শুভেচ্ছা বিনিময় বর্জন আইনজীবী সমিতির

রকার সমর্থক ও বিরোধী দল সমর্থক আইনজীবীদের পরস্পরের বিরুদ্ধে অবস্থানের মধ্য দিয়ে বার্ষিক ছুটি শেষে সুপ্রিম কোর্ট খোলার প্রথম দিন অতিবাহিত হয়েছে। গতকাল রবিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন সরকার সমর্থক আইনজীবীরা। অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সিদ্ধান্তে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সমর্থক আইনজীবীরা শুভেচ্ছা বিনিময় কর্মসূচি বর্জন করে সমিতি ভবনে বিক্ষোভ করেছেন। উভয় পক্ষই নিজেদের কর্মসূচিকে সফল বলে দাবি করেছে।

আগে থেকেই শুভেচ্ছা বিনিময় কর্মসূচি বর্জনের ঘোষণা দেওয়ায় সুপ্রিম কোর্টে বাড়তি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়। তবে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
আইনজীবীদের একাংশের কুশল বিনিময় বর্জন কর্মসূচিকে রাজনৈতিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
এদিকে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর বিচারিক ক্ষমতা প্রত্যাহার করে তাঁর বিরুদ্ধে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের উদ্যোগ নিতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রধান বিচারপতির কাছে দাবি জানিয়েছে। দক্ষ ও জ্যেষ্ঠ বিচারপতিদের নিয়ে বেঞ্চ গঠনের দাবি জানিয়ে সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, অন্যথায় হাইকোর্ট অচল করে দেওয়া হবে।
প্রতিবছর বার্ষিক ছুটির পর সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের (আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ) বিচারপতিদের সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নেতাদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের রেওয়াজ রয়েছে। কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রম ঘটল।
শুভেচ্ছা বিনিময় : সরকার সমর্থক আইনজীবীরা সারিবদ্ধভাবে সকাল পৌনে ১১টা থেকে জাজেস লাউঞ্জে বিচারপতিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় শুরু করেন। এতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, আবদুল বাসেত মজুমদার, ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান, মুরাদ রেজা, সমিতির সাবেক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম, এ এম আমিনউদ্দিন প্রমুখ সরকার সমর্থক আইনজীবী অংশ নেন। এ ছাড়া দলনিরপেক্ষ আইনজীবী হিসেবে পরিচিত ড. এম জহিরও কুশল বিনিময় করেন।
অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য : পরে এক ব্রিফিংয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, 'চিরাচরিত নিয়ম অনুযায়ী আমরা বিচারপতিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছি। সমিতির গুটিকয়েক সদস্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সৌজন্য সাক্ষাৎ বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। গুটিকয়েক আইনজীবী ছাড়া আর কেউ তাদের আহ্বানে সাড়া দেয়নি।' অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার বেশিসংখ্যক আইনজীবী সৌজন্য সাক্ষাতে গেছেন বলে জানান তিনি।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, 'এম ইউ আহমেদের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। তিনি আগে থেকেই অনেক রোগে ভুগছিলেন। তাঁর ওপর নির্যাতন হলে কি তিনি এত দিন বেঁচে থাকতে পারেন?'
এক বিচারপতির টক শোতে অংশগ্রহণের বিষয়ে জানতে চাইলে মাহবুবে আলম বলেন, 'টক শোতে অংশ নিলেই একজন বিচারপতির দোষ হয়ে যাবে, বিষয়টা এমন না। এটা নির্ভর করে সেটা কোন ধরনের টক শো এবং টক শো তে তিনি কী ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন।'
দক্ষ বিচারপতিদের নিয়ে বেঞ্চ গঠন বিষয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, 'কোনো বিচারপতি অদক্ষ হলে সেটা প্রধান বিচারপতিকে বলতে পারে। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে যেতে পারে। সেটা জনসমক্ষে বলার বিষয় না। কোনো বিচারপতিকে অদক্ষ বলা আদালত অবমাননার শামিল। বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা হয়।'
বর্জন-বিক্ষোভ : বিএনপিপন্থী আইনজীবী এম ইউ আহমেদ ইস্যুতে বিচারপতিদের সঙ্গে প্রথম দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় বর্জন করেছে বিরোধী দল সমর্থকদের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি। আইনজীবীরা সমিতি ভবনে বিক্ষোভ করেছে। কালো পতাকা টাঙিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে। গতকাল সকাল ১০টা থেকে সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন ও সম্পাদক ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদলের নেতৃত্বে আইনজীবীরা সমিতির সভাপতির কক্ষের সামনে অবস্থান নেন। তাঁরা সমিতি ভবন থেকে সুপ্রিম কোর্ট ভবনে যাওয়ার পথে (গ্যাংওয়ে) বিক্ষোভ করতে থাকেন। তাঁরা এ সময় বিভিন্ন স্লোগান দেন। ওই গ্যাংওয়ে দিয়ে আইনজীবীরা যাতে কোর্ট ভবনে যেতে না পারেন, সে জন্য একপর্যায়ে সমিতি ভবনসংলগ্ন গেট আটকে দেন তাঁরা। ১৫ মিনিট গেট আটকে রাখার পর খুলে দেওয়া হয়। এরপর তাঁরা সমিতি ভবনের দক্ষিণ হলে যান। সেখানে সমিতি জরুরি সাধারণ সভা করে।
সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, জয়নুল আবেদীন, নিতাই রায় চৌধুরী, মীর মো. নাছির উদ্দিন, ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল প্রমুখ বক্তৃতা করেন। সভায় এম ইউ আহমেদের স্ত্রী সেলিনা হোসেন ও দুই সন্তান উপস্থিত ছিলেন।
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, 'জ্যেষ্ঠ ও দক্ষ বিচারপতিদের দিয়ে বেঞ্চ পুনর্গঠন করা না হলে হাইকোর্ট অচল করে দেওয়া হবে। অতীতে হাইকোর্টে ভাঙচুর করা হয়েছে। আমরা ভাঙচুর করতে চাই না। আমরা ভদ্র। তবে এই ভদ্রতাকে দুর্বলতা ভাববেন না। আমাদের ধৈর্য ও শালীনতার সীমা আছে। আমাদের বাধ্য করবেন না। বিচারপ্রার্থীরা বিচার না পেলে সেই হাইকোর্ট রেখে লাভ কী?'
সভায় নেওয়া সিদ্ধান্তে বলা হয়, 'গণমাধ্যমে রাজনৈতিক বক্তব্য প্রদান' ও এম ইউ আহমেদের মৃত্যুকে 'স্বাভাবিক' মৃত্যু বলায় হাইকোর্টের বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর বিচারিক ক্ষমতা প্রত্যাহার করে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.