ইরানে হামলার ছক কষছে যুক্তরাষ্ঠ্র by শাহাবুদ্দিন খোকন

ধ্যপ্রাচ্যে একটি যুদ্ধের রেশ কাটতে না কাটতেই ইরানকে ঘিরে আরেকটি যুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। লেবাননে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ায় কিছু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে বিশ্ববাসী। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তোয়াক্কা না করে পরমাণু কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ইরানি ঘোষণা নতুন করে ভাবিয়ে তুলছে সচেতন মহলকে। ইরানকে ঘিরে নতুন সংকট মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে বলে অভিমত বিশ্লেষকদের।

ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি বল্পেব্দর বিনিময়ে ব্যাপক প্যাকেজ সুবিধাসংবলিত যে প্রস্তাব শক্তিধর দেশগুলো ইরানকে দিয়েছে ম্পগলবার তার আনুষ্ঠানিক জবাব দিয়েছে তেহরান। এ জবাব সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে কিছুই জানা যায়নি। তবে ইরানের প্রধান পরমাণু আলোচক এ ব্যাপারে বলেন, গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে জবাবে। এর বাইরে তিনি কিছুই বলতে নারাজ। ধারণা করা হচ্ছে, পরমাণু কর্মসূচি বল্পেব্দর বিষয়টি নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে ইরান। তবে এটাকে আলোচনার পূর্বশর্ত হিসেবে কোনোভাবেই মেনে নেবে না তেহরান। এদিকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ পরমাণু কর্মসূচির সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে। ৩১ আগস্ট এ সময়সীমা শেষ হবে। কর্মসূচি বন্দ করার অভিপ্রায় ইরানের আছে কি-না সে ব্যপারে লারিজানি কিছুই বলেননি। তবে বিষয়টি নিরাপত্তা পরিষদের অন্তর্ভক্তু করাটা বেআইনি বলে তিনি মন্তব্য করেন।
জাতিসংঘ প্রস্তাব অনুযায়ী কর্মসূচি বন্দ না করলে দেশটির ওপর অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক অবরোধ আরোপের লক্ষে আবার বসবে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক। আর এ রকম অবরোধ বা নিষেধাজ্ঞা আরোপের অজুহাতই খুঁজছে যুক্তরাষ্ঠ্রসহ মিত্র দেশগুলো। মূলত এ অজুহাতেই ইরানে হামলার পাঁয়তারা করছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ড্বি্নউ বুশের প্রশাসন। ইসরাইলকে দিয়ে প্রাথমিকভাবে হামলার ছকও তৈরি করে রেখেছে তারা। এ লক্ষে লেবানন ও ফিলিস্তিনে হামলা চালিয়ে একটু ঝালিয়ে নিল ইসরাইলি বাহিনীকে। এমনটাই মন্তব্য করেছেন নিউইয়র্কের খ্যাতনামা সাংবাদিক সেমুর হার্শ। তিনি মনে করেন, হিজবুল্লাহর ওপর হামলা ইরানের ওপর হামলারই মহড়া বিশেষ। যদিও তা তেমন কার্যকর হয়নি। তবে নতুনভাবে সামরিক শক্তি সঞ্চয় করছে দেশটি। সে লক্ষে পরমাণু অস্ত্র বহনে জার্মানির তৈরি দুটি সাবমেরিন কিনে ইরানে হামলা এবং পাল্টা হামলা মোকাবেলার প্রস্থুতি নিচ্ছে বলে ইসরাইলের কিছু দৈনিকে খবর বেরিয়েছে। ইউ-২১২ মডেলের জার্মান ডলফিন সাবমেরিন পরমাণু বহনকারী বোমাসমেত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র বহনে সক্ষম এবং ইরানের যে কোনো স্থানে তা আঘাত হানতে সক্ষম। ইসরাইলের নৌবাহিনীর হাতে এর আগে এ ধরনের আধুনিক সাবমেরিন ছিল না বলে জানা গেছে।
ইরানের প্রস্তাবে বরফ গলেনি যুক্তরাষ্ট্রের। বুধবার মার্কিন পররাষ্ঠ্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, আলোচনার লক্ষে ইরান পাল্টা যে প্রস্তাব পাঠিয়েছে তা জাতিসংঘ শর্তপূরণে যথেষ্ঠ নয়। তাই পরর্বতী পদক্ষেপ অর্থাৎ নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি নিয়ে এগুচ্ছে দেশটি। আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে নিরাপত্তা পরিষদের অন্য দেশগুলোর সঙ্গে। বুধবারই মার্কিন পররাষ্ঠ্রমন্ত্রী কন্ডোলিজা রাইস টেলিফোনে কথা বলেন ইইউর পররাষ্ঠ্র বিষয়ক প্রধান হ্যাভিয়ার সোলানার সঙ্গে। উঠেপড়ে লেগেছেন প্রেসিডেন্ট বুশও। তিনি জাতিসংঘ মহাসচিব কফি আনানের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ সেরে নিয়েছেন।
ইরান ৩১ আগস্টের মধ্যে পরমাণু কর্মসূচি বন্দ না করলে স্বাভাবিক কারণে পরর্বতী পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়টি সামনে চলে আসবে। ইরান যদি মনে করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তোয়াক্কা না করে উত্তর কোরিয়া কর্মসূচি চালাতে পারলে তারা পারবে না কেন? সেটি হবে চরম ভুল। কারণ যুক্তরাষ্ঠ্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব মনে করে, ইরানের কাছে পরমাণু অস্ত্র থাকা নিরাপদ নয়।

No comments

Powered by Blogger.