে ব্যক্তি তোমার পথে খরচ করছে তাকে তুমি আরো দান করো; আর যে ব্যক্তি সম্পদ কুক্ষিগত করে রাখে, তোমার পথে খরচ করে না তুমি তার সম্পদকে ধ্বংস করে দাও! (বুখারি)
এখানে সবিশেষ লক্ষণীয় বিষয় হলো, জাকাত একটি হিসাবি ইবাদত। যখন কোনো ব্যক্তি নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয় ঠিক তখন থেকে যখন গিয়ে এক বছর পূর্ণ হবে তখন জাকাত আদায় করা ফরজ। এটা বছরের যে কোনো মাসে হতে পারে। এই হিসাবের ক্ষেত্রে আমাদের সমাজে যারা জাকাত দেন তারাও অনেক সময় অসতর্কতার শিকার হন। প্রথমত কখন নেসাবের মালিক হলেন সেটা নোট করে রাখেন না। তাই জাকাত কবে দিতে হবে তাও নির্ধারিত থাকে না। অথচ ফরজ আদায়ের জন্য এটা জরুরি। দ্বিতীয়ত, জাকাত দেওয়ার সময় মওজদু সম্পদের হিসাব করে কত টাকা জাকাত ফরজ হলো তাও নির্ণয় করা হয় না। জাকাত দেওয়া হয় অনুমান করে। অথচ এভাবে অনুমান করে জাকাত দিলে যদি নির্ধারিত জাকাতের একটি টাকাও অবশিষ্ঠ থেকে যায় তবে জাকাত প্রদান সুষ্ঠু হলো না।
অবশ্য রমজানে একটি ফরজ আদায় করলে সত্তরটি ফরজ আদায়ের সওয়াব পাওয়া যায়। সেই আবেদনে কেউ যদি রমজানেই জাকাত দিতে চায়, তার এই চিন্তা যথার্থ ও প্রশংসাযোগ্য। কিন্তু যদি কোনো ব্যক্তির ওপর কবে জাকাত ফরজ হয়েছে তা সুনির্ধারিতভাবে জানা থাকে তাহলে শুধু অতিরিক্ত সওয়াব লাভের প্রেরণায় তারিখ পরির্বতন করে রমজানে জাকাত দেওয়া ঠিক হবে না। বরং তাকে যথাসময়েই জাকাত আদায় করতে হবে।
অবশ্য একটা কৌশল করা যেতে পারে, নির্ধারিত সময়ে জাকাতের টাকা আদায় করে ফেলল। মাঝে মধ্যে উপযুক্ত পাত্র দেখে কিছু কিছু দিতে থাকল। অবশিষ্ঠ যা থাকল তা রমজানে দিয়ে দিল। হঁ্যা, যদি কারো তারিখ জানা না থাকে_ কবে তার ওপর যাকাত ফরজ হয়েছিল তাহলে সে ব্যক্তি জাকাত দানের জন্য রমজানের কোনো একটি দিনকে নির্ধারণ করে নিতে পারে। তবে সতর্কতাস্বরূপ প্রথম বছর কিছু বেশি দিয়ে দেবে যাতে গণনায় ভুল হয়ে থাকলে সেটা পূরণ হয়ে যায়।

No comments

Powered by Blogger.