জনতা ঠেকাল বাল্য বিয়ে, কাজি থানায়

দুই বছর ধরে প্রেম করছে এসএসসি পরীক্ষার্থী কুলসুমা আক্তার কুসুম ও মো. আবদুল্লাহ আল মামুন। দুজন বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে নগরীর চকবাজার কাজি অফিসে গিয়ে কাজির শরণাপন্ন হয়। কিন্তু অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে-মেয়েকে কাজি অফিসে ঢুকছে দেখে আশপাশের লোকজন কাজির কাছে যান। এ সময় বর-কনেকে বয়স বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তারা বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দেয়। জনতা কাজিকে বিয়ে না পড়ানোর অনুরোধ জানানোর পরও কাজি বিয়ে পড়ানোর উদ্যোগ নেন। এতে ক্ষিপ্ত জনতা কাজি অফিস ঘেরাও করে এবং পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ গিয়ে হবু বর-কনে ও কাজিকে জনতার রোষ থেকে বাঁচাতে থানায় নিয়ে আসে।

গতকাল রবিবার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার কাজি অফিস থেকে তাদের উদ্ধার করেন কোতোয়ালি থানার এসআই হারুনুর রশিদ। বিকেলে কোতোয়ালি থানায় গিয়ে দেখা গেছে, থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদের কক্ষে বর-কনে এবং কাজিকে বসিয়ে রাখা হয়েছে। সেখানে উপস্থিত হন বর-কনের বাবা। এ সময় ওসি আজাদ জানান, জনতার প্রতিরোধের কারণে বিয়ে পড়াতে পারেননি কাজি। পুলিশ তাদের উদ্ধার না করলে সেখানে ঝামেলা হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। তিনি বলেন, 'বর-কনে দুজনই অপ্রাপ্ত বয়স্ক। কিন্তু দুজনই গতকাল বিয়ে করতে কাজি অফিসে যাওয়ার আগে চকবাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কাছ থেকে জন্ম নিবন্ধন সনদ নেয়।'
থানায় বসে বর আবদুল্লাহ আল মামুন (১৯) জানায়, সে দুই বছর ধরে কুলসুমার (১৫) সঙ্গে প্রেম করছে। এ কারণে বিয়ে করতে কাজি অফিসে গেছে। কুলসুম জানায়, এ বছর সে এসএসসি পরীক্ষা দেবে। কুলসুম কুমিল্লা জেলার এবং মামুন ফেনী জেলার বাসিন্দা। দুজনের বাবা চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চাকরি করেন এবং তারা প্রতিবেশী।
ওসির কক্ষে বসে কুলসুমের বাবা নূরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আগামীকাল থেকে মেয়ের টেস্ট পরীক্ষা। তার আগের দিন এ ধরনের কাণ্ড করবে বুঝতেই পারিনি।' তিনি বলেন, 'এখন থেকে আমি নিজেই মেয়েকে স্কুলে আনা-নেওয়া করব।' মামুনের বাবা মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা বলেন, 'অনেক কষ্ট করে ছেলেকে বড় করেছি। কিন্তু আমার মুখে চুন-কালি দেবে বুঝতে পারিনি। এখন তাকে নিয়ে কী করব বুঝতে পারছি না।'
এ সময় আটক হওয়া কাজি মাওলানা মোহাম্মদ সিকান্দার বলেন, 'আমি বিয়ে পড়াইনি। এরপরও আমাকে থানায় আনা হয়েছে।' অপ্রাপ্ত বয়স্কদের বিয়ে আগে না পড়ালে ভুয়া জন্মনিবন্ধন সনদ নিয়ে আপনার কাছে কেন বিয়ে করতে এল_এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আবারও বলেন, 'আমি বিয়ে পড়াইনি।' ওসি বলেন, 'বাল্য বিয়ের ক্ষতিকারক বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে পুলিশ বাল্য বিয়ে রোধে উদ্যোগী হয়েছে।' বর-কনে ও কাজিকে থানায় আটক রাখা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.